প্রয়াণ দিনে স্মরণ

পারিবারিক মান্না যেমন ছিলেন…

তাকে বলা হয় গণমানুষের নায়ক। কেন বলা হয়? কারণ সিনেমার পর্দায় নায়ক হয়ে তিনি নিপীড়িত, বঞ্চিত ও সাধারণ মানুষের পক্ষে লড়েছেন। প্রতিবাদের আওয়াজ তুলেছেন। তাই সাধারণ মানুষের কাছে তার জনপ্রিয়তা ছিলো শীর্ষে।

২০০৮ সালের যে দিন তিনি মারা যান, সেদিন গোটা দেশজুড়ে যেন শোকের মাতম বয়ে গিয়েছিলো। বিএফডিসির সামনে হাজার হাজার মানুষের ভিড়; যেন বড় কোনও রাজনৈতিক সমাবেশ। ওই দিন প্রবলভাবে প্রমাণিত হয়েছিলো, দর্শক তাকে কতটা ভালোবাসে।

হ্যাঁ, বলা হচ্ছে নায়ক মান্নার কথা। আজ শুক্রবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) তার ১৫তম মৃত্যুবার্ষিকী। ২০০৮ সালের এই দিনেই তিনি পাড়ি জমিয়েছেন না ফেরার দেশে। হয়ে গেছেন স্মৃতির পাতায় বন্দী এক অমর ব্যক্তিত্ব।

প্রতি বছরের মতো মান্নার মৃত্যুবার্ষিকীতে দোয়া-মিলাদের আয়োজন করেছে তার পরিবার। নায়কের স্ত্রী শেলী মান্না জানিয়েছেন, টাঙ্গাইলে পারিবারিকভাবে মান্নার জন্য দোয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এছাড়া টাঙ্গাইল জেলা প্রেসক্লাব থেকেও নায়ককে স্মরণ করা হচ্ছে। পাশাপাশি মান্না ফাউন্ডেশন কমিটি থেকেও থাকছে দোয়া-মিলাদের আয়োজন।

নায়ক মান্নানায়ক মান্নাকে সবাই পর্দায় দেখেছেন, তার জনপ্রিয়তা, নায়কোচিত ভঙ্গি উপভোগ করেছেন। কিন্তু ব্যক্তি জীবনে মান্না কেমন ছিলেন? জানা যায়, জনপ্রিয়তার শীর্ষে থাকলেও মানুষ হিসেবে মান্না অতি নমনীয় এবং বিনয়ী ছিলেন। সহকর্মী, সিনে-কুশলী কিংবা ভক্ত থেকে গণমাধ্যমকর্মী, সবার সঙ্গেই হাসিখুশি মিশতেন তিনি।

জনপ্রিয়তার সুবাদে নায়ক মান্নার ব্যস্ততা ছিলো তুঙ্গে। সেই ব্যস্ততায় পরিবারকে কখনও বঞ্চিত করেননি। কাজের বাইরে প্রায় পুরোটা সময় পরিবারের সঙ্গে কাটাতেন। দেশ-বিদেশে ঘুরতে যেতেন স্ত্রী-সন্তানকে নিয়ে। সেসব মহূর্ত ফ্রেমবন্দী হয়ে আছে আজও।

মান্নার পুত্র সিয়াম ইলতেমাশের সোশ্যাল অ্যাকাউন্ট থেকে পাওয়া গেলো তাদের পারিবারিক মুহূর্তের কিছু অদেখা স্থিরচিত্র। যেগুলো দেখলে সহজেই আঁচ করা যায়, মান্নার কাছে পরিবার কতখানি গুরুত্বপূর্ণ ছিলো।

পরিবারের কাছে মান্না যেমন ছিলেনসিনেমার মানুষ ছিলেন মান্না; কিন্তু এটুকু বিশ্বাস করতেন, এই জগতে কেউ কারও বন্ধু হয় না। জীবদ্দশায় এক সাক্ষাৎকারে বিষয়টি নিয়ে বলেছিলেন, ‘ফিল্মে বন্ধুত্বের কোনও মূল্য নেই। আমার কোনও বন্ধু নেই এখানে। চলচ্চিত্রের কেউ যদি বুকে হাত দিয়ে বলেন, আমরা সবাই এক পরিবার তবে সেটা হবে সবচেয়ে বড় মিথ্যা। কারণ এখানে সবাই স্বার্থ নিয়ে চলেন।’

এই বাস্তবিক বিশ্বাসের কারণে মান্না পরিবারকেই সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েছিলেন। বলা জরুরি, ক্যারিয়ারের শুরুর দিকেই শেলীকে বিয়ে করেন মান্না। তাদের একমাত্র পুত্র সিয়াম ইলতেমাশ পড়াশোনা করেন যুক্তরাষ্ট্রে।

স্ত্রী ও সন্তানের সঙ্গে মান্নাউল্লেখ্য, মান্নার আসল নাম সৈয়দ মোহাম্মদ আসলাম তালুকদার। ১৯৬৪ সালের ১৪ এপ্রিল টাঙ্গাইলের কালিহাতী উপজেলার এলেঙ্গায় জন্মগ্রহণ করেছিলেন তিনি। উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করেছেন ঢাকা কলেজ থেকে।

১৯৮৪ সালে বিএফডিসি আয়োজিত ‘নতুন মুখের সন্ধানে’ প্রতিযোগিতার মাধ্যমে সিনেমায় আসেন মান্না। তার প্রথম মুক্তিপ্রাপ্ত ছবি কাজী হায়াৎ পরিচালিত ‘পাগলী’। এরপর দুই যুগের ক্যারিয়ারে তিন শতাধিক সিনেমায় অভিনয় করেছিলেন তিনি। যার মধ্যে সফল সিনেমার সংখ্যাই বেশি।

মান্না অভিনীত উল্লেখযোগ্য কয়েকটি সিনেমা হলো- ‘দাঙ্গা’, ‘কাসেম মালার প্রেম’, ‘আম্মাজান’, ‘শান্ত কেন মাস্তান’, ‘কষ্ট’, ‘বীর সৈনিক’, ‘অবুঝ শিশু’, ‘কাবুলিওয়ালা’, ‘বাদশা ভাই’, ‘শিমুল পারুল’, ‘লুটতরাজ’, ‘তেজী’, ‘কে আমার বাবা’, ‘লাল বাদশা’ ইত্যাদি।

তরুণ মান্না যেমন ছিলেনঅভিনেতা হিসেবে একবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার, তিনবার মেরিল-প্রথম আলো পুরস্কার, পাঁচবার বাচসাস পুরস্কারসহ বিভিন্ন সম্মাননা পেয়েছেন মান্না।