শুভ জন্মদিন

‘এটাই আমার স্ট্যান্ড’, কোনটা?

জীবনের ৪০টি অক্টোবর পেরিয়েও অভিনেত্রী আজমেরী হক বলছেন, এটা শুরু মাত্র! বলা দরকার, ১৯৮৩ সালের এই দিনে (২৮ অক্টোবর) ঢাকায় জন্মগ্রহণ করেন তিনি। সে হিসেবে জন্মের ৪১তম বছরে পা দিলেন এই নেত্রী।

নেত্রী বলাটাই উত্তম। কারণ, জুলাই বিপ্লবে শিল্পী কোটায় রাজপথে তারচেয়ে অগ্রপথিক কেউ ছিলেন না। শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত তিনি মাঠে ছিলেন এবং সংগঠক হিসেবে কাজ করেছে নিরলস। বিপ্লবের সফলতা নিশ্চিত করেই যেন ঘরে ফিরেছেন বাঁধন। এরমধ্যে দুই মাস অতিক্রম হলো। সরকার গঠন থেকে শুরু করে রাষ্ট্রীয় কাঠামোর প্রায় সবগুলো শাখাতেও এসেছে পুনর্গঠন। যেখানে দেখা মিলেছে বিপ্লবের সঙ্গে জড়িত কিংবা নিরাপদে থেকে সমর্থন দেওয়া অনেক মুখ। এরমধ্যে অনেক বিপ্লবী প্রস্তাবও ফিরিয়েছেন। শুধু উল্লেখ করার মতো এই পুনর্গঠনে অনুপস্থিত একমাত্র আজমেরী হক বাঁধনের নাম!

আজমেরী হক বাঁধনতাই নয়, গত দেড় মাসে বাঁধন যেন গুটিয়ে নিয়েছেন নিজেকে। না অভিনয়ে, না বিপ্লবে, না দেশের বাইরে, না নতুন কোনও খবরে। তবে কি বিপ্লব শেষে অভিমান বাসা বেঁধেছে বাঁধনের মনে? তবে কি বঞ্চিত হয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের তরফে? কারণ, গুঞ্জন ছিলো বিপ্লবের দিনগুলোতে বাঁধন যা করেছেন প্রকাশ্যে, তাতে তিনি দারুণভাবে পুরস্কৃত হবেন রাষ্ট্রীয় কাঠামোতে।

ঠিক এই প্রসঙ্গ তুলতেই বাঁধন বাংলা ট্রিবিউনকে বললেন, ‘দেখুন কিছু পাবো, সেই আশায় আমি কখনও কিছু করিনি। যা করি বা করেছি, সেটা মনের টানে, ন্যায় বিচারের দাবিতে, দেশের ও মানুষের কথা ভেবে। আরেকটা বিষয় লক্ষ্য করবেন, আমি কখনোই কোনও কাঠামোতে ঢুকি না। সেটা সংগঠন হোক কিংবা রাষ্ট্র। বলতে পারেন, এটাই আমার স্ট্যান্ড।’

আজমেরী হক বাঁধনবাঁধন নিজের অবস্থান পরিষ্কার করেছেন। তিনি স্বাধীন রাখতে চান নিজেকে। তার মতে, স্বাধীনতার চেয়ে সুন্দর ও সুবিধা আর কিছুতেই নেই।

কিন্তু বিপ্লব শেষে রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব না নিলেও কাজে তো ফেরা জরুরি ‘রেহানা মরিয়ম নূর’র। কান পেরিয়ে বলিউডের ‘খুফিয়া’ কিংবা ওটিটি-তে ‌‘রবীন্দ্রনাথ এখানে কখনও খেতে আসেননি’, ‘গুটি’—এমন সব বৈচিত্র্যময় চলচ্চিত্র-সিরিজের মাধ্যমে দেশ ছাড়িয়ে বিশ্বমানচিত্রের পথেই হাঁটছিলেন মেধাবী বাঁধন। এরপর জুলাই বিপ্লবে সেই গতি স্থবির হলো। বিপ্লব শেষে কি তবে ভালো কাজের সংকটে ভুগছেন নেত্রী!

আজমেরী হক বাঁধনজন্মদিনেই সন্দেহটির কড়া জবাব দিলেন বাঁধন। বললেন, ‘‘খেয়াল করবেন, আমি যখন চুপচাপ থাকি, তার পরই দারুণ কিছু ঘটে। আমি শুরু থেকে যে নিয়মিত কাজ করে আসছি তা নয়। বরাবরই চুপচাপ থেকে নতুন কিছু নিয়ে সামনে আসি। ফলে আমার নীরবতা মানে নতুন কিছু রান্না হচ্ছে! যেমনটা শেষ এসেছিলো ‘রেহানা মরিয়ম নূর’। মনে আছে, এই ছবিটির খবর প্রকাশ্যে আসার আগে, আমার চারপাশের সবাই খুব বিরক্ত হচ্ছিলেন, কেন আমি কিছু করছি না। অথবা আমি আসলে কী করতে চাই-সেই প্রশ্নটাও করেছেন সবাই। এরপর রেহানার খবরে সবাই তো চমকে উঠলেন। এবারও নিশ্চয়ই তেমন কিছু ঘটবে।’’

বিপ্লবের দিনগুলোতেএটুকুও যুক্ত করলেন সচেতনভাবে, ‘তাছাড়া অনেক গল্প শেষে হুটহাট চুপসে যাওয়ার বাতিক আছে আমার!’

এদিকে বিশেষ এই দিনে অভিনেত্রী যখন সোশ্যাল হ্যান্ডেলে শুভেচ্ছাবার্তায় ভাসছিলেন, তখনই একটি প্রতিক্রিয়া জানালেন। লিখলেন, ‘এটা আমার ৪১তম জন্মদিন! কী বিস্ময়কর এক ভ্রমণ ছিল! তবে সবসময় সেটি মসৃণ ও শান্তিপূর্ণ ছিল না; বেশিরভাগই উৎকণ্ঠা আর বন্ধুর ছিল। কখনও জিতেছি, ব্যর্থ হয়েছি, কেঁদেছি, হেসেছি, সংগ্রাম করেছি, অর্জন করেছি এবং জীবনের ৪০ বছর শেষে এই বাঁধনই আছি! আমি সত্যিই বিশ্বাস করি এটা জীবনের শুরু মাত্র! নিজেকে নিয়ে আমি বেশ গর্বিত এবং আমি আমার মতোই থাকবো সবসময়।’

বিজয়ের দিনটিতে বাঁধনবলা দরকার, ১৯৮৩ সালের ২৮ অক্টোবর ঢাকায় জন্মগ্রহণ করেন বাঁধন। যদিও বাবার চাকরির সুবাদে রাজবাড়ী, ভোলাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় বেড়ে উঠেছেন তিনি।

এদিকে, চলতি বছরের শুরুর দিকে শোনা গিয়েছিল টলিউড নির্মাতা প্রসেনজিৎ বিশ্বাসের অ্যান্থোলজি ফিল্ম ‘ফেয়ার অ্যান্ড আগলি’র একটি গল্পে অভিনয়ের প্রস্তাব পেয়েছেন বাঁধন। তবে কি নীরবতা শেষে এই সিনেমার চমক নিয়েই সামনে দাঁড়াবেন বিপ্লবী বাঁধন!অভিনয়ে আজমেরী হক বাঁধন