দক্ষিণ কোরিয়ার অপসারিত প্রেসিডেন্ট ইউন সুক ইওলের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় সোমবার (১৪ এপ্রিল) প্রথম শুনানি অনুষ্ঠিত হলো। তার বিরুদ্ধে সামরিক আইন জারি করে দেশে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি এবং বিদ্রোহের নেতৃত্ব প্রদানের সুনির্দিষ্ট অভিযোগ রয়েছে। ব্রিটিশ বার্তাসংস্থা রয়টার্স এ খবর জানিয়েছে।
শুনানির শুরুতে আইনজীবীরা অভিযোগ করেছেন, সামরিক আইন জারি করার কোনও আইনগত ভিত্তি প্রমাণে ব্যর্থ হয়েছেন ইউন। বরং তিনি পার্লামেন্টের মতো গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানকে অচল করে দেওয়ার চেষ্টা করেছেন।
তবে অভিযোগ অস্বীকার করে ইউন বলেছেন, রাষ্ট্র অচল করার কোনও উদ্দেশ্য তার ছিল না। বরং তিনি জনগণের কাছে এটা প্রমাণ করতে চেয়েছিলেন যে, বিরোধী দল একরকম সাংবিধানিক স্বৈরতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছে এবং সে ক্ষমতা ব্যবহার করে তারা সরকারের সব কাজে বাগড়া দিয়ে থাকে।
গত ডিসেম্বরে আকস্মিকভাবে সামরিক আইন জারির ঘোষণা দেন ইউন। তার দাবি, রাষ্ট্রবিরোধীদের খুঁজে বের করে মূলোৎপাটনের জন্য এই পদক্ষেপ নিয়েছেন তিনি। তবে বিরোধীদের চাপে মাত্র ছয় ঘণ্টা পর সামরিক আইন প্রত্যাহারে বাধ্য হন ইউন।
তার কিছুদিন পরেই তার বিরুদ্ধে পার্লামেন্টে অভিশংসন প্রস্তাব অনুমোদিত হয় এবং পৃথকভাবে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে মামলা দায়ের করা হয়।
মামলার শুনানিতে দুজন জ্যেষ্ঠ সামরিক কর্মকর্তা ইউনের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিতে পারেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। ওই দুই ব্যক্তির একজন, রাজধানী প্রতিরক্ষা কমান্ডের সদস্য চো সাং হিউন ইতোমধ্যে একবার অপসারিত প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিয়েছেন। ফেব্রুয়ারিতে সাংবিধানিক আদালতে অভিশংসন মামলার শুনানিতে তিনি জবানবন্দিতে বলেন, সামরিক আইন জারির পর বিরোধী আইনপ্রণেতাদের টেনে হিঁচড়ে পার্লামেন্ট থেকে বের করার জন্য সেনাসদস্য প্রেরণের আদেশ দেওয়া হয়েছিল তাকে।
এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ইউন।
উল্লেখ্য, দক্ষিণ কোরিয়ায় রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগ প্রমাণিত হলে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এমনকি প্রাণদণ্ড দেওয়ার বিধানও রয়েছে। অবশ্য, কয়েক দশকের মধ্যে দেশটিতে কাউকে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়নি।
এদিকে, ইউনের অভিশংসন বহাল রেখে চলতি মাসের শুরুতে তার স্থায়ী অপসারণের রায় দিয়েছে দক্ষিণ কোরিয়ার সাংবিধানিক আদালত। আগামী জুনের ৩ তারিখ প্রেসিডেন্ট নির্বাচন আয়োজন করতে যাচ্ছে দেশটি। অনেকের ধারণা, নির্বাচনে কোনও একভাবে প্রভাব রাখতে পারেন ইউন সুক ইওল।