ট্রাম্প প্রশাসনের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগ দায়ের করার হুঁশিয়ারি

মার্কিন বিচারকের আদেশ অমান্য করে একাধিক অভিবাসীকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বিতাড়িত করেছিল ট্রাম্প প্রশাসন। ফলে তাদের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগ দায়ের হতে পারে বলে বুধবার (১৬ এপ্রিল) সতর্ক করেছেন ওয়াশিংটন ডিসি জেলা বিচারক জেমস বোয়াসবার্গ। ব্রিটিশ বার্তাসংস্থা রয়টার্স এ খবর জানিয়েছে।

বোয়াসবার্গ এক লিখিত রায়ে জানিয়েছেন, বিদেশি শত্রু আইন, ১৭৯৮ ব্যবহার করে অভিবাসীদের বিতাড়ন স্থগিত রাখতে আদেশ দিয়েছিল আদালত। কিন্তু সরকারি কর্মকর্তারা ইচ্ছাকৃতভাবে তা অগ্রাহ্য করেছে, যা ফৌজদারি অপরাধের তালিকাভুক্ত।

ইচ্ছাকৃতভাবে আদালতের আদেশ অগ্রাহ্য করার প্রমাণস্বরূপ এক্স হ্যান্ডেলের একটু টুইট সংযুক্ত করেন তিনি। অভিবাসীদের বিতাড়নের পর এল সালভাদরের প্রেসিডেন্ট নায়িব বুকেলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটা পোস্ট দিয়েছিলেন, যেটাতে বোয়াসবার্গের স্থগিতাদেশটি সংযুক্ত ছিল। বুকেলে সেখানে কটাক্ষ করে লিখেছিলেন, আহ! দেরি হয়ে গেল! মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও নিজের প্রোফাইল থেকে ওই স্ট্যাটাস আবার শেয়ার করেন।

এই পোস্টের উল্লেখ করে বোয়াসবার্গ লিখেছেন, আদালতের রায় অগ্রাহ্য করে সেটা আবার উল্লাসের সঙ্গে প্রচার করেছেন তারা।

১৭৯৮ সালের বিদেশি শত্রু আইন ব্যবহার করে গত মাসে একাধিক ব্যক্তিকে এল সাল্ভাদরের কারাগারে পাঠিয়ে দিয়েছে ট্রাম্প প্রশাসন। তাদের বিরুদ্ধে অপরাধচক্রে জড়িত থাকার অভিযোগ আনা হয়েছিল। অথচ বিতাড়িতরা মার্কিন আইন অনুযায়ী আত্মপক্ষ সমর্থনের কোনও সুযোগই পায়নি। এদিকে, অনেক বিতাড়িত ব্যক্তির স্বজনদের দাবি, তারা কেউই অপরাধচক্রে জড়িত ছিলেন না।

চলতি বছর হোয়াইট হাউজে ট্রাম্পের প্রত্যাবর্তনের পর থেকেই সরকারি বিভিন্ন অঙ্গের সঙ্গে প্রশাসনের দ্বন্দ্ব কেবলই ঘনীভূত হচ্ছে। এই ঘটনায় সেই বিতর্ক নতুন ধাপে উন্নীত হলো। কেননা, বুধবারই প্রথমবারের মতো ট্রাম্প প্রশাসনের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক পদক্ষেপ নেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন কোনও বিচারক।

অবশ্য প্রশাসনের সম্মান বাঁচানোর পথও বাতলে দিয়েছেন বোয়াসবার্গ নিজেই। তিনি বলেছেন, তার আদেশ মান্য করলে এখনও অবমাননার অভিযোগ এড়াতে পারে প্রশাসন। এজন্য, বিতাড়িত অভিবাসীদের আত্মপক্ষ সমর্থনের জন্য আদালতে দাঁড়ানোর সুযোগ দিতে হবে।

প্রশাসনকে সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য ২৩ এপ্রিল পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়েছেন বোয়াসবার্গ। এই সময়ের মধ্যে হয় তার আদেশ বাস্তবায়নের জন্য একটা রূপরেখা পেশ করতে হবে নতুবা আদলত অবমাননায় জড়িত কর্মকর্তাদের চিহ্নিত করতে হবে।

স্বাভাবিকভাবে, বোয়াসবার্গের রায় ভালোভাবে নেয়নি ট্রাম্প প্রশাসন। হোয়াইট হাউজের যোগাযোগ পরিচালক স্টিভেন চেউং বলেছেন, এই রায়ের বিরুদ্ধে তারা উচ্চ আদালতে আপিল করবেন।

এদিকে, বিচার বিভাগের এক মুখপাত্র বলেছেন, অভিবাসী বিতাড়ন ইস্যুটিতে দাপট দেখানোর জন্য ন্যাক্কারজনক পদক্ষেপ নিয়েছেন বোয়াসবার্গ। বিচারবিভাগ সর্বশক্তি দিয়ে এর মোকাবিলা করবে।

উল্লেখ্য, ট্রাম্প প্রশাসনের বিভিন্ন নীতিকে চ্যালেঞ্জ করে এখন পর্যন্ত দেড় শতাধিক মামলা ঠোকা হয়েছে। ডেমোক্র্যাট ও অনেক আইন বিশেষজ্ঞের অভিযোগ, আদালতের রায় নিজেদের পক্ষে না গেলেই বিভিন্ন ছুতায় কালক্ষেপণ করছেন প্রশাসনিক কর্মকর্তারা। এভাবে বিচার বিভাগের স্বাধীনতার প্রতি তারা অবজ্ঞা প্রকাশ করছেন।