পাকিস্তানে ‘অনার কিলিং’র ঘটনায় বাবা-ভাইসহ আটক ৩

‘অনার কিলিং’ বা ‘পরিবারের সম্মান রক্ষা’র নামে পাকিস্তানে দুই অপ্রাপ্ত বয়স্ক নারী হত্যার ঘটনায় তাদের বাবা ও ভাইকে আটক করেছে পুলিশ। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে ১৮ বছর পার না হওয়া ওই দুই নারীকে এক তরুণের সঙ্গে দেখা যাওয়ার পর তাদেরকে গুলি করে হত্যা করা হয়। ওই ভিডিওধারণকারী ব্যক্তিকেও আটক করা হয়েছে। তবে হত্যাকাণ্ডে সন্দেহভাজন আত্মীয়রা এখনও পলাতক রয়েছে বলে সোমবার জানিয়েছেন স্থানীয় পুলিশ কর্মকর্তা শফিউল্লাহ গান্দাপুর। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় দ্রুত ব্যবস্থা নিতে পুলিশের ভূমিকার প্রশংসা করেছেন দেশটির নারী অধিকার কর্মীরা।noname

পাকিস্তানে তথাকথিত ‘অনার কিলিং’ বা সম্মান রক্ষার নামে হত্যাকাণ্ড প্রায়ই ঘটে থাকে। হিউম্যান রাইটস ওয়াচের হিসাব অনুযায়ী প্রতিবছর দেশটিতে প্রায় এক হাজার নারী তথাকথিত অনার কিলিংয়ের শিকার হন। সম্প্রতি ওয়াজিরিস্তানের একটি দুর্গম এলাকায় এক তরুণের সঙ্গে দুই অপ্রাপ্তবয়স্ক নারীর একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। ১৬ ও ১৮ বছর বয়সী ওই দুই বোনকে গত বৃহস্পতিবার খাইবার পাখতুনখাওয়া প্রদেশের উত্তর ওয়াজিরিস্তানের দুর্গম উপজাতি এলাকায় গুলি করে হত্যা করা হয়।

পাকিস্তানে এই ধরনের অনার কিলিংয়ের বহু ঘটনা আড়ালে থেকে যায়। তবে ২০১৬ সালে সোস্যাল মিডিয়া তারকা কানদিল বালুচ নিজ ভাইয়ের হাতে খুন হলে দেশটিতে তীব্র বিতর্ক শুরু হয়। পরে সরকার এই সংক্রান্ত আইন কঠোর করতে বাধ্য হয়। তারপরও এসব মামলা তদন্ত করতে গিয়ে মারাত্মক চাপে পড়ে থাকে পাকিস্তানের পুলিশ।

সম্প্রতি দুই বোন হত্যার ঘটনা প্রসঙ্গে উত্তর ওয়াজিরিস্তানের পুলিশ কর্মকর্তা শফিউল্লাহ গান্দাপুর বলেন, ‘আমাদের উদ্দেশ্য আন্তরিক ছিল। প্রথমে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আমরা এই ঘটনাটি জানতে পারি আর তারপরেই এটি নিশ্চিত হওয়ার সিদ্ধান্ত নেই।’ সোমবার তিনি বলেন, ‘আমরা ঘটনাস্থল, রক্তের আলামত এবং রক্তমাখা ছেঁড়া কাপড়ও খুঁজে পেয়েছি। আমরা হত্যার শিকার দুই বোনের বাবা এবং ভাইকে আটক করেছি এবং আজ ভিডিওধারণকারী ব্যক্তি ওমর আয়াজকে গ্রেফতারে সফল হয়েছি।’

যুক্তরাষ্ট্রে নির্বাসিত পাকিস্তানের নারী অধিকার কর্মী গুলালি ইসমাইল বলেন, উপজাতি এলাকায় হত্যাকাণ্ডের একদিনের মাথায় দ্রুত ব্যবস্থা নিয়ে পুলিশের মামলা দায়ের উপজাতি নারীদের জন্য একটি বিজয়। তিনি বলেন, ‘এই ধরনের অপরাধের ক্ষেত্রে সময় একটি বড় ফ্যাক্টর। আর এতে যদি দেরি হয় তাহলে এই মাসে ঘটে যাওয়া আরও সাতটি হত্যাকাণ্ডের মতো এটিও আড়ালে পড়ে যেতে পারতো।’ এই ধরনের হত্যাকাণ্ড প্রায়ই আত্মহত্যা বা স্বাভাবিক মৃত্যু বলে চালিয়ে দেওয়া হয় বলে জানান তিনি।

গুলালি ইসমাইল জানান, ২০১৮ সালের আগে উপজাতীয় এলাকায় এই ধরনের হত্যাকাণ্ডকে অপরাধ বলে মনে করা হতো না, কিংবা প্রকাশ্যেও আসতে পারতো না। উল্লেখ্য, পাকিস্তানের আধা স্বায়ত্তশাসিত এলাকা ২০১৮ সালে পূর্ণাঙ্গভাবে কেন্দ্রীয় সরকারের আওতায় আসে।