বিশ্বায়নের পথে কোমর বেঁধে নেমেছে চীন

যুক্তরাষ্ট্র যখন বিশ্ব-বাণিজ্যে নেতৃস্থানীয় অবস্থান থেকে সরে গিয়ে শুল্কযুদ্ধের পথে হাঁটছে, তখন চীন দৃঢ় পদক্ষেপে বিশ্বায়ন ও মুক্ত বাণিজ্যের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। বিশ্বজুড়ে গুরুত্বপূর্ণ অর্থনীতির দেশের সঙ্গে বেইজিং তাদের অংশীদারিত্ব দৃঢ় করছে বলে জানিয়েছেন দেশটির অর্থনীতিবিদরা। চীনা সংবাদমাধ্যম সিএমজি এ খবর জানিয়েছে।

চায়না একাডেমি অব ম্যাক্রোইকোনমিক রিসার্চের গবেষক চাং ইয়ানশেং চায়না ডেইলিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, যুক্তরাষ্ট্র মনে করছে তারা বর্তমান বাণিজ্য ব্যবস্থায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। সেজন্য তারা শুল্কযুদ্ধ শুরু করেছে। এই যুদ্ধ ভবিষ্যতে মুদ্রা, আর্থিক এবং প্রযুক্তি যুদ্ধেও রূপ নিতে পারে।

তিনি আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্র এখন বিশ্ব বাণিজ্য ব্যবস্থাকে ভাঙার চেষ্টা করছে। ‘জঙ্গলের আইন’(ল অব দ্য জাঙ্গল) এবং বলপ্রয়োগ করে অন্য দেশের কাছ থেকে নিজেদের ঘাটতি পূরণ করতে চাচ্ছে তারা।

অথচ মার্কিন ডলারের আধিপত্যের জন্য এই ঘাটতি প্রয়োজন ছিল মন্তব্য করে চাং বলেছেন, এটি এমন একটি চক্র তৈরি করেছে, যেখানে ডলারের আধিপত্য বাণিজ্য ভারসাম্যহীনতার ওপর নির্ভরশীল।

তিনি বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র একসময় বহুপাক্ষিক অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ব্যবস্থার নেতৃত্ব দিত। সেখান থেকে সরে তারা এখন প্রতিরক্ষামূলক এবং আত্মকেন্দ্রিক নীতির দিকে চালিত হচ্ছে।

এই সুযোগের সদ্ব্যবহার করা এখন চীনের প্রধান কাজ বলে মনে করেন চাং। তিনি বলেন, আমাদের অভ্যন্তরীণ চাহিদা বৃদ্ধি এবং আরও বেশি উন্মুক্ত নীতিমালার ওপর জোর দিতে হবে। এতে করে চীন হবে এমন একটি বাজার, যেখান থেকে গোটা বিশ্ব নতুন চাহিদা, ক্রয়াদেশ এবং প্রবৃদ্ধির সুযোগ পাবে।

তিনি বলেন, মানুষের আয় বৃদ্ধি এবং আবাসন, প্রবীণদের সেবা ও চিকিৎসা খাতে চাপ কমাতে একটি শক্তিশালী সামাজিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে। এতে করে চীনের অভ্যন্তরীণ চাহিদা শক্তিশালী হবে। ফলে অন্যান্য দেশও চীনা বাজারের দিকে তাকিয়ে থাকবে।

এভাবে বিশ্বব্যাপী একটি ইতিবাচক চক্র সৃষ্টি হবে বলে বিশ্বাস করেন চাং। তিনি মনে করেন, চীনের সঙ্গে অন্য দেশগুলোর সম্পর্ক যত ঘনিষ্ঠ হবে, বিশ্বও তত সমৃদ্ধ হবে। অবকাঠামোগত সংযোগ যত মজবুত হবে, ততই সমন্বিত উন্নয়ন সম্ভব হবে।

তিনি আরও বলেন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর সংগঠন আসিয়ানের সঙ্গে সম্পর্ক আরও জোরদার করতে হবে চীনকে।

৮ এপ্রিল থেকে চীনের বাণিজ্যমন্ত্রী ওয়াং ওয়েনথাও ব্রাজিল, দক্ষিণ আফ্রিকা, সৌদি আরব, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং আসিয়ানের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে ভিডিও কলে বৈঠক করেন। এসব আলোচনায় ছিল অর্থনৈতিক সহযোগিতা বাড়ানো এবং যুক্তরাষ্ট্রের নতুন বাণিজ্যনীতির সঙ্গে  সমন্বয়।

চাং মনে করেন, আন্তর্জাতিক বাণিজ্য যেন শুধু ধনী ও ক্ষমতাবানদের জন্য সীমাবদ্ধ না থাকে। বরং বিশ্বনেতাদের লক্ষ্য হওয়া উচিত, ছোট-বড় সব দেশ যেন আন্তর্জাতিক বাণিজ্য থেকে লাভবান হয়।