অবৈধ অভিবাসীরা কী ট্রাম্পের রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের মাধ্যম?

যুক্তরাষ্ট্রের বসবাসরত অবৈধ অভিবাসীদের বিরুদ্ধে যথেষ্ট আগ্রাসী ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে ট্রাম্প প্রশাসন। তাদের অনেককেই আটক করে অপরাধচক্রের নেতা, মানবপাচারকারী এমনকি অপরাধী তকমাও দেওয়া হচ্ছে। তবে একাধিক ক্ষেত্রে ট্রাম্প প্রশাসন অভিবাসীদের বিরুদ্ধে এসব অভিযোগের স্বপক্ষে কোনও প্রমাণ আদালতে পেশ করতে পারেনি।

ভার্জিনিয়া থেকে গত ২৭ মার্চ এল সালভাদরের এক নাগরিককে আটক করে এফবিআইয়ের বিশেষ বাহিনী সোয়াট। অবৈধভাবে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসকারী ২৪ বছর বয়সী ওই ব্যক্তিকে একজন সন্ত্রাসী এবং অন্যতম নৃশংস অপরাধচক্র এমএস-১৩ এর শীর্ষ নেতা বলে তকমা দেন মার্কিন অ্যাটর্নি জেনারেল প্যাম বন্ডি।

অথচ আদালতে তার বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগে বলা হয়, আটক ব্যক্তির কাছে আগ্নেয়াস্ত্র পাওয়া গেছে, যা অবৈধ অভিবাসীদের জিম্মায় রাখা আইনত দণ্ডনীয়। তবে সপ্তাহ দুয়েকের মধ্যে একমাত্র অভিযোগটিও প্রত্যাহারের উদ্যোগ নেয় বিচারবিভাগ।

এর আগে আরেক ঘটনায় ২৩৮ জন ভেনেজুয়েলান নাগরিককে সালভাদরের উচ্চ নিরাপত্তা কারাগারে প্রেরণ করে ট্রাম্প প্রশাসন। অপরাধচক্র ত্রেন দে আরাহুয়ার সদস্য হওয়ার অভিযোগে তাদের বিরুদ্ধে এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়ে। তাদের মধ্যে এক ব্যক্তি, এল সালভাদরের নাগরিক কিলমার আবরেগো গার্সিয়ার বিরুদ্ধে মানবপাচারের অভিযোগ আনা হয়। অথচ মার্কিন মুলুক থেকে তার বিতাড়নে আদালতের নথিপত্রে মানবপাচারের অভিযোগের কোনও উল্লেখ নেই।

উল্লেখ্য, আবরেগো গার্সিয়ার গাড়ির পথরোধ করে তাকে আটক করে পুলিশ। সে সময় গাড়ির পেছনের সিটে তার পাঁচ বছর বয়সী সন্তান ছিল। আটকের পর গার্সিয়ার স্ত্রীকে ফোন দিয়ে পুলিশ জানায়, দশ মিনিটের মধ্যে এসে সন্তানকে নিয়ে যেতে ব্যর্থ হলে বাচ্চাটিকে সরকারি জিম্মায় নিয়ে যাওয়া হবে।

আটক অভিবাসীদের বিরুদ্ধে জনসম্মুখে উত্থাপিত অভিযোগ এবং আদালতে আনুষ্ঠানিক অভিযোগে পার্থক্য নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা হচ্ছে। এ বিষয়ে হোমল্যান্ড সিকিউরিটি সেক্রেটারি ক্রিস্টি নোয়েম বলেছেন, মার্কিন সরকারের বিবেচনায় তিনি আস্থা রাখেন। তাই অভিযুক্ত ব্যক্তিদের আজীবন কারারুদ্ধ রাখা উচিত বলেই তিনি মনে করেন।

এল সালভাদর কারাগার পরিদর্শনে ক্রিস্টি নোয়েম। ফাইল ছবি: রয়টার্স

রয়টার্সের এক প্রশ্নের জবাবে হোমল্যান্ড সিকিউরিটির মুখপাত্র ট্রিসিয়া ম্যাকললিন দাবি করেন, বিতাড়িত অনেক ব্যক্তির বিরুদ্ধে অপরাধের রেকর্ড নেই বলা হলেও তারা আসলে সন্ত্রাসী এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনকারী। তাদের অপরাধের ফিরিস্তি বলে শেষ করা যাবে না।

তবে অভিযোগের স্বপক্ষে কোনও প্রমাণ পেশ করেননি ম্যাকললিন।

বিশেষজ্ঞরা বলেন, মানবপাচার, অপরাধচক্র পরিচালনা বা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার মতো মারাত্মক ফৌজদারি অপরাধে অভিযুক্তদের বিষয়ে সাধারণত প্রথমেই জনসম্মুখে মন্তব্য করা হয় না। কারণ এতে বিচার প্রক্রিয়া প্রভাবিত হওয়ার ঝুঁকি থাকে।

ট্রাম্প প্রশাসনের এক কর্মকর্তা বলেছেন, এসব বিষয়ে সংবেদনশীল এবং গোপনীয় অনেক তথ্য প্রকাশ করা সম্ভব নয়। তবে সরকারের অঙ্গীকারে তিনি আস্থাশীল।

বিশেষজ্ঞদের অভিযোগ, অভিবাসী বিতাড়ন ছিল ট্রাম্পের অন্যতম নির্বাচনি অঙ্গীকার। অবৈধ অভিবাসীদের ভয়াবহ অপরাধী বলার চেষ্টা করে একধরনের জনসমর্থন তৈরির চেষ্টা করা হচ্ছে। মানুষকে দেখানো হচ্ছে, মার্কিনিদের মাঝে অনেক ভয়াবহ অভিবাসী বাস করছে এবং তাদের ঘাড় ধাক্কা দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বের করে দিতে ট্রাম্প প্রশাসন বদ্ধপরিকর।

নিউ ইয়র্ক ল স্কুলের অধ্যাপক রেবেকা রোইফি বলেছেন, সরকার একটি নির্দিষ্ট বার্তা ছড়াতে চায়। তারা দেখাতে চায়, আমাদের দেশে অবৈধভাবে প্রবেশকারী অনেকেই বিপজ্জনক। এটি একটি আইনি কৌশল, যা রাজনৈতিক উদ্দেশ্য পূরণে ব্যবহৃত হচ্ছে।

এসব বিষয়ে বিচার বিভাগের পক্ষে থেকে কোনও বক্তব্য পায়নি রয়টার্স।

তথ্যসূত্র: রয়টার্স