ভূমিকম্পের কয়েক মিনিট আগে জন্ম নেওয়া শিশুটি এখন তাঁবুতে

খাদিজা তার সদ্যভূমিষ্ঠ কন্যা সন্তানের নাম এখনও ঠিক করতে পারেননি। ভূমিকম্পের ঠিক কয়েক মিনিট আগেই পৃথিবীর আলোর মুখে দেখে শিশুটি। এমন সময় পৃথিবীতে এলো যখন তার চারপাশে সবকিছু শেষ হয়ে যাচ্ছে। সৃষ্টিকর্তার ইশারায় অলৌকিকভাবে হয়তো এ যাত্রায় বেঁচে গেছে।

মরক্কোয় শুক্রবার রাতের ভূমিকম্পের পর নবজাতকের প্রথম ঘরটি হলো খোলা আকাশের নিচে একটি ছোট তাবু। মা ও মেয়ে অক্ষত থাকলেও মারাকেশের যে হাসপাতালটিতে তারা ছিলেন তা দ্রুত খালি করা হয়। স্বাস্থ্য পরীক্ষার পর জন্মের মাত্র তিন ঘণ্টা পর হাসপাতাল ছাড়তে বলা হয়। খাদিজা বলেন, হাসপাতাল থেকে আমাদের বলা হয় আবারও কম্পন হতে পারে।

এরপর নবজাতককে সঙ্গে নিয়ে খাদিজা ও তার স্বামী শনিবার ভোরে একটি ট্যাক্সি নিয়ে মারাকেশ থেকে প্রায় ৬৫ কিলোমিটার দূরের আটলাস পর্বতমালায় বাড়ির পথে রওনা দেন। যাওয়ার পথে ভূমিধসের কারণে রাস্তা বন্ধ দেখতে পান। এরপর মূল সড়কের পাশে একটি তাঁবুতে অবস্থান করছে পরিবারটি।

তাঁবুতে খাদিজা ও তার নবজাতক কন্যা সন্তান, ছবি: বিবিসি

খাদিজার মতো আরও অনেক পরিবারের ঠাঁই হয়েছে খোলা আকাশের নিচে। ৬ দশমিক ৮ মাত্রার শক্তিশালী ভূমিকম্পে তছনছ করে দিয়ে গেছে বহু বাড়ি-ঘর। রবিবার একই অঞ্চলে ৪ দশমিক ৫ মাত্রার একটি আফটারশকে কেঁপে ওঠে।

মার্কিন ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা জানিয়েছে, শুক্রবার রাতে আঘাত হানা ৬ দশমিক ৮ মাত্রার ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল ছিল মারাক্কেশ শহর থেকে ৭১ কিলোমিটার দূরে এটলাস পর্বতমালা এলাকায়। গভীরতা ছিল ১৮ দশমিক ৫ কিলোমিটার। রাত ১১টা ১১ মিনিটে জোরালো কম্পন অনুভূত হয়।

মরক্কোর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সবশেষ ব্রিফিং-এ জানিয়েছে, ভূমিকম্পে এখন পর্যন্ত ২ হাজার ১০০ জনের বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন। আহতের সংখ্যা ২ হাজার ছাড়িয়েছে। রোগীর চাপ অধিক হওয়ায় হাসপাতালগুলোয় হিমশিম খাচ্ছেন চিকিৎসকরা।

ধ্বংসস্তূপের নিচে এখনও জীবিত মানুষের সন্ধান পাওয়া যাচ্ছে। বের করতে সর্বোচ্চ চেষ্টা চালাচ্ছে উদ্ধারকারীরা। তবে সময় বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে লাশ হয়ে বের হতে হচ্ছে।

কাতারের জরুরি বিভাগ মরক্কোর উদ্দেশে রওনা হয়েছে। ছবি: রয়টার্স

উদ্ধার প্রচেষ্টায় প্রথম বিদেশি উদ্ধারকারীর একটি দল মরক্কোয় পৌঁছেছে। স্পেন, যুক্তরাজ্য, কাতার, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ফ্রান্স এবং যুক্তরাষ্ট্রের দল এই কাজে যোগ দিতে প্রস্তুত রয়েছে। স্পেন দুটি দলে ৮৬ জন বিশেষজ্ঞ উদ্ধারকারী পাঠিয়েছে। যার প্রত্যেকটিতে চারটি স্নিফার কুকুর রয়েছে। সূত্র: বিবিসি, আল জাজিরা