লিংকিন পার্ক: শূন্য থেকে এমিলি বিস্ময়!

প্রধান কণ্ঠ চেস্টার বেনিংটনের হঠাৎ মৃত্যুর পর শূন্য দশকের শাসক ব্যান্ডটি যে রাতারাতি শূন্যে পরিণত হয়েছে, তাতে কোনও সন্দেহ নেই। সেই শূন্যতার অন্ধকারে টানা ৭ বছর কাটিয়ে দিলেন মাইক ও তার বন্ধুরা। ১১ সেপ্টেম্বর ফিরে এলেন ‘ফ্রম জিরো’ কনসার্টের মাধ্যমে, সঙ্গে এমিলি বিস্ময় অথবা ঝড়!

কেউ কেউ তো এতোটাই মুগ্ধতায় ভাসছে লিংকিনের ফিরে আসা এবং এমিলির উত্থানে, এটুকুও বলতে বুক কাঁপছে না- বেনিংটনের চেয়েও বেটার নাকি এমিলির গায়কী!চেস্টার বেনিংটন

লিংকিন পার্ক ‘ফ্রম জিরো’ ওয়ার্ল্ড ট্যুরের মাধ্যমে ২০২৪ সালে একটি নতুন অধ্যায় শুরু করলো। এই ট্যুরটি ১১ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের লস অ্যাঞ্জেলেস থেকে শুরু হয়ে ছুটছেন এমিলিরা। তাদের সূচি মতে, ১৬ সেপ্টেম্বর নিউ ইয়র্ক (যুক্তরাষ্ট্র), ২২ সেপ্টেম্বর হামবুর্গ (জার্মান), ২৪ সেপ্টেম্বর লন্ডন (যুক্তরাজ্য), ২৮ সেপ্টেম্বর সিউল (দ. কোরিয়া) এবং ১১ নভেম্বর বোগোটা (কলম্বো) শহরের মাধ্যমে শেষ হবে এই ট্যুর। এটির নামকরণ করা হয়েছে দলটির নতুন অ্যালবাম ‘ফ্রম জিরো’ নামে। যা ১৫ নভেম্বর মুক্তি পাচ্ছে। 

এমিলি আর্মস্ট্রংএটি দলের প্রধান ভোকাল চেস্টার বেনিংটনের মৃত্যুর পর লিংকিন পার্কের প্রথম অ্যালবাম।

দলটির বর্তমান লাইনআপ এমন: মাইক শিনোডা, ব্র্যাড ডেলসন, ডেভ ফারেল এবং জো হান, এছাড়াও নতুন সদস্য হিসেবে যুক্ত হয়েছেন এমিলি আর্মস্ট্রং (কো-ভোকালিস্ট) এবং কলিন ব্রিটেন (ড্রামস)।

‘ফ্রম জিরো’ ট্যুরে ভক্তরা লিংকিন পার্কের ক্লাসিক হিটগুলোর পাশাপাশি নতুন কিছু গানও উপভোগ করতে পারবেন। এরমধ্যে ‘দ্য এমপটিনেস ম্যাশিন’ গানটি প্রথম দিন থেকে ঝড় তুলে দিয়েছে। যার মাধ্যমে এমিলি নিজেকে শতভাগ প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছেন লিংকিন পার্কের মূল ভক্তদের কাছে।

