কাশ্মীরে হামলাকারী টিআরএফ সম্পর্কে যা জানা গেলো

পাকিস্তানভিত্তিক নিষিদ্ধ সংগঠন লস্কর-ই-তাইয়্যেবার ছায়াগোষ্ঠী দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট (টিআরএফ) কাশ্মীরে হামলায় জড়িত বলে দাবি করছেন ভারতীয় গোয়েন্দারা।

গোয়েন্দারা জানিয়েছেন, ২০১৯ সালের আগস্টে ৩৭০ ধারা এবং জম্মু ও কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা বাতিলের পর একই বছর অক্টোবরে টিআরএফ নামে এই ফ্রন্ট তৈরি করা হয়। সন্ত্রাসবাদী চরিত্র আড়াল করতে টিআরএফ ব্যানারে ধর্মীয় শব্দ, বাক্য বা লোগো ব্যবহার করে না।

ভারতীয় গোয়েন্দাদের দাবি, জম্মু ও কাশ্মীরে বেসামরিক নাগরিক, নিরাপত্তা বাহিনী এবং রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদের লক্ষ্য করে অসংখ্য হামলার জন্য দায়ী এই টিআরএফ। ওই অঞ্চলে অস্থিরতা বজায় রাখতে পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআইয়ের মদতে চলে গোষ্ঠীটি।

তৎকালীন ভারতীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিজ্ঞপ্তি জারি করে বলেছিল, জম্মু ও কাশ্মীরের মানুষকে তাদের দলে যোগদানের জন্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অপপ্রচার চালাচ্ছে। তারা জঙ্গি কার্যকলাপের জন্য অনলাইন মাধ্যমে যুবকদের নিয়োগ করছে, সন্ত্রাসীদের অনুপ্রবেশ এবং পাকিস্তান থেকে জম্মু ও কাশ্মীরে অস্ত্র ও মাদক পাচারের কাজ চালাচ্ছে।

হিজবুল মুজাহিদিন এবং জইশ-ই-মোহাম্মদ গোষ্ঠী তাদের ঘাঁটি পরিবর্তন করাকে কেন্দ্র করে টিআরএফ জঙ্গিগোষ্ঠী হিসেবে প্রথম পুলিশের নজরে আসে। অভিযান চালিয়ে দলটির একাধিক সদস্য, অস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধার করে পুলিশ। গ্রেফতারকৃতরা স্বীকার করেন, নতুন সংগঠনের জন্য তারা যুবকদের নিয়োগ করছিল।

২০২৩ সালের মার্চ মাসে ভারতের রাজ্যসভায় তৎকালীন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী নিত্যানন্দ রাই জানান, সন্ত্রাসবিরোধী আইনের অধীনে (ইউএপিএ) টিআরএফসহ চারটি গোষ্ঠীকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।

টিআরএফ সম্পর্কে তিনি বলেন, ২০১৯ সালে প্রতিষ্ঠিত লস্কর-ই-তাইয়্যেবার ছায়া সংগঠনটি একাধিক অপরাধের সঙ্গে জড়িত। এর মধ্যে রয়েছে, নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য এবং বেসামরিক নাগরিকদের হত্যার পরিকল্পনা, নিষিদ্ধ সংগঠনগুলোকে সমর্থন করার জন্য অস্ত্র সংগ্রহ ও পরিবহন, সদস্য নিয়োগ, অনুপ্রবেশ এবং সীমান্তের ওপার থেকে অস্ত্র ও মাদকপাচার ইত্যাদি।

২০২১ সালের জুনে জম্মুতে ভারতীয় বিমানবাহিনীর (আইএএফ) স্টেশনে জোড়া ড্রোন হামলা এবং সীমান্তের ওপার থেকে পাঠানো মনুষ্যবিহীন বিমানবাহী যান ব্যবহার করে বিস্ফোরক ফেলার মতো ঘটনার পেছনেও টিআরএফের হাত রয়েছে বলে দাবি করে ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা।

এছাড়া, জম্মু ও কাশ্মীর থেকে ভারতীয় কর্মকর্তা ও কাশ্মীরি পণ্ডিতদের চলে যাওয়ার জন্য প্রায়শই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে হুমকি দেয় তারা। এমনকি, জম্মু ও কাশ্মীর বিধানসভা নির্বাচনের সময় সাবেক কংগ্রেস নেতা গোলাম নবী আজাদকেও হুমকি দিয়েছিল টিআরএফ।

মঙ্গলবার হামলার পর দায় স্বীকার করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক বিবৃতি দিয়েছে টিআরএফ। তাদের দাবি, ৮৫ হাজারের বেশি বহিরাগতকে বাসস্থান ইস্যু করা হয়েছে। এই মানুষগুলো পর্যটক হিসেবে বাইরে থেকে এসে এখানে থেকে যায় এবং জমির মালিকের মতো আচরণ শুরু করে। তারা এখানকার সাধারণ জনমিতিক বৈশিষ্ট্য নষ্ট করে ফেলেছে। ফলে, তাদের সঙ্গে সংঘাত অনিবার্য ছিল।

গোয়েন্দাদের ধারণা, বহিরাগতদের কারণে স্থানীয়রা উচ্ছেদের শিকার হচ্ছেন- টিআরএফ এ ধরনের একটি বয়ান জনসাধারণের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে চাচ্ছে। তারা সম্ভবত এভাবে মানুষের সহানুভূতি পাওয়ার চেষ্টা করবে।

গোয়েন্দাদের ধারণা, ওই অঞ্চলে এখন থেকে নতুন পদ্ধতিতে কার্যক্রম পরিচালনা করবে সন্ত্রাসীরা। তারা এখন থেকে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে সরাসরি গুলিবিনিময়ে জড়াবে না। এর পরিবর্তে বেসামরিক হিন্দু এবং পর্যটকদের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করে ভয়ের পরিবেশ সৃষ্টি করছে।