বিজয় বিশেষ

‘ভাবলাম অস্ত্র দিয়ে যুদ্ধ করার চেয়ে...’

মহান বিজয়ের আজ (১৬ ডিসেম্বর) ৫০ বছর পূর্ণ হলো। জাতীয় জীবনের অত্যন্ত গৌরবময় এ দিনটি দেশজুড়ে উদযাপন হচ্ছে। দিনটি ঘিরে বিশেষ আয়োজন করেছে বাংলা ট্রিবিউন। যোদ্ধাদের কাছে শুনেছে তাদের লড়াইয়ের গল্প। এ পর্বে কথা বলেছেন নাট্যজন ও স্বাধীন বাংলা বেতারের শব্দসৈনিক মামুনুর রশিদ-

২৯ মার্চ পর্যন্ত আমি ঢাকায় ছিলাম। ২৫ মার্চ রাতে গ্রিন রোডে একজন পরিচালকের বাসায়। রাত সাড়ে ১১টার পর ব্যারিকেড তুলে নিয়ে হত্যাযজ্ঞ চালানো শুরু করে পাক আর্মিরা। ২৭ তারিখ সকালে যখন আমি নিউ মার্কেট হয়ে গুলিস্তান যাচ্ছিলাম, দেখলাম লাশ আর লাশ। নীলক্ষেতের কোণায় একটা তেলের পাম্প আছে না, তাদেরও মেরে গেছে। মাংসের ব্যবসায়ী, দোকানি কাউকে বাদ দেয়নি। দুই দিন গুলিস্তানে থেকে রওনা দিই জিঞ্জিরার দিকে। ওখানে কিছু দিন থেকে আমরা বিক্রমপুরে শাইনপুকুরে রওনা দিই। যখন আমরা পদ্মায়, তখন দেখতে পেলাম পাকিস্তানিরা জিঞ্জিরা আক্রমণ করেছে। ২৫ তারিখ ও এদিনের দুটি আক্রমণেই একেবারে ভাগ্যের জোরে বেঁচে যাই। 

তখন বিক্রমপুরে যাতায়াত ব্যবস্থা অতটা ভালো ছিল না। দেড় দিন পরে ওখানে পৌঁছাই। বেশ কিছু দিন সেখানে থেকে আবার ঢাকায় ফিরি। এরপর ঠিক করলাম, টাঙ্গাইলে যাব; আমার গ্রামের বাড়ি। সেখানে কাউকে পেলাম না। খোঁজ নিয়ে জানলাম, সবাই আমার মামার বাড়িতে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন। এটা শহর থেকে ৬ মাইল দূরে। সেখানে গিয়ে থাকার কিছু দিনের মধ্যে কাদের সিদ্দিকীর সঙ্গে দেখা। তখন তার তেমন অস্ত্রশস্ত্র ছিল না। তিনি তখন গ্রামে গ্রামে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। তখন আমরা কালিয়াপুরের হামিদপুরে পালবাড়িতে অস্ত্রের সন্ধান পেলাম। সেখানে গেলাম। খবর দিলাম কাদের সিদ্দিকীকে। দেশে তখন চারদিকে যুদ্ধ চলছে। 

অস্ত্রগুলো কাদের সিদ্দিকীকে হস্তান্তর করা হলো। আমি তখন ভেবে দেখলাম, অস্ত্র দিয়ে যুদ্ধ করার চেয়ে আমার শক্তির জায়গা লেখনী। আমার জায়গাটা স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে। কারণ, আমি তখন টেলিভিশনে নিয়মিত নাটক লিখি। সে কারণেই আমার অস্ত্র হলো লেখনী। আমি আগরতলা হয়ে চলে যাই কলকাতা। স্বাধীন বাংলা বেতারে যোগ দিই। শুরু হয় শব্দের লড়াই।

শ্রুতিলিখন: ওয়ালিউল বিশ্বাস