আমন্ত্রিত বিদেশি অতিথিদের দেখানো হলো ‘একতাবদ্ধ ও সুখী মিয়ানমার’

মিয়ানমার সরকারের ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ীদের উদ্যোগে জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিত হয় সংখ্যালঘু জাতিগোষ্ঠীগুলোর এক বিশেষ উৎসব। গত ২৯ জানুয়ারি সমাপ্ত হওয়া উৎসবে ছিল বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর নারীদের অংশগ্রহণে আয়োজিত সুন্দরী প্রতিযোগিতাসহ নানা আয়োজন। বর্ণিল পোশাকে সজ্জিত নারীদের উপস্থিতি, ‘সোনালী ভূমিতে স্বাগতমের’ মতো গান ছিল ওই আয়োজনে। এমন সময় জাতিগত সম্প্রীতির এই চিত্র দেখানো হলো যখন মিয়ানমার জুড়ে বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠী নিপীড়িত বৈধতা পেয়ে যাচ্ছে সেনা-বেসামরিক ডি-ফ্যাক্টো ক্ষমতার অধীনে।

nonameএএফপির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অংশগ্রহণকারীদের কেউ কেউ যখন গোষ্ঠীর সবাইকে ঐতিহ্যবাহী নাচের মাধ্যমে একতাবদ্ধ রাখার আনুষ্ঠানিকতা পালন করেছেন, তখন মিয়ানমার সেনাবাহিনীর নিপীড়নের শিকার হয়ে চলেছে রাখাইনসহ দেশটির অন্যান্য স্থানের বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর মানুষ। ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট রাখাইনের কয়েকটি নিরাপত্তা চৌকিতে হামলার পর পূর্ব-পরিকল্পিত ও কাঠামোবদ্ধ সহিংসতা জোরালো করে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। সন্ত্রাসবিরোধী শুদ্ধি অভিযানের নামে শুরু হয় নিধনযজ্ঞ। হত্যা-ধর্ষণসহ বিভিন্ন ধারার মানবতাবিরোধী অপরাধ সংগঠিত করতে থাকে ধারাবাহিকভাবে। এমন বাস্তবতায় নিধনযজ্ঞের বলি হয়ে রাখাইন ছেড়ে বাংলাদেশে পালিয়ে আসতে বাধ্য হয় প্রায় সাড়ে সাত লাখ রোহিঙ্গা। আগে থেকে উপস্থিত রোহিঙ্গাদের নিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের সংখ্যা দাঁড়ায় প্রায় দশ লাখে।

মিয়ানমারে শুধু রোহিঙ্গারাই নির্যাতিত হয়নি। নির্যাতিত হয়েছে অপরাপর জাতিগোষ্ঠীর মানুষও। পুরো দেশে প্রায় আড়াই লাখ মানুষ রয়েছে যারা সহিংসতার কারণে নিজেদের ঘর-বাড়িতে ফিরতে পারছে না। মিয়ানমারের উত্তর অঞ্চল থেকে অনুষ্ঠানে যাওয়া ৫৯ বছর বয়সী লুপা এএফপিকে বলেছেন, ‘আমরা উৎসবে এসেছি। তবে কাচিনে লাখেরও বেশি মানুষ এখনও ঘরছাড়া। তাদের জন্য আমরা দুঃখবোধ করছি।’ উৎসবে একটি আয়োজন ছিল ওয়াদের। তারা মিয়ানমারের পূর্ব দিককার পাহাড়ে বসবাস করে। খুব গোপন হিসেবে চিহ্নিত গোষ্ঠীটির সশস্ত্র সংগঠনকে মিয়ানমারের সবচেয়ে বড় সশস্ত্র গোষ্ঠী মনে করা হয়। ওয়া রাজ্য থেকে উৎসবে যোগ দেওয়া আই মং ক্যাম্পফায়ারের বিষয়ে বলেছেন, ‘ঐতিহ্যগতভাবে গ্রামের সবাই জড়ো হয় ক্যাম্পফায়ার ঘিরে।’

noname

এএফপি লিখেছে, ক্যাম্পফায়ারের চারপাশে সবাই হাতে হাত ধরে গোল হয়ে ঘুরে ঘুরে নাচছিলেন। হাতে ধরে টেনে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল আমন্ত্রিত দেশি-বিদেশি অতিথিদের। সেখানে সবার সামনে ধরা ছিল একটি মহিষের মাথার খুলিও। এই প্রাণিটাকে পরিবারের সদস্যই মনে করা হয়। এমন উৎসবের মাধ্যমে নৃত্য-গীতে চঞ্চল, সুখী ও একতাবদ্ধ যে মিয়ানমারের ছবি তুলে ধরতে চাচ্ছে দেশটির সরকার, ‘জাতিগত নিধনযজ্ঞ’ ও ‘গণহত্যার’ শিকার হওয়া রোহিঙ্গাদের বাস্তবতা মেলে না সেই ছবির সঙ্গে।