দেশ যখন রাজনৈতিক অস্থিরতায় প্রায় লন্ডভন্ড, ঈদ ব্লকবাস্টার ‘তুফান’র জোরটাও কমে এলো তখনই। এর মধ্যেই বৈষম্যবিরোধী পতাকাতলে জন্ম হলো নতুন এক বাংলাদেশ। একই সময়ে ‘তুফান’কে হল থেকে নামিয়ে ওটিটি প্ল্যাটফর্মে তুলে দিয়ে নতুন চরিত্র সৃষ্টির নীল নকশা এঁকে নিলেন ঢালিউডের আশ্চর্য প্রদীপ রায়হান রাফী।
সিনেপ্রেমীদের মনে শাকিব খান তথা ‘তুফান’ চরিত্রের দ্বিতীয় কিস্তির জন্য প্রচণ্ড ক্ষুধা এখন। খান-সেনাদের মন সারাক্ষণ উচাটন, নির্মাতা রাফী কখন দেবেন দ্বিতীয় কিস্তির শুটিং-বার্তা। না। সেদিকে হাঁটছেনই না এই নির্মাতা। বরং ভক্তদের তীক্ষ্ণ দৃষ্টি সরাতে ৩০ সেপ্টেম্বর ওটিটি মাধ্যমে ছড়ালেন সিনেমা ‘মায়া’, ৪ অক্টোবর শোনাবেন ‘ব্ল্যাক মানি’ সিরিজের গল্প। যেন শাকিব অনুসারীদের ঘুম পাড়ানোর জন্য ‘আয় আয় চাঁদ মামা’ আওড়াচ্ছেন নির্মাতা!
অবশেষে ১ অক্টোবর রাতে ডিমের খোলস ভাঙলেন রায়হান রাফী। বাংলা ট্রিবিউনকে জানালেন মূল খবর। বললেন তার লক্ষ্যের কথা। যে লক্ষ্যের গভীরতা যেমন অতলে, দৈর্ঘ্যেও প্রায় সীমাহীন। তার এই স্বপ্নিল জার্নিতে সঙ্গে রেখেছেন ‘তুফান’ এবং ‘লায়ন’। তার আগে জেনে নেওয়া যাক, ‘লায়ন’ গুঞ্জন প্রসঙ্গে।
ঢালিউডের রাজ মানে? শাকিব খান নয়তো! তবে কি ‘তুফান’ আর ‘লায়ন’-এ মহাযুদ্ধ হবে দুই বাংলার পর্দায়? জবাবে মৃদু হাসলেন রাফী। জানালেন, ‘‘যুদ্ধ হবে। তবে এখনই নয়। রাজ হয়ে উঠতে শরিফুল রাজকে আরেকটু সময় দিতে হবে। ‘লায়ন’ সেই সময়ের অনেকটাজুড়ে থাকছে। রাজকে নিয়ে ‘পরাণ’ ও ‘দামাল’ করার পর আমি লম্বা সময় নিয়েছি। চেয়েছি ওকে নিয়ে একটা তুমুল অ্যাকশন ছবি বানানোর। ‘লায়ন’ সেই ছবিটি। এখানে জিৎ ও রাজ পাল্লা দিয়ে কাজ করবে।’’
রাফী নিশ্চিত করেন, ‘লায়ন’ নায়ক-ভিলেনের ছবি নয়। এখানে জিৎ-রাজ দুজনেই সমান্তরাল নায়করূপে থাকছেন। নির্মাতা আরও জানান, দুই নায়ক দুই ইন্ডাস্ট্রির হলেও নায়িকারা থাকছেন ঢালিউড থেকে। সেটিও শিগগিরই জানান দেবে নির্মাণ পক্ষ। কারণ, ডিসেম্বরে ‘লায়ন’ নামছে শুটিং মাঠে, যা চূড়ান্ত।
ছবিটির প্রযোজনায় ভারত থেকে থাকছে স্যাডো ফিল্মস। বাংলাদেশ থেকে থাকছে আরও দুটি প্রোডাকশন হাউজ। সেই মোতাবেক এই ছবির বাজেট ছাড়াবে ‘তুফান’কেও।
