যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডায় সক্রিয় ভারতীয় গুপ্তচর নেটওয়ার্ক: শিখ বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতা

ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সরকার বিদেশে ভিন্নমতালম্বীদের চুপ করানোর চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ করেছেন বিতর্কিত শিখ বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতা গুরপতওয়ান্ত সিং পান্নুন। কানাডা ও যুক্তরাষ্ট্রকে এ বিষয়ে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। ওই নেতার বিরুদ্ধে ভারত পরিচালিত একটি হত্যার ষড়যন্ত্রের অভিযোগ উঠেছিল। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স এ খবর জানিয়েছে।

মার্কিন বিচার বিভাগ সম্প্রতি নিউ ইয়র্কে মার্কিন-কানাডিয়ান দ্বৈত নাগরিক পান্নুনকে হত্যার ষড়যন্ত্রের অভিযোগে দুই ভারতীয় নাগরিকের বিরুদ্ধে অভিযোগ উত্থাপন করেছে। অভিযুক্তদের মধ্যে একজন সাবেক সরকারি কর্মকর্তা ছিলেন। অভিযোগপত্র অনুসারে, তিনি হত্যার পরিকল্পনা পরিচালনা করেছিলেন এবং তখন একজন গোয়েন্দা কর্মকর্তা হিসেবে কাজ করছিলেন।

পান্নুন এ মাসের শুরুর দিকে রয়টার্সকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে জানান, মোদি সরকারকে বিদেশে শত্রুতামূলক কর্মকাণ্ড চালানোর অনুমতি দেওয়া উচিত নয়। তিনি অভিযোগ করেন, যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডায় অবস্থিত ভারতের কনস্যুলেটগুলো গুপ্তচর নেটওয়ার্ক পরিচালনা করছে। যদিও তিনি এ বিষয়ে কোনও প্রমাণ দিতে পারেননি।

তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার উচিত কঠোরভাবে জানিয়ে দেওয়া যে মোদির মতো কাউকে দেশগুলোর সার্বভৌমত্বকে চ্যালেঞ্জ করার অনুমতি দেওয়া হবে না। তারা তাদের পদক্ষেপ কঠোর করবে এবং (কনস্যুলেটগুলো) স্থায়ীভাবে বন্ধ করবে।

পান্নুন তার অভিযোগের বিস্তারিত ব্যাখ্যা দেননি। তবে এরকম অভিযোগ যুক্তরাষ্ট্র এবং কানাডার শিখ কর্মীদের মধ্যেও শোনা গেছে।

ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় পান্নুনের অভিযোগ সম্পর্কে রয়টার্সের বিস্তারিত প্রশ্নের কোনও উত্তর দেয়নি। পান্নুন ভারতে জন্মগ্রহণ করেন। ২০২০ সাল থেকে সন্ত্রাসবাদী হিসেবে ভারতে চিহ্নিত রয়েছেন।

যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার কর্তৃপক্ষ পান্নুনের অভিযোগের বিষয়ে মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। গত বছর এই দেশগুলো অভিযোগ করেছিল, ভারতীয় এজেন্টরা তাদের দেশে খালিস্তানপন্থিদের বিরুদ্ধে হত্যা ষড়যন্ত্রে জড়িত ছিল। খালিস্তান আন্দোলনের লক্ষ্য ভারতের পাঞ্জাব রাজ্য থেকে একটি শিখ মাতৃভূমি প্রতিষ্ঠা করা। ১৯৮০ ও ১৯৯০-এর দশকে শিখ বিদ্রোহে হাজার হাজার মানুষ নিহত হয়েছিল।

ভারত এই ষড়যন্ত্রে জড়িত থাকার অভিযোগ অস্বীকার করেছে। এই অভিযোগগুলো কানাডার সঙ্গে ভারতের সম্পর্ককে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে এবং ওয়াশিংটন ও নয়াদিল্লির মধ্যে সম্পর্কের পরীক্ষায় ফেলেছে।

কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো ২০২৩ সালে কানাডার আরেক শিখ বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতা হারদীপ সিং নিজ্জারের হত্যাকাণ্ডে ভারতের সরকারের সম্পৃক্ততার অভিযোগ তুলেছিলেন। ওই বছরের মে মাসে কানাডার পুলিশ চার ভারতীয় ব্যক্তিকে হত্যার অভিযোগে গ্রেফতার করে। তবে তাদের বিচার এখনও হয়নি।

ভারত বলেছে, কানাডা কোনও প্রমাণ সরবরাহ করেনি। এদিকে, গত মাসে কূটনৈতিক উত্তেজনা বেড়ে যাওয়ায় নয়াদিল্লি ও অটোয়া ছয়জন করে কূটনীতিককে বহিষ্কার করেছে। তবে পান্নুনের বিরুদ্ধে হত্যা ষড়যন্ত্রের অভিযোগের বিষয়ে ভারত তদন্ত চালাচ্ছে বলে জানিয়েছে। মার্কিন কর্মকর্তারা এ বিষয়ে দ্রুত ফলাফল আশা করছেন।

পান্নুন বলেন, মার্কিন অভিযোগে অভিযুক্ত ভারতীয় কর্মকর্তা বিকাশ যাদব শুধু মাঝারি স্তরের একজন সেনা ছিলেন। তিনি উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের নির্দেশে হত্যার কাজটি সংগঠিত করেছিলেন। তবে এ বিষয়ে কোনও প্রমাণ দেননি বা কীভাবে তিনি এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন তা জানাননি।

নয়াদিল্লি জানিয়েছে, যাদব এখন আর সরকারি কর্মকর্তা নন। তবে তিনি একজন গোয়েন্দা কর্মকর্তা ছিলেন কিনা এবং কবে চাকরি ছেড়েছেন তা প্রকাশ করা হয়নি। যাদবের অবস্থান এখনও অজানা। তবে তার পরিবার রয়টার্সকে জানিয়েছে, তিনি তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন এবং মার্কিন অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

ভারতীয় নিরাপত্তা কর্মকর্তারা আশঙ্কা করছেন, খালিস্তানপন্থি আন্দোলনের প্রতি বিদেশে সমর্থন বাড়লে পাঞ্জাব রাজ্যে বিদ্রোহের পুনরুত্থান হতে পারে। পাঞ্জাব শিখ জাতীয়তাবাদের জন্মস্থান। একটি পৃথক মাতৃভূমির আন্দোলনের পক্ষে সেখানে জন সমর্থন খুব বেশি নেই।

যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও ইউরোপে খালিস্তান গঠনের পক্ষে স্বাধীন গণভোট পরিচালনা করা পান্নুন জানান, তার আন্দোলন শান্তিপূর্ণ উপায়ে সমস্যার সমাধান চায় এবং তার জীবনের হুমকি থাকা সত্ত্বেও তা অব্যাহত থাকবে।