‘যে যত বেয়াড়া সে তত স্মার্ট এই শহরে’

কিংবদন্তি অভিনেতা-নির্মাতা আফজাল হোসেন বরাবরই অসাধারণ লেখেন। সোশ্যাল হ্যান্ডেলে প্রায়শই মানুষ, দেশ ও রাজনীতি নিয়ে নিজের প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন। সাম্প্রতিক সময়ে বেশ চর্চিত হচ্ছে শহরে যানজটের বিষয়টি। মঙ্গলবার (৮ অক্টোবর) এই বিষয়টি টেনে আফজাল হোসেন অনেকটা ক্ষোভ প্রকাশ করেই বলেন, ‘যে যত বেয়াড়া, সে তত স্মার্ট এই শহরে’!

কথাটির ব্যাখ্যাও দিলেন। বললেন, ‘কিছু দিন আগে যখন ছাত্রছাত্রীরা রাস্তায় নেমে যানবাহন চলাচল নিয়ন্ত্রণ করছিল, সে সময়টাতে একদিন অফিসে দাঁড়িয়ে তিনতলা থেকে সে নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম অবাক হয়ে দেখছিলাম। দেখছিলাম- আমাদের অনিয়মের শহর ছুঁ মন্তরে নিয়ম মেনে চলতে পারে। মানুষ ও বিভিন্ন ধরনের যানবাহন এই শহরের রাস্তায় কীভাবে চলাচল করে তা সকলেরই জানা। নিয়ম মানা কারও ধাতে নেই। দীর্ঘকাল ধরে অনিয়ম করতে করতে স্বাভাবিক চরিত্র হয়ে দাঁড়িয়েছে নিয়ম না মানা। যে যত বেয়াড়া সে তত স্মার্ট এই শহরে।’

আফজাল হোসেন মনে করেন, এই শহরের মানুষগুলো রাস্তায় চলাচলের যত নিয়ম আছে, কেউই সেটা মানতে পছন্দ করে না। আবারও ছাত্রদের সড়ক নিয়ন্ত্রণের প্রসঙ্গ টেনে আফজাল হোসেন বলেন, ‘সেদিন দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখছিলাম, চাইলেই সব পারা যায়। মনের কথাটা ভেসে ওঠে- বাঙালি শক্তের ভক্ত নরমের যম। যে মানুষ যত উল্টোপাল্টা সমস্ত শহরজুড়ে বীরদর্পে ছুটে চলুক, একই মানুষ ক্যান্টনমেন্টের মধ্যে চলাচলের সময় চিরকালের ভদ্রলোকের মতো কড়ায়-গণ্ডায় নিয়ম মানে। সেদিন ওপর থেকে দেখছিলাম, কেউ এগোনোর জন্য একটু অনিয়ম করতে চেয়ে গাড়ির মাথাটা লাইন থেকে অল্প বের করে দিতে চেয়ে যেই দেখেছে, সামনে একটু দূরে কোনও ছাত্রকে দেখা যাচ্ছে- সাথে সাথে গাড়ি জায়গামতো ফিরিয়ে নিয়ে খুব ভালো মানুষ হয়ে যাচ্ছে।’

একটা সময় ছাত্ররা ক্লাসে ফিরলো। সড়ক আবার ট্রাফিক পুলিশের হাতে। আফজাল হোসেনের মতে, ‘পথচলা স্বাধীন করে দেয়া হলো। আবার শহর ও মানুষ নিজের চলা, বলা ফেরত পেয়ে গেলো। সবাই চলছে নিজের ইচ্ছামতো, বলছেও যার যার যেমন ইচ্ছা- তেমন করে।’

‘যাপিত জীবন’ সিনেমায় আফজাল হোসেন/ ছবি: মাহমুদ মানজুরচলার বিষয় থেকে বলা প্রসঙ্গেও বিরক্ত প্রকাশ করলেন আফজাল হোসেন। তার মতে, বলার স্বাধীনতা পেয়ে আমরা সবাই লাগামছাড়া কথা বলে যাচ্ছি এখন। তার ভাষায়, ‘একসময় সবাইকে কথা হিসাব করে বলতে হয়েছে। এখন যার যেমন খুশি বলা যায় বলে লাগামছাড়া কথা বলাবলি হচ্ছে। যখন বলার দরকার- বলা হয়নি, বলা যায়নি। বিড়াল হয়ে কাটানো জীবনে হঠাৎ বাঘ হয়ে দেখানোর সুযোগ মিলেছে। এখন মানুষ নিশ্চিত- নিজের গলায় বাঘের গর্জন দিলে কারও চোখ রাঙানি দেখতে হবে না বা ঘাড় চেপে ধরতে আসবে না কেউ। আমাদের সভ্যতার ভব্যতার সীমা জানা নেই। অপমানজনক আচরণ, কথা বলায় আমাদের দক্ষতা সর্বজনবিদিত। এখন যেন বুক ফুলিয়ে অনুচিত কাণ্ড করা যায়। যেমন খুশি বলে ও করে মর্যাদা বৃদ্ধির সুবর্ণ সুযোগ এসেছে।’

একটি টিভি সংবাদের তথ্য টেনে এই অভিনেতা বলেন, ‘গতকাল দেখতে পেলাম অসম্মান করে কথা বলা মানুষ টেলিভিশন চ্যানেলে খবর হয়েছে। বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে তাকে পর্দায় হাজির করা হলো। টেলিফোনে দায়িত্বশীল, দেশপ্রেমিক দাবি করা মানুষটাকে বলতে শোনা গেলো- সে উচিত কাজই করেছে, কোনও অন্যায় করেনি। দিনে দিনে নিশ্চয়ই আরও উন্নতি হবে। ইচ্ছামতো নুন মরিচ দিয়ে স্বাধীনতা চটকে আমরা অনেকেই বিচিত্র পদের ভর্তা বানিয়ে খেতে পারবো। স্বাধীনতার ভর্তা বানানোর নানা রকম রেসিপি আগ্রহ নিয়ে মুখস্থ করার মানুষ দেশে বহু আছে। সেই বহুর জন্য রেসিপি বাজারজাত করে জনপ্রিয় হতে উৎসাহী মানুষ, প্রতিষ্ঠানও কম নেই।’

বলা দরকার, লম্বা বিরতির পর দেশভাগ ও ভাষা আন্দোলনের প্রেক্ষাপট নিয়ে ২০২২ সালে নির্মিত হয়েছে ‘যাপিত জীবন’। যার প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেছেন আফজাল হোসেন। ছবিটি নির্মাণ করছেন হাবিবুল ইসলাম হাবিব। ছবিটি মুক্তির মিছিলে রয়েছে।