চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং দক্ষিণ আমেরিকায় এক সপ্তাহব্যাপী কূটনৈতিক সফর শুরু করেছেন। বৃহস্পতিবার (১৪ নভেম্বর) পেরুতে একটি বিশাল গভীর সমুদ্রবন্দর উদ্বোধনের মাধ্যমে সফর শুরু করেছেন তিনি। এখানে বেইজিংয়ের ১৩০ কোটি ডলারের বিনিয়োগ রয়েছে। লাতিন আমেরিকায় বাণিজ্যে চীনের প্রভাব বৃদ্ধি জন্য এ প্রকল্পটি গ্রহণ করা হয়। ব্রিটিশ বার্তাসংস্থা রয়টার্স এ খবর জানিয়েছে।
চীনে লাতিন আমেরিকার কৃষি পণ্য ও ধাতুর চাহিদা বৃদ্ধির সঙ্গে বেইজিংয়ের আগ্রহও বাড়ছে। তারই ধারাবাহিকতায় লিমায় আয়োজিত এশিয়া প্যাসিফিক ইকোনমিক কো-অপারেশনের (আপেক) সম্মেলনে অংশগ্রহণ করবেন জিনপিং। এরপর তিনি রিও ডি জেনেরিওতে আয়োজিত গ্রুপ অব টুয়েন্টি (জি২০) সম্মেলনে যোগ দেবেন। একইসঙ্গে সেটি হবে ব্রাজিলে জিনপিংয়ের রাষ্ট্রীয় সফর।
বৃহস্পতিবার ভিডিও কনফারেন্সে চ্যানসেই বন্দর উদ্বোধনে জিনপিংয়ের সঙ্গে অংশ নিয়েছেন পেরুর প্রেসিডেন্ট ডিনা বোলুয়ার্টে। লিমার প্রায় ৮০ কিলোমিটার উত্তরে প্রশান্ত মহাসাগরের তীরে বন্দরটি অবস্থিত। এছাড়া, বিদ্যমান মুক্তবাণিজ্য চুক্তি সম্প্রসারণের জন্য নতুন একটি চুক্তিও স্বাক্ষর করেছেন তারা।
পেরুর রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম এল পেরুয়ানোতে প্রকাশিত এক নিবন্ধে জিনপিং বলেছেন, চ্যানসেই প্রকল্পটি থেকে বছরে ৪৫০ কোটি ডলার আয় করা সম্ভব। এছাড়া, ৮ হাজারের বেশি সরাসরি চাকরি সৃষ্টির পাশাপাশি পেরু-চীন বাণিজ্যপথের খরচ শতাংশ হ্রাস পাবে।
এদিকে, চ্যানসেই চেম্বার অব কমার্সের পরিচালক ওচারান বলেছেন, বন্দর তৈরিতে বেইজিংয়ের আগ্রহের মূলে রয়েছে পেরুর প্রতিবেশী দেশ ব্রাজিলে বাণিজ্যের সুযোগ বৃদ্ধি করা। সয়াবিন ও লৌহ আকরিক পরিবহনের জন্য সেখানে বন্দর পর্যন্ত রেলপথ স্থাপনের পরিকল্পনা চলছে।
এই বন্দরের উদ্বোধন চীনের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত। কারণ লাতিন আমেরিকার সমৃদ্ধ বাজারে নিজেদের আধিপত্য বৃদ্ধির চেষ্টা করছে চীন। ইউরোপের সঙ্গে বাণিজ্যিক উত্তেজনা ও সামনের বছর ট্রাম্প দায়িত্ব নেওয়ার পর সম্ভাব্য শুল্ক বৃদ্ধির উদ্বেগের কারণে বেইজিংয়ের কাছে লাতিন অঞ্চলের গুরুত্ব আরও বৃদ্ধি পাচ্ছে।
এই সফরে চীনা প্রেসিডেন্টের সঙ্গে দেশটির শতাধিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের নির্বাহীও রয়েছেন। তাদের অনেকের প্রতিষ্ঠান পেরুতে প্রচুর বিনিয়োগ করেছে।
পেরুর বন্দর প্রকল্পে চীনা বিনিয়োগ ওয়াশিংটনে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। মার্কিন সেনাবাহিনীর সাবেক কর্মকর্তা জেনারেল লরা রিচার্ডসন সতর্ক করে বলেছেন, বন্দরটি চীনা নৌবাহিনীর স্বার্থে ও গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহের জন্য ব্যবহৃত হতে পারে।
এদিকে, হোয়াইট হাউজের বক্তব্যের বিরোধিতা করেছে চীন। দেশটির রাষ্ট্রসমর্থিত সংবাদমাধ্যম গ্লোবাল টাইমস সোমবার একটি সম্পাদকীয়তে লিখেছে, ভূরাজনৈতিক প্রতিযোগিতার জন্য এই বন্দর ব্যবহার করা হবে না। বন্দরের সামরিক ব্যবহার নিয়ে মার্কিন অভিযোগগুলো কলঙ্কজনক হিসেবে অভিহিত করেছে তারা।