‘লিংকিন পার্ক’ মূলত অলটারনেটিভ রক মিউজিক সৃষ্টির সূতিকাগার। ১৯৯৬ সালে গঠিত হওয়ার পর থেকে ব্যান্ডটি নিউ মেটাল, বিকল্প রক এবং ইলেকট্রনিক মিউজিকের মিশ্রণ ঘটিয়ে সংগীতের সীমানা প্রসারিত করেছে বিশ্বজুড়ে। তাদের প্রথম অ্যালবাম ‘হাইব্রিড থিওরি’ (২০০০) রক দুনিয়ার একটি ক্লাসিক অ্যালবামে পরিণত হয়, যাতে ‘ইন দ্য এন্ড’ এবং ‘ক্রলিং’ এর মতো হিট গান ছিল, যেটি শূন্য দশকের বিশ্বসংগীতের সাউন্ডকে প্রতিনিধিত্ব করে। সময়ের সাথে সাথে তাদের অ্যালবামগুলো যেমন ‘মেটিওরা’, ‘মিনিটস টু মিডনাইট’ এবং ‘আ থাউজ্যান্ড সানস’ প্রমাণ করেছে তাদের সমৃদ্ধ সংগীত সৃষ্টি ও বিকাশের ধারা। যে অ্যালবামগুলো বিশ্বজুড়ে কোটি কোটি ভক্তের সাথে সংযোগ ঘটিয়েছিল অবলীলায়।

২০১৭ সালে চেস্টার বেনিংটনের মর্মান্তিক মৃত্যুর ফলে ব্যান্ড এবং তার ভক্তদের মধ্যে একটি শূন্যতা তৈরি হয়। চেস্টারের উত্তরাধিকারকে সম্মান জানাতে ব্যান্ডটি তখন থেকেই কাজ করে আসছে, যদিও যোগ্য একজন ভোকাল পেতে তাদের অপেক্ষা করতে হয়েছে টানা ৭ বছর। যার সফল পরিণতি হলো এমিলি আর্মস্ট্রংয়ের মাধ্যমে। এবং এটি বিশ্বসংগীতের অন্যতম বিস্ময় যে একটি রক ভোকালের পরিবর্তে একজন নারী কণ্ঠকে বেছে নিয়ে নিজেদের প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছে ব্যান্ডটি।

এমিলির শুরু ও উত্থান

লিংকিন পার্কের সুবাদে এমিলি আর্মস্ট্রং এখন বিশ্বসংগীতের সবচেয়ে চর্চিত নাম। যে চর্চায় রয়েছে মুগ্ধতা ও বিস্ময়। একটি সফল ব্যান্ড ও ভোকালের পরিবর্তে সেই ব্যান্ডে নতুন কণ্ঠের এমন সফলতা সচরাচর মেলে না বিশ্ব সংগীতে।
 
বৈশ্বিকভাবে না হলেও এমিলি মূলত আগে থেকেই নিজ ঘরানায় বেশ প্রশংসিত তার আত্মিক গায়কীর জন্য। অর্থাৎ গলার চেয়ে হৃদয় থেকে তিনি সবসময় গান পরিবেশন করেন। তার কণ্ঠের জোর বা স্কেলটাও শোনার মতো। তিনি পপ এবং ইলেকট্রনিক সংগীতে ভালোই স্বীকৃতি অর্জন করছিলেন নিজের মতো করে। এমিলি ‘ফেডিং লাইটস’ এবং ‘ইকোস’ নামের দুটি ট্র্যাকের জন্য মোটামুটি পরিচিতি পান।

এমিলি ও মাইকএই দুই গানের সুবাদে লিংকিন পার্কের সাথে যুক্ত হওয়ার আগে, এমিলি বিভিন্ন স্বতন্ত্র গান এবং উৎসবে পারফরম্যান্সের মাধ্যমে অনুগত ফলোয়ার তৈরি করেছিলেন বটে। তার সাউন্ড, ইলেকট্রনিক বিট, পপ সুর এবং অন্তর্মুখী গান রচনার মাধ্যমে প্রশংসা কুড়াতে শুরু করেন। তুলনামূলকভাবে সংগীতাঙ্গনে নতুন হলেও, তার আবেগময় উপস্থাপনা এবং শৈল্পিক গানের সুবাদে শ্রোতাদের মনোযোগ আকর্ষণ করেছেন দ্রুত। এটা মূলত ২০২০ থেকে ২০২৩ সালের কথা।

