চিকিৎসা নিতে হাঁটতে হলো ৩ ঘণ্টা, মারা গেলেন ৮ কলেরা রোগী

দক্ষিণ সুদানের স্বাস্থ্যখাতে মার্কিন সহায়তা বন্ধের প্রভাব স্পষ্ট হতে শুরু করেছে। নিকটস্থ স্বাস্থ্যকেন্দ্র তহবিলের অভাবে বন্ধ থাকায় তিন ঘণ্টা হেঁটে হাসপাতালে পৌঁছাতে গিয়ে মারা গেছেন কলেরা আক্রান্ত আট রোগী। তাদের মধ্যে পাঁচজনই ছিল শিশু। ব্রিটিশ বার্তাসংস্থা রয়টার্স এ খবর জানিয়েছে।

যুক্তরাজ্যভিত্তিক আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান সেভ দ্য চিলড্রেন বুধবার (৯ এপ্রিল) এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, মার্কিন সহায়তা বন্ধের কারণে স্থানীয় স্বাস্থ্যকেন্দ্রের পাশাপাশি পরিবহন সুবিধাও বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে, চিকিৎসা নিতে ওই আটজনকে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় তিন ঘণ্টা হেঁটে হাসপাতালে পৌঁছানোর চেষ্টা করতে হয়েছে।

সংস্থাটির দক্ষিণ সুদান কার্যালয়ের পরিচালক ক্রিস্টোফার নিয়ামান্ডি জানিয়েছেন, মারা যাওয়া শিশুদের মধ্যে তিনজনের বয়সই ছিল পাঁচের নিচে।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে নীতি নির্ধারণ করছেন, অন্তত তার দাবি অনুযায়ী। সেই ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ নীতির আলোকেই বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সহায়তা স্থগিতে নির্বাহী আদেশ জারি করেন তিনি।

নিয়ামান্ডি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছেন, এক দেশের ক্ষমতাবানদের খেয়ালে কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই অন্য দেশের শিশুরা মারা পড়ছে। এসবে দেখে নৈতিকতা রক্ষায় বিশ্বব্যাপী সবার ফুঁসে ওঠা উচিত।

বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলেছেন, সহায়তা কমিয়ে দেওয়ার এই সিদ্ধান্তে আগামী বছরগুলোতে অপুষ্টি, এইডস, যক্ষ্মা, ম্যালেরিয়া এবং অন্যান্য রোগে লক্ষাধিক মানুষের প্রাণহানি হতে পারে।

এদিকে, সেভ দ্য চিলড্রেনের অভিযোগের বিষয়ে কোনও তথ্য নেই বলে দাবি করেছে মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। তবে একজন মুখপাত্র বলেন, দক্ষিণ সুদানে জরুরি সহায়তা সংক্রান্ত একাধিক কার্যক্রম এখনও চালু রেখেছে মার্কিন সরকার। যদিও চিকিৎসা সেবার জন্য বরাদ্দ কিছু অর্থ দেশটির নেতাদের ব্যক্তিগত স্বার্থে ব্যবহৃত হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, জরুরি কর্মসূচিগুলো চালিয়ে যাওয়া হলেও, দক্ষিণ সুদানের রাজনৈতিক নেতাদের দুর্নীতিকে উৎসাহিত করে, এমন কাজে মার্কিন করদাতাদের অর্থ ব্যবহার করতে দিতে পারি না।

উল্লেখ্য, পূর্বে উত্থাপিত দুর্নীতির বিভিন্ন অভিযোগ মাথা পেতে মেনে নিয়েছে দক্ষিণ সুদান সরকার। তবে প্রেসিডেন্ট সাল্ভা কিরের পরিবারসহ কয়েকটি সুনির্দিষ্ট ক্ষেত্রে দুর্নীতির অভিযোগ আবার অস্বীকার করেছে।

সুদানের যেকোনও রকম মানবিক সহায়তা, স্বাস্থ্য সহায়তা বা ত্রাণ কার্যক্রমের তহবিল বেসরকারি সংস্থা, মানবাধিকার সংগঠন এবং এনজিওগুলোর সহায়তায় প্রেরণ করা হয়। সরকারের দুর্নীতির অভিযোগ বিবেচনার নিয়েই এই বাড়তি সতর্কতা নিয়ে থাকে আন্তর্জাতিক দাতাগোষ্ঠী।