খবরটি ব্যতিক্রম। কারণ ঘটনার দায় নিয়ে কিংবা প্রতিবাদ করে কেউ এখানে পদত্যাগ করে না। এই সংস্কৃতি এখানে জারি নেই। যেটা ভারতেও ঘটে সচরাচর। চলমান আন্দোলন কিংবা সংকটেও সেই সম্ভাবনা এখনও তৈরি হয়নি। তবে সরাসরি রাষ্ট্রযন্ত্রের অংশীজন না হয়েও উদাহরণটি তৈরি করলেন দেশের অন্যতম অভিনেত্রী জাকিয়া বারী মম।
রবিবার রাতে (৪ আগস্ট) তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে গোটা দুনিয়াকে জানিয়ে দিলেন শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আছেন, শিল্পীদের সংঘে আর নেই! মানে অব্যাহতি নিয়েছেন শিল্পীদের অন্যতম সংগঠন অভিনয়শিল্পী সংঘ থেকে।
না, এর জন্য তাকে ফেসবুকের প্রোফাইল পিকচার লাল কিংবা কালো করতে হয়নি। তবে চলমান আন্দোলনের শুরু থেকেই তিনি সচল রয়েছেন শিক্ষার্থীদের সমর্থন দিয়ে, প্রকাশ্যে। নেমেছেন রাজপথেও। এবার তার অবস্থান থেকে চূড়ান্ত রায় জানালেন, শিক্ষার্থীদের সঙ্গে থাকলেও নিজের সংগঠনের সঙ্গে আর নেই।
কারণ অভিনেত্রী মনে করছেন তার এই প্রাণের সংগঠনটি চলমান আন্দোলনের সঙ্গে ‘ন্যায়’ করছে না। সমর্থন করছে ‘অন্যায়’!
মমর ভাষায়, ‘ইক্যুইটি মানে ন্যায়, ন্যায়বিচার। ন্যায়-এর কথা বলে চলমান পরিস্থিতিতে ন্যায়ের সাথে প্রকাশ্যে আপস মেনে নেওয়া, ব্যক্তিগতভাবে আমার পক্ষে সম্ভব হচ্ছে না। কারণ শিল্পী হিসেবে আমি আমার দায়বদ্ধতার জায়গায় দায়বদ্ধ।
সেই দায়বদ্ধতা থেকে আমি অ্যাকটর্স ইক্যুইটি বাংলাদেশ থেকে অব্যাহতি গ্রহণ করলাম।’
৪ আগস্ট দিনগত রাতে এই পদত্যাগপত্রের একটি কপি নিজের ফেসবুক দেয়ালেও ঝুলিয়ে দিয়েছেন অভিনেত্রী। প্রকাশের ৪ ঘণ্টায় পেয়েছেন দুই শতাধিক শেয়ার এবং অসংখ্য মন্তব্য। যেখানে তিনি প্রশংসিত হচ্ছেন মুহুর্মুহু। যদিও এই বিষয়ে আর কোনও আলাদা মন্তব্য করতে প্রস্তুত নন অভিনেত্রী।
তথ্য হলো, চলমান কোটা সংস্কার আন্দোলনটি যখন শান্তিপূর্ণ ক্যাম্পাস থেকে সহিংসতার দিকে দেশজুড়ে গড়াচ্ছে (১৫ জুলাই), ঠিক তখনই দেশের সবচেয়ে সমৃদ্ধ শিল্পীদের সংগঠন ‘অভিনয়শিল্পী সংঘ বাংলাদেশ’ একটি বিবৃতি পাঠায় গণমাধ্যমে। সেখানে সভাপতি আহসান হাবিব নাসিম ও সাধারণ সম্পাদক রওনক হাসান বলার চেষ্টা করেন, কোটা সংস্কার আন্দোলনে মুক্তিযোদ্ধাদের ‘অসম্মান’ করায় তাদের এই সাংগঠনিক প্রতিবাদলিপি।
উত্তাল বাংলায় সংঘের এমন প্রতিবাদলিপিতে ছাত্রদের ওপর হামলা প্রসঙ্গে একটি শব্দও উচ্চারণ করেনি সংগঠনটি। এ নিয়ে সাংবাদিক ও শিল্পীদের তোপের মুখে পড়েন সংঘের দুই কর্তা নাসিম ও রওনক।
এটাও বলা জরুরি, নাটক, সিনেমা, সংগীতের মানুষের দিয়ে দেশের অনেক সংগঠনের ভিড়ে অভিনয়শিল্পী সংঘ বরাবরই অন্য সংগঠনের বিচারে অ্যাকটিভ এবং কার্যকর ভূমিকা পালন করতে দেখা গেছে।
সেই সুবাদে গত ৩ মে রাজধানীর আফতাবনগরে সরকারের কাছ থেকে সাড়ে তিন কাঠা জমি পায় সংগঠনটি।