সিনেমা নির্মাণ ও বিকাশে রাষ্ট্রীয় সহযোগিতার বিষয়ে যথেষ্ট অভিযোগ-অভিমান রয়েছে ঢালিউড সংশ্লিষ্টদের মনে। তবে এসব ছাপিয়ে দেশের সিনেমার জন্য সরকার সবচেয়ে বড় যে কাজটি প্রতি বছর করে, সেটি হলো অনুদান।
এটাও ঠিক, এই অনুদান প্রক্রিয়া এবং এসব সিনেমার মান নিয়ে প্রশ্নের শেষ নেই। তবে দিন শেষে সরকারের এই অনুদান প্রকল্পটি এখনও সিনেমা নির্মাতাদের কাছে বড় প্রাপ্তির মতোই। সেই ধারাবাহিকতায় সরকারের তথ্য মন্ত্রণালয় নানান পর্যায়ে যাচাই-বাছাই শেষে ২০২২-২৩ অর্থবছরের আওতায় অনুদানের তালিকা প্রকাশ করেছে। নিশ্চিত, এই তালিকা নিয়েও তুমুল প্রশ্ন উঠবে। কারণ, এই তালিকায় যেমন রয়েছে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির অন্যতম পরিচালক জ্যোতিকা জ্যোতির নাম; তেমনি রয়েছেন কণ্ঠশিল্পী এস ডি রুবেলও! দুজনই পাচ্ছেন সিনেমা নির্মাণের জন্য ৬০ লাখ টাকা করে অনুদান!
এ দু’জনই নন; এমন নাম আরও রয়েছে, যাদের আসলে সিনেমা নির্মাণের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে এতগুলো টাকা (প্রত্যেকে ৫৫ থেকে ৬৫ লাখ) পাওয়ার কোনও যুক্তি বা কারণ আছে বলে মনে করছেন না সিনেমা সংশ্লিষ্টরা।
অন্যদিকে, এবারের তালিকায় এমন অনেকেই আছেন, যারা এই তালিকার প্রায় নিয়মিত মুখ! প্রশ্ন উঠতে পারে তাদের নিয়েও; বার বার তারাই কেন পাচ্ছে অনুদান!
তবে সেসব বিষয়ে তর্ক-বিতর্ক জমে ওঠার আগে জেনে নেওয়া যাক এবারের অনুদানের তালিকায় কারা স্থান পেলেন এবং সিনেমাগুলোর নাম ও প্রাপ্ত বাজেট কেমন।
রবিবার (১৮ জুন) তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় ২০২২-২৩ অর্থবছরের অনুদান পাওয়া সিনেমার তালিকা, প্রযোজক-পরিচালকের নাম ও বরাদ্দকৃত অর্থের পরিমাণসহ একটি প্রজ্ঞাপনে প্রকাশ করেছে। যাতে দেখা গেছে এবার ২২টি পূর্ণদৈর্ঘ্য ও ৬টি স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র সরকারি অনুদান পাচ্ছে।
এ বছর পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র বিভাগে সর্বোচ্চ ৬৫ লাখ টাকা করে পাচ্ছে দুটি চলচ্চিত্র। এর মধ্যে রয়েছে নূর ইমরান মিঠুর প্রযোজনা ও পরিচালনায় ‘সার্কাস’ এবং প্রযোজক হিসেবে নাট্যকার ও নির্মাতা মাতিয়া বানু শুকু পাচ্ছেন ‘লাল মিয়া’ নামের সিনেমার জন্য। এটি পরিচালনা করবেন নুরুল আলম আতিক।
মুক্তিযুদ্ধ শাখায় অনুদান পেয়েছেন বদরুন নাহার রক্সি। ‘যুদ্ধ শিশু’ সিনেমার জন্য তিনি বরাদ্দ পেয়েছেন ৬০ লাখ টাকা। সিনেমাটি পরিচালনা করবেন মোহাম্মদ উল্লাহ। মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক শিশুতোষ শাখায় ‘ভোর’ সিনেমার জন্য একই পরিমাণ অনুদান পাচ্ছেন মাহিন মাহনুমা। এটি পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছেন আমিনুর রহমান খান। শিশুতোষ শাখায় ‘মাটির রাজকুমার’ সিনেমার জন্য একই অনুদান পাচ্ছেন প্রযোজক শামীমা ইসলাম তুষ্টি। সিনেমাটি পরিচালনা করবেন রুবেল শঙ্কর বিশ্বাস। একই শাখায় একই পরিমাণ অর্থ অনুদান পাচ্ছেন প্রযোজক ও পরিচালক আকা রেজা গালিব। তার সিনেমার নাম ‘মস্ত বড়লোক’।
এছাড়া সাধারণ শাখায় ‘দেনা পাওনা’র জন্য প্রযোজক ও পরিচালক সাদেক সিদ্দিকি পাচ্ছেন ৫৫ লাখ টাকা। ‘মাস্টার’ ছবির প্রযোজক ও পরিচালক রেজওয়ান শাহরিয়ার সুমিত, ‘দ্য আগস্ট’ ছবির প্রযোজক ও পরিচালক মাসুদ পথিক, ‘রেনুর মুক্তিযুদ্ধ’ ছবির প্রযোজক ও পরিচালক রোকেয়া প্রাচী, ‘লারা’ ছবির প্রযোজক জ্যোতিকা পাল জ্যোতি ও পরিচালক শেখর দাশ; প্রতি ছবির জন্য অনুদান পাচ্ছেন ৬০ লাখ টাকা করে।
আর ‘নীল আকাশে পাখি উড়ে’র প্রযোজক ও পরিচালক এস ডি রুবেল, ‘নীল জোসনার জীবন’ ছবির প্রযোজক ও পরিচালক ফাখরুল আরেফিন খান, ‘রুখসার’র প্রযোজক ও পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান মানিক পাচ্ছেন প্রতি ছবির জন্য ৬০ লাখ টাকা করে।
না, অনুদান প্রাপ্তির খবরে সংশ্লিষ্ট কারও কোনও নগদ প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।
১৯৭৬-৭৭ অর্থবছর থেকে দেশীয় চলচ্চিত্রের বিকাশে সরকারি এ অনুদান চালু হয়। মাঝে কয়েক বছর বাদে প্রতিবছরই অনুদান দেওয়া হয়েছে, বেড়েছে অনুদানের পরিমাণও। তবে বরাবরই, অনুদানের জন্য ছবি বাছাই, মান ও নির্মাণ প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।