‘লায়ন’ নিয়ে রায়হান রাফীর এই অ্যাডভেঞ্চারের গল্প শাকিব ভক্তদের জন্য মোটেও স্বস্তিকর নয়। কারণ প্রচলিত রয়েছে নির্মাতা হিসেবে তার চূড়ান্ত মজবুত ভিত্তিটা গড়েছেন শাকিব খানই। একই প্রবাদ রয়েছে নির্মাতার তরফেও! কথা ছিল, রোজার ঈদকে লক্ষ্য করে দ্রুত সময়ের মধ্যে হবে ‘তুফান ২’-এর শুটিং। তাছাড়া, শেষ দৃশ্যে বেঁচে যাওয়া ‘তুফান’-এর পরের অধ্যায়টি জানারও তুমুল কৌতূহল তৈরি করেছেন রাফী। এমন পরিস্থিতিতে ‘লায়ন’-এর গল্প কতোটা স্বস্তিকর? তবে কি ‘তুফান’ অধ্যায়ের ইতি টেনেছেন?
কিন্তু এই মন্তব্যে শেষ ব্লকবাস্টার ‘তুফান’ কিংবা ঢাকার শাকিব খান কোথায়? সোজা ভাষায় ‘তুফান ২’ আসবে কবে? হবে তো! এবার আশ্বস্ত করলেন রায়হান রাফী। বললেন আরও ভেতরের কথা, ‘‘যদি বলি লায়ন চরিত্রটি সৃষ্টি করছি তুফানের জন্য, তাহলে ভুল বলা হবে না। আগেই বলেছি, আমার পরিকল্পনাটা এখন আর লোকালে নেই, পুরোটাই গ্লোবাল। তুফান চরিত্রটি এর মধ্যে দাঁড়ালো। এবার ‘লায়ন’ সৃষ্টির চেষ্টা করছি। এরপর আবার তুফান, এরপর আবার লায়ন। এভাবে এগোতে থাকবো। আমার লক্ষ্য তুফান ও লায়ন- এই দুটো চরিত্রকে একটা সময়ে গিয়ে একই সিনেমায় মুখোমুখি বা পাশাপাশি দাঁড় করিয়ে দেওয়া। এর জন্য দুটো চরিত্রকেই গ্লোবাল ও ফ্র্যাঞ্চাইজি ফরমেটে দাঁড় করাতে হবে। দম থাকলে আমি সেই চেষ্টা অব্যাহত রাখবো। সে জন্যই বলছি, ‘তুফান ২’ ‘লায়ন’ মুক্তির আগে নয়, পরে। এই দুটো চরিত্র আমি টানতে চাই বহুদূর। যতদূর আমি এখনও দেখতে পাই না ঠিক।’’
এর আগে সিনেমা বানিয়েছেন ‘পোড়ামন ২’, ‘দহন’, ‘পরাণ’, ‘দামাল’, ‘সুড়ঙ্গ’ ও ‘তুফান’। প্রশংসিত ‘দামাল’ ছাড়া বাকি সবগুলো ছবি সুপারহিট। এর ফাঁকে ওটিটি কনটেন্ট বানিয়েও সমান করতালি পেয়েছেন রাফী। যে তালিকায় রয়েছে ‘ফ্রাইডে’, ‘নিঃশ্বাস’, ‘৭ নম্বর ফ্লোর’, ‘টান’. ‘খাঁচার ভেতর অচিন পাখি’, ‘দ্য ডার্ক সাইড অব ঢাকা’, ‘জানোয়ার’, ‘মায়া’ প্রভৃতি।
এসবের আগে এই নির্মাতার তালিকায় রয়েছে বেশ ক’টি স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র। সেগুলোও প্রশংসিত। নামগুলো উহ্যই থাক আপাতত।