ভারতে দলিত দম্পতির ওপর পুলিশি তাণ্ডবের ঘটনায় ক্ষোভ

ভারতে সন্তানের সামনে এক দলিত দম্পতিকে পুলিশের নির্মম নির্যাতনের ঘটনায় দেশজুড়ে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ছে। বিরোধী দল কংগ্রেস, বহুজন সমাজ পার্টি এবং বাম দলগুলো মধ্যপ্রদেশের এ ঘটনাকে দলিতদের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গির বহিঃপ্রকাশ হিসেবে আখ্যায়িত করেছে। টুইটারে দেওয়া এক পোস্টে এমন বৈষম্যমূলক মনোভাবের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের কথা বলেছেন কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী।12

ভারতে হিন্দু ধর্মের জাতপাত প্রথা এবং দলিতদের প্রতি বৈষম্য নিয়ে দীর্ঘদিন থেকে কথা হলেও এ দম্পতিকে নির্যাতনের ঘটনায় বিষয়টি নতুন করে সামনে এসেছে।

সংবাদমাধ্যম জি নিউজ জানিয়েছে, সরকারি একটি জমি দখল করে সেখানে চাষাবাদের অভিযোগে ওই দম্পতির ওপর চড়াও হয় পুলিশ। লাঠি দিয়ে মারধর আর লাথি, ঘুঁষির এক পর্যায়ে তারা মাটিতে লুটিয়ে পড়েন তারা। এ সময় হাউমাউ করে কাঁদতে শুরু করে তাদের বাচ্চারা। কিন্তু তাতেও মন গলেনি পুলিশের। উল্টো মা-বাবার পাশাপাশি বাচ্চাদেরও নির্মমভাবে পেটাতে শুরু করে পুলিশ।

শুধু মারধর করেই ক্ষান্ত হয়নি পুলিশ। বুলডোজার চালিয়ে ধ্বংস করে দেওয়া হয় ওই দম্পতির ফসলের ক্ষেত। এক পর্যায়ে পুলিশের সামনেই বিষ খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করে ওই দলিত দম্পতি। পরে তাদের স্থানীয় একটি হাসপাতালে পাঠানো হয়। বর্তমানে তাদের অবস্থা স্থিতিশীল রয়েছে বলে জানা গেছে।

ইতোমধ্যেই এ ঘটনার একটি ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে। এরপরই পুলিশের নির্মমতার প্রতিবাদে সোচ্চার হতে শুরু করে নেটিজেনরা।

সমালোচনার মুখে স্থানীয় এসপি-সহ ছয় পুলিশ কর্মকর্তাকে বরখাস্ত করা হয়েছে। ঘটনার তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন মধ্যপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী শিবরাজ সিং চৌহান।

ভিডিওতে মারধরের ঘটনা স্পষ্ট হলেও পুলিশের পক্ষ থেকে কোনও ধরনের আঘাতের কথা অস্বীকার করা হয়েছে। এমনকি সরকারি দায়িত্ব পালনে বাধা দেওয়ার অভিযোগে তাদের বিরুদ্ধে মামলা করেছে পুলিশ।

পুলিশের অভিযোগ, ওই দলিত চাষি একটি কলেজের জায়গা দখল করেছে। তবে রাজকুমার অহিরওয়ার (৩৮) নামের ওই দলিত ব্যক্তি জানান, তিনি অর্থের বিনিময়ে স্থানীয় একজন নেতার কাছ থেকে জমিটি চাষের জন্য নিয়েছেন। দুই লাখ রুপি ধার করে সেই জমিতে চাষাবাদ করা হয়েছিল।

রাম কুমার অহিরওয়ার-এর স্ত্রী ৩৫ বছরের সাবিত্রী দেবী পরে সাংবাদিকদের বলেন, ফসল ধ্বংস করে দেওয়ার পর তাদের আত্মহত্যা ছাড়া আর কোনও পথ খোলা ছিল না।

নিষ্ঠুর ও লজ্জাজনক

টুইটারে দেওয়া এক পোস্টে এ ঘটনাকে নিষ্ঠুর ও লজ্জাজনক বলে আখ্যায়িত করেছেন দলিত রাজনীতিক কুমারি মায়াবতী। তিনি বলেন, দেশজুড়ে এই ঘটনার নিন্দা হওয়া স্বাভাবিক। সরকারের কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া উচিত।

বিএসপি নেত্রী মায়াবতী বলেন, ওই দম্পতির দেহে পুলিশের প্রতিটি মার ভারতের দলিত সম্প্রদায়কে রক্তাক্ত করেছে।

কংগ্রেস নেত্রী প্রিয়ঙ্কা গান্ধী বলেছেন, ‘গরিবের ওপর আক্রমণ, দলিতের ওপর আক্রমণ, কৃষকের ওপর আক্রমণ, গণতন্ত্রের ওপর আক্রমণ— এটাই বিজেপি-র কৌশল, তাদের চরিত্র। এই অন্যায়ের বিরুদ্ধেই কংগ্রেস জীবন বাজি রেখে লড়াই করছে।’

সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি এ ঘটনাকে বিজেপি সরকারের দলিত-বিদ্বেষ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন।

সরকারি কর্মকর্তারা অবশ্য কেউ বিষয়টি নিয়ে প্রকাশ্যে সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে চাননি। সূত্র: আল জাজিরা, জি নিউজ।