দেশে দেশে যেভাবে পালিত হয় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উদযাপনের উদ্যোগটি বাংলাদেশের। ১৯৯৯ সালে জাতিসংঘ সংস্থা ইউনেস্কো জেনারেল কনফারেন্সে দিবসটিকে অনুমোদন দেয় এবং ২০০০ সাল থেকে বিশ্বজুড়ে পালিত হচ্ছে। প্রতি বছর দিবসটির জন্য প্রতিপাদ্য ঘোষণা করে ইউনেস্কো। সংস্থাটির মহাপরিচালক দিবসটি উপলক্ষে বাণী দেন। আয়োজন করা হয় বিভিন্ন কর্মসূচি। করোনাভাইরাস মহামারির কারণে গত দুই বছরে দিবসটির আয়োজন মূলত ভার্চুয়াল ওয়েবিনার আয়োজনে সীমাবদ্ধ ছিল।

ইউনেস্কো এই বছরের আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করেছে, ‘বহু ভাষায় শিক্ষণে প্রযুক্তির ব্যবহার: চ্যালেঞ্জ ও সুযোগ’। এই প্রতিপাদ্যের আলোকে বহু ভাষায় শিক্ষণকে এগিয়ে নিতে প্রযুক্তির ভূমিকা ও সবার জন্য শিক্ষা ও শিক্ষণের মান উন্নয়নে সহযোগিতার বিষয়টি আলোচনা করা হবে।

ইউনেস্কো ছাড়াও বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা পালিত হয়। জাতিসংঘের সদস্য দেশগুলোর সংবাদমাধ্যমে দিবসটির ইতিহাস ও তাৎপর্য তুলে ধরে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এছাড়া বিভিন্ন দেশের বাংলাদেশ দূতাবাস এবং বাংলাদেশি প্রবাসীদের উদ্যোগে দিবসটি পালন করা হয়। দিবসটিকে উপলক্ষ করে কয়েকটি পুরস্কারও প্রদান করা হয়।

ভারত

বাংলাদেশের বাইরে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, আসাম ও ত্রিপুরায় বাংলা ভাষাভাষী মানুষের বসবাস রয়েছে। আসামের বরাক উপত্যকায় বাংলা ভাষাকে স্বীকৃতির দাবিতে ১০ জনের বেশি শহীদ হন। ওই আন্দোলনে আসামে বাংলা ভাষা স্বীকৃতি পায়। আসামের শিলচরের গান্ধিবাগে এই শহীদদের স্মরণে একটি শহীদ মিনারও স্থাপিত হয়। বর্তমানে ১৯ মে আসামের বাংলা ভাষাভাষীরা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে এখানে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। ২১শে ফেব্রুয়ারিতেও এখানে অনেকে ফুল দিতে আসেন।

এছাড়া পশ্চিমবঙ্গের হলদিয়া ও চন্দননগরে আরও দুটি শহীদ মিনার রয়েছে, যেখানে ২১শে ফেব্রুয়ারি শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হয়।

পাকিস্তান

সরকারি উদ্যোগ জোরালো না হলেও বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে দিবসটিতে ভিন্ন আয়োজন করা হয়। গত বছর পাকিস্তান ন্যাশনাল কাউন্সিল অব দ্য আর্টস (পিএনসিএ) ইন্দুস কালচারাল ফোরামের সঙ্গে সম্মিলিতভাবে ৬ষ্ঠ পাকিস্তান মাতৃভাষা সাহিত্য মেলা আয়োজন করে। এতে দেশটির ২০টি ভাষার লেখক, বুদ্ধিজীবী, শিল্পী ও অ্যাক্টিভিস্টরা অংশগ্রহণ করেন। মেলায় পাকিস্তানের ৭০টিরও বেশি ভাষা রক্ষার জন্য কর্তৃপক্ষের কাছে আহ্বান জানানো হয়।

এছাড়া ইকো সায়েন্স ফাউন্ডেশন, দ্য ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ফোক অ্যান্ড ট্র্যাডিশনাল হেরিটেজও দিবসটি পালন করেছে।

