শব্দ, লাইন, দাড়ি, কমা এবং ভুল। হুবহু একই হ্যাশট্যাগ। অর্থাৎ কপি পেস্ট পোস্ট। সঙ্গে কমন দুটো ছবি। যা মঙ্গলবার (১৭ সেপ্টেম্বর) সকাল থেকে ঝুলছে অভিনয়শিল্পীদের দেয়ালে দেয়ালে। কিন্তু কেন?
তার জবাবও আছে পোস্টের লেখায়। যেখানে বলা হয়েছে, অভিনয়শিল্পী সংঘের নির্বাহী কমিটির সদস্যরা পদত্যাগ করতে সম্মত হয়েছেন এবং পুনর্গঠনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে।
বলা দরকার, ৫ আগস্টের পর সম্ভবত এই একটি সংগঠনকে ঘিরে চলছে ধারাবাহিক জল্পনা ও প্রতিবাদ। সংঘের সদস্য এবং অ-সদস্যরা মিলে বার বার আলিটিমেটাম দিয়েছেন সংস্কারের লক্ষ্যে। অভিযোগ, সংগঠনটি শিল্পীদের না হয়ে বিগত সরকারের মুখপাত্র হিসেবে কাজ করেছে। যার জলজ্যান্ত প্রমাণ, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময় সংঘের দেয়া দুর্বল বিবৃতি এবং বিপ্লব শেষে ‘আলো আসবেই’ গ্রুপে সংঘের একাধিক সদস্যের উপস্থিতি প্রমাণ।
মূলত এরপরই অভিনয়শিল্পীদের বড় একটি অংশ সংঘের বর্তমান কমিটির পদত্যাগ এবং সংস্কারের দাবি তোলে। বার বার দেওয়া হয় আলটিমেটাম। অবশেষে সেই আহ্বানে সাড়া দিয়েছে বর্তমান কমিটি, তথা সভাপতি আহসান হাবীব নাসিম ও সাধারণ সম্পাদক রওনক হাসান। জানা গেছে, ১৮ সেপ্টেম্বর বিকাল ৪টায় মহাখালীর এসকেএস কনভেনশন সেন্টারে সংঘটি সাধারণ সভার ডাক দিয়েছে। যাতে উপস্থিত থাকতে পারবেন শুধুই সংঘের সদস্যরা।
তবে বিপ্লবীরা শুরু থেকেই বলে আসছিলেন, সদস্যের বাইরের শিল্পীদের সঙ্গেও বসতে হবে সংঘের নেতাদের। যদিও সাংগঠনিক বাধার দাবি করে বরাবরই এই আহ্বান পাতে তোলেননি আহসান হাবিব নাসিমরা।
বলা দরকার, অভিনয়শিল্পী সংঘের বর্তমান কমিটির পদত্যাগ ও সংস্কারের দাবিতে মাঠে রয়েছেন আজমেরী হক বাঁধন, মোস্তাফিজ নূর ইমরান, খায়রুল বাশার, অর্ষাসহ অর্ধ শতাধিক অভিনয়শিল্পী। যাদের অনেকেই আবার সংঘের অ-সদস্য।
এদিকে বুধবারের সাধারণ সভা ঘিরে বিপ্লবী পক্ষ মঙ্গলবার থেকে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন সোশ্যাল হ্যান্ডেলে। শেয়ার করছেন একই লেখা। সঙ্গে দুটো ছবি। যার একটি আছে ১৮ সেপ্টেম্বরের আমন্ত্রণপত্র। আরেকটিতে লেখা ‘ইটস টাইম টু বিল্ড’!
আর কমন যে পোস্ট, সেখানে লেখা রয়েছে- ১৮ই সেপ্টেম্বর আমাদের জন্য একটা আনন্দের দিন হতে যাচ্ছে। এক্সিকিউটিভ কমিটির সবাই নিজেদের ব্যক্তিগত জায়গা থেকে, অনুধাবনের জায়গা থেকে, সংস্কারের জন্য সম্মতি দিয়েছেন বলেই জানি। পদত্যাগের ইচ্ছাও প্রকাশ করেছেন। আশা করি, ১৮ তারিখের সভায় সংস্কার-প্রস্তাবনা গ্রহণের মধ্য দিয়ে, সংগঠনের যৌক্তিক দায়িত্বগুলো অরাজনৈতিকভাবে মেটানোর পথ তৈরি হবে। অভিনয়শিল্পী সংঘ বাংলাদেশ-এর এই আয়োজন সফল করে তুলতে হবে সবাইকে। আপনি সংগঠনের সদস্য হিসেবে অবশ্যই আসবেন। যদি সদস্য না হন, যদি আমার মতো ‘অভিনয়শিল্পী’ পরিচয়ে মাথা উঁচু করে বাঁচার চিন্তা করেন, আপনিও আসুন। ভেতরে না হোক বাইরে থাকুন। এই সংস্কার-যাত্রা আপনার আমার সবার। আপনার উপস্থিতি পুরো আয়োজনকে গতিশীল করবে। অভিনয়শিল্পী সংঘ বাংলাদেশ-এই সময়োচিত আয়োজনের জন্য অভিনন্দন প্রাপ্য। সংস্কার শুরু হোক সম্প্রীতির মধ্য দিয়ে।
এদিকে বিপ্লবীদের এমন প্রতিক্রিয়ার বিপরীতে শুরু থেকেই নিশ্চুপ রয়েছেন সংঘের চলতি নেতারা। যদিও এরমধ্যে বর্তমান কমিটির কেউ কেউ প্রশ্ন তুলছেন এই বলে, তারা বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের পক্ষে ছিলেন। তারা ‘আলো আসবেই’ গ্রুপেও ছিলেন না। আবার সংগঠনের বিবৃতির বিষয়েও তারা অবগত নন। তবুও কেন, গণহারে অভিযুক্তদের সঙ্গে তাদেরও কথা শুনতে হচ্ছে কিংবা গণ-পদত্যাগে যেতে হবে?
এই অভিনেতা আরও বলেন, ‘আলো আসবেই গ্রুপে অভিনয়শিল্পী সংঘের যে সমস্ত প্রতিনিধিকে দেখা গেছে, তা সম্পূর্ণ তাদের ব্যক্তিগত ও রাজনৈতিক মতাদর্শের ভিত্তিতে একটি পরিষ্কার অবস্থান থেকেই গিয়েছে। তার দায় সমগ্র অভিনয়শিল্পী সংঘ নেবে কেন? বা তারা কেন নিতে চাইছে? যদি সংগঠন রাজনীতিকরণ হয়ে থাকে বা কখনও হয়েছে, তাহলে সে দায় কতিপয় অতি উৎসাহী সুবিধাভোগী নির্বাচিত সদস্যের নিজ দায়। তা কিছুতেই সংগঠনের দায় নয়।’
বলা দরকার, চলতি বছরের শুরুতে অভিনয়শিল্পী সংঘের কার্যক্রম পরিচালনা ও শিল্পীদের সাংস্কৃতিক বিকাশের লক্ষ্যে সরকারের পক্ষ থেকে রাজধানীর বুকে একটি জমি বরাদ্দ হয়। যা বর্তমান কমিটির অর্জন বলেই ধরা হয়। ৫ আগস্টের পর সেই জমিটিও বেদখলের খবর মিলেছে। এবার পুরো কমিটিই বিলুপ্তির পথে।