যুক্তরাজ্যে বিরল চিকিৎসা কীর্তি, ২বার ভূমিষ্ঠ হলো একই শিশু

যুক্তরাজ্যে এক বিরল ঘটনায় এক শিশু দুবার জন্মগ্রহণ করেছে। অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় শিশুটির মা ডিম্বাশয়ের ক্যান্সার আক্রান্ত হওয়ায় জরায়ুসহ বাচ্চাটিকে প্রথমে সরিয়ে নেন চিকিৎসকরা। পরে ওই নারীর ক্যান্সার অপসারণ করে জরায়ু আবার মাতৃদেহে স্থাপন করা হয়। কয়েকসপ্তাহ পরে বাচ্চাটি স্বাভাবিক সময়ে পৃথিবীতে আসে। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য ডেইলি মেইল এ খবর জানিয়েছে।

জানুয়ারিতে জন্ম নেওয়া শিশুটির নাম রাখা হয়েছে র‍্যাফার্টি আইজ্যাক। কিছুদিন আগে বাচ্চাকে নিয়ে তার মা লুসি জন র‍্যাডক্লিফ হাসপাতালে গিয়েছিলেন শল্যচিকিৎসক সোলেইমানি মাজদকে ধন্যবাদ জানাতে। তাদের দেখে আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন ড. মাজদ।

৩২ বছর বয়সী লুসি যখন তিন মাসের অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন, তখন একটি নিয়মিত আল্ট্রাসাউন্ডের সময় তার ডিম্বাশয়ের ক্যানসার ধরা পড়ে। চিকিৎসকরা জানান, সন্তান জন্মের পর চিকিৎসা শুরু করলে ক্যানসার ছড়িয়ে পড়তে পারে, যা লুসির জীবন ঝুঁকির মুখে ফেলবে।

গর্ভাবস্থার ইতোমধ্যে কয়েকমাস পার হয়ে যাওয়ার কারণে সাধারণ সার্জারি সম্ভব ছিল না। তাই ড. মাজদের নেতৃত্বে একদল চিকিৎসক জটিল পদ্ধতিটি ব্যবহারের প্রস্তাব দেন। বিশ্বব্যাপী মাত্র হাতে গোনা কয়েকবার সম্পন্ন হওয়া এই উচ্চ-ঝুঁকিপূর্ণ পদ্ধতিতে জরায়ু ও শিশুকে অস্থায়ীভাবে শরীরের বাইরে এনে চিকিৎসা করা হয়। ঝুঁকি সত্ত্বেও লুসি ও তার স্বামী অ্যাডাম চিকিৎসকদের ওপর আস্থা রাখেন। অক্টোবরে লুসিকে অস্ত্রোপচার করেন চিকিৎসকরা।

ড. মাজদ বলেছেন, লুসির ক্যান্সার অনেকটা গুরুতর ধাপে পৌঁছে গিয়েছিল। তাই পুরো প্রক্রিয়াটা যথেষ্ট জটিল হয়ে পড়ে। তবে, সবকিছু শেষপর্যন্ত ঠিকঠাকভাবে সম্পন্ন হয়েছে এবং শিশুটি জানুয়ারিতে ভূমিষ্ঠ হয়।

শিশু র‍্যাফেটির জন্মের সময় অনুভূতি স্মরণ করে অ্যাডাম বলেছেন, এত সংগ্রামের পর র‍্যাফেটিকে কোলে নেওয়া ছিল আমাদের জন্য অবিস্মরণীয় এক মুহূর্ত।

আল্ট্রাসাউন্ড পরীক্ষার আগে ক্যান্সারের কোনও লক্ষণ টের পাননি লুসি। এজন্য ঠিকভাবে চিকিৎসা করে বাচ্চার জন্ম দিতে পারার জন্য নিজেকে ভাগ্যবান মনে করেন তিনি।

উল্লেখ্য, যুক্তরাজ্যে প্রতি বছর প্রায় সাত হাজার নারী ডিম্বাশয়ের ক্যান্সারে আক্রান্ত হন। তাদের দুই-তৃতীয়াংশের ক্ষেত্রে রোগ ধরা পড়ে দেরিতে। বছরে চার হাজারের বেশি আক্রান্ত রোগীর মৃত্যু ঘটে।