দেশ ডেকেছে, মানা করতে পারিনি: নওশাবা

বাংলাদেশ শিল্পী কল্যাণ ট্রাস্ট-এর সদ্য গঠিত বোর্ডের সদস্য হিসেবে যুক্ত করা হলো অভিনেত্রী ও পাপেটশিল্পী কাজী নওশাবা আহমেদকে। রবিবার (১৫ সেপ্টেম্বর) সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপসচিব আয়েশা সিদ্দিকা এই প্রজ্ঞাপন জারি করেন।

নওশাবার এই অন্তর্ভুক্তিতে স্বস্তি প্রকাশ করছেন বেশিরভাগ মানুষই। কারণ তিনি বিগত সরকারের আমলে তুমুল নিগ্রহের শিকার হয়েছেন। খেটেছেন জেল। সয়েছেন নির্যাতন। হারিয়েছেন কাজ। এমনকি ঠকেছেন শিল্পমাধ্যম থেকেও। সেই শিল্পীকেই এবার রাষ্ট্র বেছে নিলো দেশের সমগ্র শিল্পীর কল্যাণে কাজ করার জন্য!

বিপ্লবের দিনগুলোতে কাজী নওশাবা আহমেদস্বাভাবিক, দায়িত্বটি পেয়ে পুলকিত কাজী নওশাবা। কারণ, তিনি বরাবরই অভিনয় ও পাপেটের বাইরে সুবিধাবঞ্চিত কিংবা দুর্গত মানুষ, শিশু ও শিল্পের জন্য কাজ করে আসছেন। সেই অভিজ্ঞতা এখন রাষ্ট্রীয়ভাবে কাজে লাগাতে পারবেন শিল্প ও শিল্পীদের কল্যাণে।  

বাংলাদেশ শিল্পী কল্যাণ ট্রাস্ট-এর প্রজ্ঞাপন জারি হওয়ার পর বাংলা ট্রিবিউন-এর সঙ্গে একান্ত আলাপে নওশাবা ভাগ করে নেন নিজের প্রতিক্রিয়া। 

নওশাবা বললেন, ‘আমি অনেক ছোট মানুষ। দেশ ডেকেছে, মানা করতে পারিনি। যখনই দেশ ডাকে তখনই মনের কথা শুনি। তারই ফলাফল ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য হওয়া। এখন দায়িত্বটা ঠিকঠাক পালন করতে চাই।’

কাজী নওশাবা আহমেদশিল্পীদের কল্যাণে কাজ করা প্রসঙ্গে নওশাবা বলেন, ‘আগে কাজটা করি, ঠিকঠাক। দোয়া করবেন আমরা যেমন বিচ্ছিন্নভাবে ছিলাম, সেটা যেন কাটাতে পারি। আমরা যাতে এক হয়ে কাজ করতে পারি। এক হলে সবসময় দেশের ভালো হয়েছে। আমি থেকে আমরা হওয়াটা জরুরি। পাশে থাকবেন, পরামর্শ দেবেন, যাতে আমার জায়গা থেকে ঠান্ডামাথায় যতটুকু দায়িত্ব সেটা পালন করতে পারি।’

নওশাবা মনে করেন, দেশের শিল্পীরা যেন বিচ্ছিন্ন না থেকে এক হয়ে উঠতে পারেন। সেটিই হবে দেশ ও শিল্পের জন্য মঙ্গল।

বাংলাদেশ শিল্পী কল্যাণ ট্রাস্ট-এর সদ্য গঠিত বোর্ডে নওশাবা ছাড়াও রয়েছেন গুণী কণ্ঠশিল্পী কনকচাঁপা ও আলোচিত নির্মাতা আশফাক নিপুণসহ ১৫ সদস্য।

বিপ্লবের দিনগুলোতে কাজী নওশাবা আহমেদএই বোর্ডের চেয়ারম্যান হিসেবে রয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় এবং সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল।

১৫ সদস্যবিশিষ্ট পুনর্গঠিত এই ট্রাস্টি বোর্ডে আগামী ৩ বছরের জন্য সদস্য হিসেবে আরও দায়িত্ব পালন করবেন শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক সৈয়দ জামিল আহমেদ, বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক মোহাম্মদ আজম, কবি-প্রাবন্ধিক নাহিদ হাসান নলেজ, লেখক-শিক্ষক তুহিন ওয়াদুদ, নাট্যব্যক্তিত্ব সামিনা লুৎফা, কবি ইমতিয়াজ মাহমুদ ও কথাসাহিত্যিক সাইয়েদ জামিল। আরও থাকছেন তথ্য ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের দুই যুগ্ম সচিব এবং শিল্পী কল্যাণ ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক।

কনকচাঁপা, আশফাক নিপুণ ও কাজী নওশাবা আহমেদপ্রসঙ্গত, অসচ্ছল ও অসুস্থ শিল্পীদের পাশে দাঁড়ানোর পাশাপাশি শিল্পকর্মে বিশেষ অবদানের জন্য বৃত্তি দেওয়ার মতো কর্মকাণ্ড পরিচালনায় ২০২২ সালের ১১ আগস্ট আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করে বাংলাদেশ শিল্পী কল্যাণ ট্রাস্ট। ২০০১ সালে শিল্পী কল্যাণ ট্রাস্ট আইন হওয়ার দশ বছর পর ১৭ সদস্যের বোর্ড গঠন করা হয়। এরপর ২০২০ সালের ১৬ মার্চ বোর্ড পুনর্গঠন করা হয়।

আরও: শিল্পীদের কল্যাণে কাজ করবেন ‘নিগৃহীত’ তিন শিল্পী