একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থীকে গ্রেফতারের সূত্র ধরে অভিযোগের কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে আছেন দেশের তিন অভিনেত্রী তানজিন তিশা, মুমতাহিনা টয়া ও সাফা কবির এবং ভারতীয় কণ্ঠশিল্পী সুনিধি নায়েক। সুনিধি বাংলাদেশের সংগীতশিল্পী সায়ান চৌধুরী অর্ণবের স্ত্রী।
বৃহস্পতিবার (১৯ ডিসেম্বর) সকাল থেকে এই পরিচিত শিল্পীদের নিয়ে চলছে ফেসবুক ও মিডিয়া ট্রায়াল।
একটি দৈনিকে প্রকাশিত খবরের সূত্র ধরে জানা গেছে, এই শিল্পীরা নাকি নিয়মিত মাদকের অর্ডার করতেন একটি হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরে। যা জানা গেছে গ্রেফতার হওয়া অরিন্দম রায় দীপের ফোন থেকে। অভিযোগ, এই তারকারা সিসা, এমডিএমএ, এলএসডি, কুসসহ বেশ কিছু মাদক গ্রহণ করেন নিয়মিত। মাদকের সঙ্গে সম্পৃক্ততা ঘিরে বিশেষ অনুসন্ধান চালাচ্ছে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর (নারকোটিক্স)। ইতোমধ্যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উচ্চ পর্যায়ে এ বিষয়ে প্রতিবেদনও পাঠানো হয়েছে।
ঘটনা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা নারকোটিক্সের সহকারী পরিচালক রাহুল সেন একটি গণমাধ্যমকে বলেন, ‘দীপকে গ্রেফতারের পর তার কাছ থেকে আমরা কয়েকজন প্রথম সারির অভিনেত্রী ও মডেলের মাদক সম্পৃক্ততার প্রমাণ পেয়েছি। এ বিষয়ে এখনও তদন্ত চলছে। তদন্ত শেষে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
এমন মন্তব্য আর প্রতিবেদনের তথ্য ধরে দিনভর চলছে শিল্পীদের নিয়ে ট্রায়াল। বিষয়টি নিয়ে শিল্পীদের আত্মপক্ষ সমর্থন কিংবা প্রতিক্রিয়া পাওয়া যাচ্ছিল না। বিপরীতে তাদের কোনও প্রতিক্রিয়া বা মন্তব্য ছাড়াই দেশের বেশির ভাগ গণমাধ্যম, সোশ্যাল মিডিয়া ও ইউটিউবে রমরমিয়ে প্রকাশ হচ্ছে খবরটি।
টয়া অনুরোধের সুরে বলেন, ‘নিশ্চিত না হয়ে, মিডিয়া ট্রায়াল করবেন না প্লিজ। একটা বিচারাধীন বিষয়ে আমি যে আগ বাড়িয়ে কথা বলবো, সেই সুযোগও নেই। কারণ আমি জানিই না আসলে ঘটনাটা কী ঘটেছে।’
এই বলে তিনি এ বিষয়ে আর কোনও মন্তব্য করতে অপারগতা প্রকাশ করেন।
খবরে প্রকাশ, অরিন্দম রায় দীপ নামের ওই ব্যক্তিকে মাদক সম্পৃক্ততার অভিযোগে গত ১৭ অক্টোবর ঢাকা বিমানবন্দরে গ্রেফতার করা হয়। মাদকসহ গ্রেফতার হওয়া দীপকে জিজ্ঞাসাবাদের সূত্র ধরে বেরিয়ে আসে সাফা, টয়া, তিশা ও সুনিধির নাম। রয়েছে তথ্য-প্রমাণাদি।
নারকোটিক্স বলছে, মাদক সম্পৃক্ততার অভিযোগে আগে থেকেই দীপের ওপর বিশেষ নজরদারি করা হয়। দীর্ঘদিন ধরে তার গতিবিধি অনুসরণের ধারাবাহিকতায় ১৭ অক্টোবর ঢাকা বিমানবন্দরে গ্রেফতার হন দীপ। এ সময় তার কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ সিসা, এমডিএমএ, এলএসডি ও কুসসহ বেশ কিছু মাদক উদ্ধার করা হয়। পরে নারকোটিক্সের একটি বিশেষায়িত টিম দীপকে ২ দিনের রিমান্ডে রেখে জিজ্ঞাসাবাদ করে।
তদন্ত সংশ্লিষ্টরা জানান, মাদক ব্যবসার বিষয়ে মৌখিক স্বীকারোক্তির একপর্যায়ে দীপের মোবাইল ফোনের কললিস্ট ও হোয়াটসঅ্যাপ চ্যাটিং পরীক্ষা করা হয়। এতে জনপ্রিয় কয়েকজন অভিনেত্রীর মাদক সম্পৃক্ততার তথ্য মেলে। এমনকি তাদের পক্ষ থেকে দেওয়া মাদকের অর্ডার সংক্রান্ত কয়েকটি সুনির্দিষ্ট হোয়াটসঅ্যাপ চ্যাটিং রেকর্ডও পাওয়া যায়।
এরপর দীপ লেখেন কীভাবে নিবা? যাওয়ার পথে? সাফা লেখেন ‘আমি চেষ্টা করব।’ এছাড়া ৫ সেপ্টেম্বর আরেক চ্যাটিংয়ে মাদকের অর্ডার দেন অভিনেত্রী টয়া। তিনিও সাংকেতিক ভাষায় লেখেন ‘ই’ লাগবে ৫টা। ফিরতি বার্তায় দীপ লেখেন ‘ফর বাংলা ফ্রুট?’ (সম্প্রতি কক্সবাজারে অনুষ্ঠিত প্রাইভেট পার্টি)। এরপর টয়া লেখেন ‘ইয়াপ (ইয়েস)।’
সূত্র জানায়, বর্তমানে রাজধানীর গুলশান এবং বনানীকেন্দ্রিক ধনাঢ্য পরিবারের সন্তানদের অনেকেই এমডিএম, এলএসডি এবং কুশ নামের উচ্চ আসক্তিসম্পন্ন মাদকের দিকে ঝুঁকছে। চোরাইপথে অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও থাইল্যান্ডসহ আরও বেশ কয়েকটি দেশ থেকে এসব মাদকের চালান আসছে। স্ন্যাপচ্যাট, মেসেঞ্জার বা হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে এগুলো বিক্রি করা হয়। গোপনীয়তার জন্য বিভিন্ন সাংকেতিক নামে এসব মাদক বিক্রি করা হয়ে থাকে। যেমন এমডিএম ‘ই’ নামে, এলএসডি ‘এসিড’ এবং এক ধরনের তরল গাঁজা ‘টিএসসি’ নামে কেনাবেচা হয়। ইলেকট্রিক সিগারেটের মতো ভেপ আকারে এই তরল গাঁজা সেবন করা হয়।