২০২৩ সালে ‘লিংকিন পার্ক’ যখন সমমনা শিল্পী ও ভোকাল খুঁজছিলো, তখন এমিলির সাথে যোগাযোগ হয়। লিংকিন মূলত এমিলির অনন্য কণ্ঠশৈলী এবং গান লেখার দক্ষতা দেখে প্রভাবিত হয়, ব্যান্ড তাকে তাদের নতুন প্রকল্পের জন্য গান গাওয়াসহ লেখা এবং রেকর্ড করার জন্য আমন্ত্রণ জানায়। বিষয়টিকে এমিলি দেখেছেন তার জীবনের ও ক্যারিয়ারের নতুন মোড় ঘুরে যাওয়ার প্রস্তাব হিসেবে। দ্বিধা না করে তিনি প্রায় সঙ্গে সঙ্গে যুক্ত হন লিংকিন পার্কে। 

পার্কের সঙ্গে যুক্ত হওয়া প্রসঙ্গে এমিলির উচ্ছ্বাস এখনও বইছে। তার ভাষায়, ‘‘লিংকিন পার্ক’ সবসময় এমন একটি ব্যান্ড, যারা সাহসের সাথে আলাদা কিছু করার চেষ্টা করেছে। তাদের সংগীতে একটি অপ্রকাশিত তীব্রতা রয়েছে। আমার মতো কারও জন্য, যে কি না এখনও শিল্পী হিসেবে পায়ের তলায় মাটি খুঁজে বেড়াচ্ছে, তার জন্য এই সুযোগ সত্যিই স্বপ্নের মতো। এটাও সত্যি, আমরা সৃজনশীলভাবে আগেই সংযুক্ত ছিলাম, যার যার সৃষ্টি ও আবেগে। বিশেষ করে ক্ষতি এবং পুনর্জন্মের থিম নিয়ে। যা আমাদের এই মেলবন্ধনে বড় ভূমিকা রেখেছে। যার জন্যই আজ আমি ‘লিংকিন পার্ক’-এ।’’

ব্যান্ডের অন্য সদস্যদের সম্পর্কেও নিজের অভিজ্ঞতা শেয়ার করেন এমিলি। বলেন, ‘‘মাইক শিনোডা এবং ব্যান্ডের বাকি সদস্যরাও সৃজনশীলভাবে খুব উদার। তারা শুধু তাদের পূর্বের কাজের পুনরাবৃত্তি করতে চাননি—তারা নতুন দিগন্ত খুঁজতে চেয়েছেন বার বার। এবং আমিও এটাই করতে চেয়েছিলাম শুরু থেকে। আমরা ইলেকট্রনিক উপাদান নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছি, ভোকাল লেভেল ঠিক করেছি এবং এমন কিছু তৈরি করেছি যা অবশ্যই শ্রোতাদের নতুন মনে হয়, কিন্তু এখনও সেটা লিংকিন পার্ক-এর মতোই! এটাই হচ্ছে ‘ফ্রম জিরো’ ম্যাজিক।’’‘লিংকিন পার্ক’র আগে মঞ্চে এমিলি এভাবেই গিটার বাজিয়ে গাইতেন

এমিলি আর্মস্ট্রং একজন আমেরিকান গায়িকা এবং গীতিকার, যিনি রক ব্যান্ড ‘ডেড সারা’-এর প্রধান ভোকালিস্ট হিসেবে সর্বাধিক পরিচিতি পান। তিনি ১৯৮৬ সালের ৬ মে লস অ্যাঞ্জেলেস, ক্যালিফোর্নিয়াতে জন্মগ্রহণ করেন এবং শৈশব থেকেই সংগীতের প্রতি আগ্রহী ছিলেন। লেড জেপেলিন, নিরভানা এবং ফ্লিটউড ম্যাকের মতো বিখ্যাত রক ব্যান্ড থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে এমিলি তার নিজস্ব সংগীতের পথ তৈরি করেন। যা তাকে দাঁড় করায় ‘লিংকিন পার্ক’-এর মতো বিশ্বদলের মঞ্চে।চেস্টার ও এমিলি

সূত্র: ডেডলাইন, ব্লেবারমাউথ, জ্যামবেইজ