ইসরায়েল যুদ্ধের মূল লক্ষ্য থেকে সরে গেছে বলে অভিযোগ করেছেন দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্ট। ইরানে সর্বশেষ হামলার কয়েকঘণ্টা আগে প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে লেখা চিঠিতে এ কথা বলে সতর্ক করেছেন তিনি। বিগত একবছরে উদ্ভূত আঞ্চলিক পরিস্থিতি বিবেচনায় নিজেদের মনোযোগ পুনর্নির্ধারণ করা দরকার বলে গ্যালান্ট দাবি করেছেন। ইসরায়েল ভিত্তিক সংবাদমাধ্যম দ্য টাইমস অব ইসরায়েল এ খবর জানিয়েছে।
গ্যালান্ট বলেছেন, ইসরায়েলের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য ‘সেকেলে’ হয়ে গেছে। তাদের উচিত ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের হামলা হওয়ার আগের পন্থায় ফেরত যাওয়া।
তিনি বলেছেন, যুদ্ধের প্রকৃতিতে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন এসেছে। যেমন ইরানের সঙ্গে তারা সরাসরি সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েছে। এখন তাদের উচিত যুদ্ধের বিভিন্ন ফ্রন্ট ও তাদের আন্তঃসম্পর্ক বিবেচনায় নিয়ে সমন্বিত একটা পরিকল্পনা তৈরি করা এবং আলোচনার মাধ্যমে যুদ্ধের লক্ষ্য পুনর্বিবেচনা করা।
গত বছরের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলের দক্ষিণাঞ্চলে হামাস হামলা করলে গাজা যুদ্ধের শুরু হয়। ওইদিন প্রায় ২৫০ জন ইসরায়েলিকে জিম্মি করে ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে নিয়ে যায় হামাস। প্রাথমিকভাবে তাই হামাসের ধ্বংস ও জিম্মিদের মুক্তি ছিল যুদ্ধে ইসরায়েলের মূল লক্ষ্য।
কিন্তু যুদ্ধে ইরান ও তার প্রক্সিরা জড়িয়ে পড়লে পরিস্থিতি পালটে যেতে থাকে। ইসরায়েলের দাবি অনুযায়ী, তারা এখন সাতটি ফ্রন্টে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে।
লেবানন সীমান্তবর্তী উত্তরাঞ্চলীয় ইসরায়েলের বাসিন্দাদের ঘরে ফিরিয়ে নেওয়াও এখন তেল আবিবের লক্ষ্যে পরিণত হয়েছে। এই উদ্দেশ্যে লেবানিজ সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহকে নিশ্চিহ্ন করার অভিপ্রায়ে লেবাননে মাসখানেক ধরে হামলা চালিয়ে যাচ্ছে তারা।
ইসরায়েলের যুদ্ধের লক্ষ্য আপডেট করতে কয়েকটি আলাদা ক্ষেত্র তুলে ধরেছেন গ্যালান্ট। তার মতে, পশ্চিম তীরে ‘সন্ত্রাসবাদ’ দমন করে নৃশংসতা প্রতিরোধের পদক্ষেপ নিতে হবে ইসরায়েলকে। আর ইরানকে যুদ্ধের বাইরে রাখা প্রয়োজন। এছাড়া গাজায় উচিত ‘কোন সামরিক হুমকি ছাড়া একটি সমাধান খুঁজে বের করা, সন্ত্রাসবাদের সক্ষমতা হ্রাস করা, সমস্ত জিম্মিদের ফিরিয়ে আনা এবং হামাস সরকারের বিকল্প নিয়ে প্রচারণা চালানো।’
অবশ্য হামাস নিশ্চিহ্ন করতে বদ্ধপরিকর ইসরায়েল হামাস সরকারের কোনও বিকল্প নিয়ে ভাবতে রাজি নয়। এই নীতির জন্যই প্রকাশ্যে নেতানিয়াহুর সমালোচনা করেছেন গ্যালান্ট। তিনি বলেছেন, যুদ্ধের পর ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে ইসরায়েলি শাসন প্রতিষ্ঠার চিন্তা বাদ দেওয়া উচিত।
অন্যদিকে, কট্টর ডানপন্থীদের দাবি হলো, গাজায় ইসরায়েলি বসতি গড়ে তুলতে হবে।
গ্যালান্টের দাবি খুব একটা সমাদর পায়নি সরকারের কাছে। নেতানিয়াহুর কার্যালয় থেকে প্রকাশিত বিবৃতিতে প্রতিরক্ষামন্ত্রীর পরামর্শকে ‘উদ্ভট’ বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
ওই বিবৃতিতে বলা হয়েছে, যুদ্ধের লক্ষ্য ঠিকই আছে। মন্ত্রিসভা যুদ্ধের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নিয়মিত পর্যালোচনা করে ও সম্প্রতি তার পরিধি বৃদ্ধি পেয়েছে।