বিমানবন্দরে চিঠি পাঠিয়ে শায়খুল হাদিস মাওলানা উবায়দুল্লাহ ফারুককে ‘অব্যাহতি’ দিয়েছেন রাজধানীর জামিয়া মাদানিয়া বারিধারার প্রিন্সিপাল মাওলানা মনির হোসাইন কাসেমী। দুজনেই জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের কেন্দ্রীয় নেতা। উবায়দুল্লাহ ফারুক নায়েবে আমির ও মনির কাসেমী যুগ্ম মহাসচিবের দায়িত্ব পালন করছেন।
তবে ঠিক কী কারণে উবায়দুল্লাহ ফারুককে বারিধারা মাদ্রাসা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে, তা নিয়ে কোনও পক্ষই মুখ খুলছে না। এমনকি প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকেরা বলতে পারছেন না, কেন তাকে বাদ দেওয়া হয়েছে।
মঙ্গলবার (৮ এপ্রিল) বিকালে এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রিন্সিপাল মাওলানা মনির হোসাইন কাসেমী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘অব্যাহতি দিয়েছি বললে কেমন লাগে, এটা অব্যাহতি নিয়েছেন, বললে সুন্দর হয়।’
কেন অব্যাহতির প্রসঙ্গ, এমন প্রশ্নে মনির হোসাইন বলেন, ‘কোনও বনিবনাতে হয়তো সমস্যা হচ্ছিল। এগুলো ছড়াছড়ি হওয়া ভালো না। আর এক জায়গায় তো সবাই থাকে না, পরিবর্তন আসা স্বাভাবিক।’
এ বিষয়ে উবায়দুল্লাহ ফারুককে কল করা হলেও তিনি কথা বলেননি। তবে বারিধারা মাদ্রাসার একাধিক শিক্ষার্থীরা জানান, মাওলানা উবায়দুল্লাহ ফারুক মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাকাল থেকে শিক্ষকতা করছেন। প্রয়াত মাওলানা নূর হোসাইন কাসেমীসহ প্রবীণ কয়েকজন আলেম আশির দশকে এই প্রতিষ্ঠানটি প্রতিষ্ঠা করেন।
উবায়দুল্লাহ ফারুকের অব্যাহতির পেছনে রাজনৈতিক কোনও কারণ থাকতে পারে, এমন ইঙ্গিত দিয়েছেন জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের শীর্ষ একাধিক নেতা।
বর্তমান প্রিন্সিপাল মনির হোসাইন কাসেমী রাজনৈতিকভাবে ও আর্থিকভাবে শক্তিশালী হওয়ায় এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করেছেন, বলে মনে করেন দলটির কোনও নেতা।
তিনি সর্বশেষ ২০২৮ সালে নারায়ণগঞ্জ-৪ (ফতুল্লার সিদ্ধিরগঞ্জ) আসনে ধানের শীষের প্রার্থী হিসেবে মনোনীত হয়েছিলেন। সর্বশেষ বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহ উদ্দিন আহমদের সঙ্গে অনুষ্ঠিত বৈঠকটির নেপথ্যেও তার ভূমিকাই প্রবল বলে জানান জমিয়তের শীর্ষপর্যায়ের একাধিক নেতা।
মঙ্গলবার সকালে সিলেট থেকে বিমানে ঢাকায় ফেরার পর বিমানবন্দরে অব্যাহতিপত্র ও দেনা-পাওনার অর্থ দেওয়া হয় উবায়দুল্লাহ ফারুককে। ওই সময় জমিয়তের শীর্ষ পর্যায়ের একনেতা তাকে ফোন করে মাদ্রাসায় যেতে নিরুৎসাহিত করেন।
এ প্রসঙ্গে জমিয়তের শীর্ষ একনেতার ভাষ্য, ‘যারা অব্যাহতি দিয়েছে তারাই বলতে পারবেন কেন দিয়েছে।’
ঘটনার আকস্মিকতায় জমিয়তের আরেক কেন্দ্রিয় নেতার পরিচালনাধীন প্রতিষ্ঠান উত্তরার জামিয়াতুন নূর আল কাসেমিয়ায় মাদ্রাসায় শায়খুল হাদিস পদে উবায়দুল্লাহ ফারুককে বরণ করে নেওয়া হয়।
ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র জানায়, মাওলানা উবায়দুল্লাহ ফারুকের অব্যাহতির জের ধরে জমিয়তে উলামায়ে ইসলামে আবারও অস্থিরতা শুরু হতে পারে।