মস্কো ও ওয়াশিংটনের সম্পর্ক পুনরায় শুরু হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন রাশিয়ার সার্বভৌম সম্পদ তহবিলের প্রভাবশালী প্রধান কিরিল দিমিত্রিয়েভ। বুধবার (৬ নভেম্বর) তিনি বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিজয়ের পর রাশিয়া-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কের নতুন সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স এ খবর জানিয়েছে।
২০২২ সালে রাশিয়া ইউক্রেনে আক্রমণ করলে দেশের মধ্যে সবচেয়ে বড় বিরোধের সূত্রপাত হয়। যা ১৯৬২ সালের কিউবান মিসাইল সংকটের পর সবচেয়ে বড় উত্তেজনা সৃষ্টি করে। ওই সময় সোভিয়েত ইউনিয়ন ও যুক্তরাষ্ট্র পারমাণবিক যুদ্ধের কাছাকাছি চলে গিয়েছিল। দুই দেশের কূটনীতিকরা স্বীকার করেছেন, বর্তমানে তাদের সম্পর্ক সবচেয়ে খারাপ অবস্থায় রয়েছে, এমনকি শীতল যুদ্ধের চূড়ান্ত সময়ের থেকেও বেশি তলানিতে।
দিমিত্রিয়েভ রাশিয়ার অভিজাত রাজনৈতিক শ্রেণির এক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি এবং রাশিয়ার সার্বভৌম সম্পদ তহবিলের প্রধান। তিনি বলেন, ট্রাম্পের টিম এই নির্বাচন ও সিনেট জয় করেছে। যদিও তাদের বিরুদ্ধে ব্যাপক ধরনের মিথ্যা প্রচারণা পরিচালিত হয়েছে।
তিনি আরও বলেছেন, এটি প্রমাণ করে যে সাধারণ আমেরিকানরা বাইডেন প্রশাসনের অস্বাভাবিক মিথ্যা, অযোগ্যতা ও শত্রুতায় ক্লান্ত হয়ে পড়েছেন।
তিনি দাবি করেছেন, এই জয় নতুন সুযোগ সৃষ্টি করেছে রাশিয়া-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক পুনরায় শুরু করার জন্য।
দিমিত্রিয়েভ অতীতে গোল্ডম্যান স্যাক্সে কাজ করেছেন। এর আগে তিনি ট্রাম্প-দলের সঙ্গে সম্পর্ক রেখেছিলেন এবং রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের পরামর্শক হিসেবেও কাজ করেছেন।
রিপাবলিকান দলের প্রার্থী ট্রাম্প ২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়ী হওয়ার দাবি করেছেন। ফক্স নিউজ তার বিজয় ঘোষণার পর তার এই জয়কে একটি চমকপ্রদ রাজনৈতিক প্রত্যাবর্তন হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। হোয়াইট হাউজ ছাড়ার চার বছর পর আবারও প্রেসিডেন্ট হিসেবে সেখানে ফিরছেন তিনি।
ইউক্রেন যুদ্ধে রাশিয়ার অবস্থান
ট্রাম্প জয়ী হলে তিনি ইউক্রেন যুদ্ধ দ্রুত বন্ধ করবেন বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। যদিও তিনি কীভাবে তা করবেন তা স্পষ্ট করেননি। পুতিনও বারবার বলেছেন, তিনি যুদ্ধের অবসান নিয়ে আলোচনা করতে প্রস্তুত। তবে রাশিয়ার দখলকৃত ভূখণ্ডের স্বীকৃতি দিতে হবে, যা ইউক্রেনের নেতৃত্বের জন্য পরাজয়ের সমান। ইউক্রেনের নেতারা স্পষ্টভাবে জানিয়েছেন, এটি তাদের পক্ষ থেকে আত্মসমর্পণ হবে।
রাশিয়ার বাহিনী ইউক্রেনে গত এক বছরে দ্রুত অগ্রসর হচ্ছে। বর্তমানে দেশটির প্রায় এক-পঞ্চমাংশের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে মস্কো।
ট্রাম্পের জয় ও ইউক্রেন
ট্রাম্পের নির্বাচনি প্রচারণার আগেই রাশিয়ার কর্মকর্তারা জানিয়ে দিয়েছিলেন, যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনে হোয়াইট হাউজে আসা নতুন নেতৃত্ব কোনও পার্থক্য সৃষ্টি করবে না। তবে ক্রেমলিন পরিচালিত সংবাদমাধ্যমে ট্রাম্পের প্রতি একটি পক্ষপাতিত্ব লক্ষ করা গেছে। রাশিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট দিমিত্রি মেদভেদেভ বুধবার মন্তব্য করেছেন, ট্রাম্পের বিজয় ইউক্রেনের জন্য খারাপ খবর হতে পারে। তবে এটি স্পষ্ট নয় যে ট্রাম্প কতটা ইউক্রেন যুদ্ধের জন্য মার্কিন অর্থায়ন কমাতে সক্ষম হবেন।
মেদভেদেভ বলেন, ট্রাম্পের মধ্যে একটি গুণ রয়েছে: তিনি একজন ব্যবসায়ী এবং তার কাছে ব্যয় করা অর্থের কোনও মূল্য নেই, বিশেষ করে মূর্খ, অহংকারী মিত্রদের জন্য।
মেদভেদেভ আরও বলেন, তিনি এমন লোকদের ওপর অর্থ ব্যয় করতে চান না, যাদের তিনি অকারণ মনে করেন।
মেদভেদেভ ইঙ্গিত দিয়েছেন যে ইউক্রেনের সরকারও হয়তো এখন নিজেদের সান্ত্বনা খুঁজে পাবে যদি ট্রাম্পের বিজয় নিশ্চিত হয়। ট্রাম্পের অভ্যন্তরীণ নীতির প্রতি অটল মনোভাব রয়েছে। তবে প্রশ্ন হলো, ট্রাম্প কতটা যুদ্ধের জন্য অর্থ সরবরাহ করবেন? তিনি দৃঢ়, তবে পুরো ব্যবস্থা তারচেয়ে বড়।