বিরোধীদলীয় নেতা জুয়ান গুইদোকে অন্তর্বর্তী প্রেসিডেন্ট হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করেছে ভেনেজুয়েলা। যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানরত কূটনীতিকদের আগামী ৭২ ঘণ্টার মধ্যে দেশত্যাগের নির্দেশ দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরো। তবে যুক্তরাষ্ট্র বলেছে, ‘সাবেক প্রেসিডেন্টের’ সেই কর্তৃত্ব নেই। ভেনেজুয়েলার সেনাবাহিনীকে অন্তর্বর্তী প্রেসিডেন্টকে সহায়তার আহ্বান জানিয়েছে তারা। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি জানিয়েছে, এখন পর্যন্ত মাদুরো সরকারের প্রতিই অনুগত রয়েছে সেনাবাহিনী।
অর্থনৈতিক সংকটে ভুগতে থাকা ভেনেজুয়েলায় মাদুরোবিরোধী বিক্ষোভের মধ্যে বুধবার নিজেকে অন্তর্বর্তী প্রেসিডেন্ট হিসেবে ঘোষণা করেন জুয়ান গুইদো। এর কয়েক মিনিটের মাথায় স্বীকৃতি দিয়ে অন্য দেশগুলোকেও তা করার আহ্বান জানায় যুক্তরাষ্ট্র।
হুগো চ্যাভেজের মৃত্যুর পর ২০১৩ সালে ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট হন নিকোলাস মাদুরো। চলতি মাসে দ্বিতীয় মেয়াদের মতো শপথ নিয়েছেন তিনি। তবে তার অধীনে মারাত্মক অর্থনৈতিক সংকটে ভুগছে ভেনেজুয়েলা। উচ্চ মুদ্রাস্ফীতি, বিদ্যুৎ বিপর্যয় এবং মৌলিক পণ্য সংকটের কারণে ভেনেজুয়েলার লাখ লাখ নাগরিক দেশ ছাড়ছে। গত বছর মে মাসে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে মাদুরো জয়লাভ করলেও বিরোধীরা বর্জন করেছিল সেই নির্বাচন। নির্বাচনে ভোট জালিয়াতিরও অভিযোগ রয়েছে। মাদুরো এবং তার সমর্থকরা মনে করেন, ভেনেজুয়েলার সংকট সৃষ্টি হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার কারণে। ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলির এক জরিপে দেখা গেছে, ২০১৮ সালের নভেম্বর পর্যন্ত আগের ১২ মাসে দেশটির মূল্যস্ফীতির পরিমাণ দাঁড়ায় ১৩ লাখ শতাংশ।
বুধবার ভেনেজুয়েলার ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলির স্পিকার জুয়ান গুইদোর সমর্থনে রাজধানী কারাকাসের এক সমাবেশে যোগ দেয় ভেনেজুয়েলার লাখ লাখ মানুষ। সেই সমাবেশে তিনি ‘ভেনেজুয়েলা স্বাধীন না হওয়া পর্যন্ত’ বিক্ষোভ চলার ঘোষণা দিয়ে নিজের ডান হাত তুলে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নেওয়ার ঘোষণা দেন। তিনি নিজেকে অন্তর্বর্তী প্রেসিডেন্ট দাবি করে একটি অবাধ নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রতিশ্রুতি দেন। সেনাবাহিনীকে সরকারের নির্দেশ অমান্য করার আহ্বানও জানান তিনি।
গুইদোর ঘোষণার কয়েক মিনিটের মাথায় তাকে ‘স্বীকৃতি’ দেওয়ার ঘোষণা দেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এক বিবৃতিতে তিনি মাদুরোর নেতৃত্বকে অবৈধ আখ্যা দিয়ে বলেন, ভেনেজুয়েলার মানুষ সাহসের সঙ্গে মাদুরো এবং তার শাসনের বিরুদ্ধে কথা বলে উঠে স্বাধীনতা ও আইনের শাসনের দাবি তুলেছে। ভেনেজুয়েলার সাধারণ মানুষদের নিরাপত্তাকে হুমকির মুখে না ফেলার বিষয়ে মাদুরোকে সতর্ক করে দিয়ে বিবৃতিতে আরও কঠোর নিষেধাজ্ঞার হুমকি দেওয়া হয়েছে। ভেনেজুয়েলায় সামরিক হস্তক্ষেপের কথা ভাবা হচ্ছে না জানিয়ে সাংবাদিকদের ট্রাম্প বলেছেন, সব পথই খোলা আছে। অন্য দেশগুলোকেও গুইদো সমর্থন দেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
ট্রাম্পের স্বীকৃতির পর তাকে অনুসরণ করে গুইদোকে স্বীকৃতি দিয়েছে লাতিন আমেরিকার সাতটি দেশ ব্রাজিল, কলম্বিয়া, চিলি, পেরু, ইকুয়েডর, আর্জেন্টিনা ও প্যারাগুয়ে। কানাডাও তাকে সমর্থন দিয়েছে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন দেশটিতে নতুন নির্বাচনের আহ্বান জানিয়েছে।
তবে মাদুরোর প্রতি সমর্থন ধরে রেখেছে মেক্সিকো, বলিভিয়া এবং কিউবা। ভেনেজুয়েলার ‘ক্ষমতা পরিবর্তন করতে চাওয়া’ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কঠোর সমালোচনা করেছে রাশিয়া। যুক্তরাষ্ট্রকে সতর্ক করে দিয়ে দেশটি বলেছে, কোনও ধরনের সামরিক হস্তক্ষেপের পরিণাম ভয়াবহ হতে পারে। তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়্যেব এরদোয়ান এক টুইট বার্তায় লিখেছেন, আমার ভাই মাদুরো। দৃঢ়তার সঙ্গে দাঁড়াও, আমরা তোমার পাশে আছি’।
মাদুরো অভিযোগ তুলেছেন, দূর থেকে ভেনেজুয়েলা শাসনের চেষ্টা করছে যুক্তরাষ্ট্র আর বিরোধীরা একটি অভ্যুত্থানের চেষ্টায় আছে। কারাকাসের প্রেসিডেন্ট প্রাসাদে জড়ো হওয়া সমর্থকদের উদ্দেশে দেওয়া এক ভাষণে মাদুরো বলেছেন, ‘আমাদের ক্ষতি করতে চাওয়া প্রচুর প্ররোচক থাকলেও আমাদের গৌরব রয়েছে। সে কারণে তাদের অবজ্ঞা করা যাবে।