কবিতার মাধ্যমে ভারত-পাকিস্তান বিবাদে মধ্যস্থতাকারী হওয়ার প্রস্তাব

ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে চলমান উত্তেজনা প্রশমনে মধ্যস্থতাকারী হিসেবে এগিয়ে আসার আগ্রহ প্রকাশ করেছে ইরান। ত্রয়োদশ শতাব্দীর এক ফারসি কবিতার মাধ্যমে আহ্বান জানিয়ে তারা বলেছে, আঞ্চলিক বিবাদ মেটানোর দায়িত্ব নিতে তারা প্রস্তুত। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি এ খবর জানিয়েছে।

ভারত ও পাকিস্তান উভয়কেই ইরানের ভ্রাতৃপ্রতিম প্রতিবেশী সম্বোধন করে দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাকি বলেছেন, দেশ দুটোর সম্পর্কের মূলে রয়েছে হাজার বছরের সভ্যতা ও সংস্কৃতিগত ইতিহাস। ভারত ও পাকিস্তানকে আমাদের অন্যান্য প্রতিবেশীর মতোই সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে থাকি। তাই চলমান সংকট নিরসনে তৃতীয় পক্ষ হিসেবে মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা নিতে আমরা প্রস্তুত।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশিত ওই বিবৃতির সঙ্গে কালজয়ী ইরানি কবি সাদি শিরাজির কবিতা ‘বনি আদম’-এর কয়েকটি পঙ্‌ক্তি জুড়ে দেন আরাকি।

মানবজাতি এক বিশাল পরিবার,
সৃষ্টি সবাই একই পরমাত্মার, 
পরিবারের একে যদি পায় আঘাত,
কষ্টে বাকিদের প্রাণ কাঁদে সমজাত।

ইরানের পাশাপাশি সৌদি আরবও দুদেশের উত্তেজনা প্রশমনে উদ্যোগ নিয়েছে। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, যুবরাজ ফয়সাল বিন ফরহাদ পৃথকভাবে ভারতীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর এবং পাকিস্তানি পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দারের সঙ্গে ফোনালাপ করেছেন।

মঙ্গলবার জম্মু-কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ে এক ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলায় ২৬ জন পর্যটক নিহত হন। এরপর থেকেই দুদেশের সম্পর্কে টানাপড়েন আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। ভারত সরাসরি পাকিস্তানের উপর হামলাটি সংঘটনের অভিযোগ এনেছে, যদিও ইসলামাবাদ তা প্রত্যাখ্যান করেছে। ইতিমধ্যে নিয়ন্ত্রণ রেখায় (এলওসি) দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর মধ্যে গুলি বিনিময়ের ঘটনাও ঘটেছে।

উল্লেখ্য, হামলার পর দায় স্বীকার করে বিবৃতি দিয়েছে দ্য রেজিস্ট্যান্স ফোর্স (টিআরএফ) নামের একটি গোষ্ঠী। ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থার দাবি, এই টিআরএফ মূলত পাকিস্তানভিত্তিক নিষিদ্ধ সংগঠন লস্কর-ই-তাইয়্যেবার একটি গোপন শাখা।

কাশ্মীরের অধিকার নিয়ে বহুবছর ধরেই ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে বিবাদ রয়েছে। ভূস্বর্গ হিসেবে পরিচিত কাশ্মীরের জন্য এ পর্যন্ত দুটি যুদ্ধে জড়িয়েছে প্রতিবেশী দেশ দুটো।

হামলার পর দুদেশের মধ্যে সম্পর্কের আরও অবনতি হয়েছে। দিল্লি ও ইসলামাবাদ উভয়ই পরস্পর একাধিক ব্যবস্থা নিয়েছে। প্রায় ছ দশকের পুরোনো পানি বণ্টন চুক্তি স্থগিত করেছে ভারত সরকার। জবাবে নিজেদের আকাশসীমায় ভারতীয় উড়োজাহাজের প্রবেশ নিষেধ করেছে পাকিস্তান। এছাড়া, পাল্টাপাল্টি কূটনৈতিক বহিষ্কার ও মিশনের আকার ছোট করার পদক্ষেপ তো রয়েছেই। সবমিলিয়ে, নিরাপত্তার পাশাপাশি দুদেশের বাণিজ্যেও মারাত্মক ঝুঁকির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

কাশ্মীরের হামলাকারীদের খুঁজে বের করতে সাঁড়াশি অভিযান শুরু করেছে ভারত সরকার। চলমান অস্থিরতার কারণে দেশটির শেয়ার বাজারে শুক্রবার ব্যাপক দরপতন দেখা যায়। কিছুসময় পর অবশ্য বাজারের পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হতে শুরু করে।