‘আলো আসবেই’ কাণ্ড প্রসঙ্গে ফারুকী

‘একাত্তরে জন্ম নিলে এরা রাজাকারের দায়িত্ব পালন করতো’

‘আলো আসবেই’ কাণ্ড প্রকাশ্যে আসার পর একে একে প্রতিবাদ মুখর হচ্ছেন শিল্পীরা। যারা ছাত্র-জনতার পক্ষে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সক্রিয় ভূমিকা রেখেছেন। তাদের মধ্যে অন্যতম মোস্তফা সরয়ার ফারুকী। তাকে নিয়েও সমালোচিত গ্রুপটিতে নেতিবাচক চর্চা হয়েছে বেশ।

সেসব তথ্য ফাঁস হওয়ার পর দুটি প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন ফারুকী। ইংরেজিতে লেখা প্রথম প্রতিক্রিয়াটি এমন, ‘লিক হওয়া স্ক্রিনশটগুলিতে সহকর্মী এবং শিল্পের কিছু মানুষ স্বৈরাচারীর সাথে সহযোগিতা করেছেন এবং আমার বিরুদ্ধে অপমানজনক ভাষা ব্যবহার করেছেন। যদি স্বৈরাচারী বেঁচে থাকতেন তবে আমাকে এবং তিশাকে যে কোনোভাবে ক্ষতি করতে পারতেন। তবুও এসব দেখার পর আমার ব্যক্তিগত উপায় হলো ভুলে যাওয়া! আলোর আগমন হোক! আমিন।’

আপাতত ‘সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা’ মনে হলেও তেমনটা নয়। ফারুকীর প্রত্যাশা, বিষয়টি তিনি ভুলে গেলেও বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের ভুলে যাওয়া উচিত নয়। ফারুকীর ভাষায়, ‘সরকারকে পুরো কথোপকথনগুলো পর্যালোচনা করতে হবে। এখানে ১৪৬টি স্ক্রিনশট পাওয়া গেছে। তাদের (সরকার) উচিত তদন্ত করা এবং মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ উসকানো সকলকে শাস্তির আওতায় আনা।’

এদিকে এমন প্রতিক্রিয়ার পর আরও একটি মন্তব্য দেন ‘শনিবার বিকেল’ নির্মাতা ফারুকী।

বিষয়টিকে বেদনার উল্লেখ করে নির্মাতা বলেন, ‘এটা নিশ্চয়ই বেদনার যে আমাদের দেশে শিল্পীর সাইনবোর্ড নিয়ে এমন লোকজন ঘুরে বেড়াতো, যারা গণহত্যায় প্রত্যক্ষ উসকানিদাতা অথবা কেউ কেউ নীরব সমর্থক ছিল। এরা শুধু শিল্পী হিসাবে না, মানুষ হিসাবেও নিচু প্রকৃতির।’

‘আলো আসবেই’ গ্রুপের সদস্যদের রাজাকারের সঙ্গে তুলনা করে নির্মাতা আরও বলেন, ‘একাত্তরে জন্ম নিলে এরা রাজাকারের দায়িত্ব পালন করতো। ফলে এদের এ যুগের রাজাকার বলতে পারেন। নিশ্চয়ই এদের বিচার হবে গণহত্যায় সমর্থন এবং উসকানি দেয়ার অপরাধে।’

সেই সঙ্গে হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ সদস্যদের শিল্পচর্চা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন ফারুকী। তার ভাষ্য, ‘দেখবেন এই গ্রুপের বেশিরভাগই আসলে কোনও শিল্পচর্চার সাথে সেই অর্থে জড়িত না। আমাদের মেইনস্ট্রিম (মানে টেলিভিশন, ওটিটি এবং ফিল্মে যারা প্রধান শিল্পী; তথাকথিত এফডিসি বোঝানো হয়নি মেইনস্ট্রিম শব্দটা দিয়ে) অভিনয়শিল্পী বা ফিল্মমেকারদের কেউই এদের সাথে নাই। এরাই আমাদের প্রেজেন্ট অ্যান্ড ফিউচার।’

বলা দরকার, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তুলতে ফেরদৌস, রিয়াজ, অরুণা বিশ্বাস, তানভীন সুইটি, জ্যোতিকা জ্যোতি, সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী আরাফাতের সমন্বয়ে দুই শতাধিক সংস্কৃতিকর্মী ও সাংবাদিক নিয়ে একটি গ্রুপ খোলা হয়। যেটির নাম রাখা হয় ‘আলো আসবেই’। সেই গ্রুপের স্ক্রিনশট ফাঁস হওয়ার পর চাঞ্চল্যকর সব তথ্য বেরিয়ে পড়ে শিল্পীদের নামে।

‘আলো আসবেই’ গ্রুপটিতে আরও ছিলেন সুবর্ণা মুস্তাফা, সোহানা সাবা, বিজরী বরকতউল্লাহ, আজিজুল হাকিম, স্বাগতা, বদরুল আনাম সৌদ, শমী কায়সার, তানভীন সুইটি, রওনক হাসান, মাসুদ পথিক, আশনা হাবীব ভাবনা, শামীমা তুষ্টি, জামশেদ শামীম, উর্মিলা কর, মামুনুর রশিদ, সাজু খাদেম, হৃদি হক, আশরাফ কবীর, দীপান্বিতা মার্টিন, সাইমন সাদিক, জুয়েল মাহমুদ, জায়েদ খান, ঝুনা চৌধুরী, লিয়াকত আলী লাকি, সৈয়দ আওলাদ, নূনা আফরোজ, রোকেয়া প্রাচী, গুলজার, এসএ হক অলীক, লিমন আহমেদ প্রমুখ।

আরও:

তাপসকে অরুণা বিশ্বাস: ‘পিটাইতে পিটাইতে বাবা ডাক শিখাইতাম’

‘আলো আসবেই’ গ্রুপ: কানাডায় অরুণা, যা বললেন জ্যোতি

‘আলো আসবেই’ কাণ্ড: অরুণাকে ‘থু...’ বললেন পরী

‘আলো আসবেই’ কাণ্ড: ‘গ্রুপে আমি কখনও প্রবেশ করিনি’