কানাডা

২০১৫ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি কানাডার পার্লামেন্টে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসকে স্বীকৃতি দেওয়ার প্রস্তাব উত্থাপন করা হয়। একই বছর ব্রিটিশ কলম্বিয়া ও মানিটোবাতে ২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা পালনের ঘোষণা দেয়। এডমন্টন ২০১৭ সালে প্রথমবার দিবসটি পালন করে। 

যুক্তরাজ্য

ঢাকার শহীদ মিনারের একটি প্রতিরূপ লন্ডনের হোয়াইট চ্যাপেলে আলতাব আলি পার্কে স্থাপন করা হয়। দিবসটিতে স্থানীয়রা পুষ্পস্তবক অর্পণ এবং সংগীত পরিবেশন করেন। শহীদ মিনারের আরেকটি প্রতিরূপ বৃহত্তর ম্যানচেস্টারের ওয়েস্টউডে স্থাপন করা হয়েছে। উত্তর ইংল্যান্ডের মানুষেরা দিবসটি সেখানে পালন করেন। এছাড়া পূর্ব লন্ডনের কবি নজরুল সেন্টারে বিভিন্ন শিল্পগোষ্ঠীর অংশগ্রহণে সাংস্কৃতিক আয়োজনও দেখা যায়।

যুক্তরাষ্ট্র

২০১৬ সালে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে যুক্তরাষ্ট্রের ডাকবিভাগ প্রথম স্মারক সিলমোহর প্রকাশ করে। নিউ ইয়র্কে মুক্তধারা ফাউন্ডেশন ও বাঙালির চেতনা মঞ্চের উদ্যোগে জাতিসংঘ কার্যালয়ের সামনে বানানো হয় অস্থায়ী শহীদ মিনার। মুক্তধারা ফাউন্ডেশন ১৯৯২ সাল থেকে প্রবাসীদের নিয়ে ২১শে ফেব্রুয়ারি পালনের আয়োজন করে আসছে। এছাড়া জ্যাকসন হাইটসে ২৩ এবং ২৪ ফেব্রুয়ারি বইমেলারও আয়োজন করা হয়ে থাকে। নিউ জার্সিতে স্থায়ী শহীদ মিনারে সেখানকার বাসিন্দারা পুষ্পস্তবক প্রদান করেন।  

এছাড়া, সুইডেন, ইতালি, স্পেন, ফ্রান্স, অস্ট্রিয়া, মালয়েশিয়া, কাতার, সৌদি আরব, জর্ডানসহ বিভিন্ন বাংলাদেশ দূতাবাস ও প্রবাসী বাংলাদেশিদের উদ্যোগে দিবসটি পালন করা হয়। উদ্যোগের মধ্যে থাকে দূতাবাসগুলো জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা, শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ ইত্যাদি।

পুরস্কার

স্পেনের বার্সেলোনায় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে প্রতিবছর লিঙ্গুয়াপ্যাক্স পুরস্কার প্রদান করে লিঙ্গুয়াপ্যাক্স ইনস্টিটিউট।

একুশে হেরিটেজ অ্যাওয়ার্ড

বাংলাদেশ হেরিটেজ অ্যান্ড এথনিক সোসাইটি অব আলবার্টা ২০১৪ সালে একুশে হেরিটেজ অ্যাওয়ার্ড প্রদান শুরু করে। প্রতি বছর একুশে ফেব্রুয়ারি জয়ীদের নাম ঘোষণা করা হয়।

একুশে ইয়ুথ অ্যাওয়ার্ড

২০‌১৫ সালে আলবার্টার মাহিনুর জাহিদ মেমোরিয়াল ফাউন্ডেশন এই পুরস্কার প্রচলন করে এবং প্রতি বছর আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে জয়ীদের নাম ঘোষণা করা হয়। শিক্ষা, ক্রীড়া ও তরুণদের কর্মকাণ্ডে উৎসাহ প্রদানকারীদের এই পুরস্কার দেওয়া হয়।