উত্তরা হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজ

নতুন সভাপতির বিরুদ্ধে নানা অনিয়মের অভিযোগ

রাজধানীর উত্তরা হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজের বর্তমান সভাপতির বিরুদ্ধে হত্যা মামলার আসামিকে রক্ষা করার অভিযোগ উঠেছে। পাশাপাশি প্রধান শিক্ষক পদে দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত ব্যক্তিকেও রক্ষার অভিযোগ করেন বিএনপি-জামায়াতপন্থি শিক্ষকরা। 

তাদের অভিযোগ মতে, স্কুলের সাবেক সভাপতি হাবিব হাসানের ভাই এবং একটি হত্যা মামলার আসামি রিয়াজের স্বার্থ রক্ষায় কাজ করার চেষ্টা করছেন বর্তমান সভাপতি।  বিএনপি-জামায়াতপন্থি শিক্ষকরা বলছেন, পতিত স্বৈরাচারের দোসররা পালিয়ে গেলেও বর্তমান সভাপতি ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের অঞ্চল-১০-এর নির্বাহী কর্মকর্তা আ ন ম বদরুদ্দোজা স্কুলের সভাপতি হওয়ার পর থেকেই স্কুল পরিচালনায় নানা অনিয়ম করে যাচ্ছেন।

এ ছাড়া প্রধান শিক্ষক পদে দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত হাফিজ মোল্লাকে রক্ষার চেষ্টা করছেন তিনি। এর বাইরে জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের সময় ছাত্র হত্যা মামলার আসামি সাবেক এক মন্ত্রীর আত্মীয়কে প্রধান শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দিয়ে অনৈতিক সুবিধা নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে বদরুদ্দোজার বিরুদ্ধে। 

স্কুল সূত্রে জানা গেছে, বর্তমান সভাপতি কোনও নিয়ম-কানুন মানেন না। গত ৫ আগস্টের পটপরিবর্তনের পর উত্তরা হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজের সভাপতির দায়িত্ব পান ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের অঞ্চল-১০-এর নির্বাহী কর্মকর্তা বদরুদ্দোজা। দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকেই প্রতিষ্ঠানটির অভ্যন্তরীণ গ্রুপিংয়ের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন তিনি। 

বিএনপি-জামায়াতপন্থি শিক্ষকরা বলেন, পতিত স্বৈরাচারের দোসর বলে চিহ্নিত শিক্ষকদের নিয়মবহির্ভূত স্বার্থ রক্ষায় মরিয়া হয়ে কাজ করছেন বদরুদ্দোজা। তাছাড়া প্রতিষ্ঠানের একাডেমিক ও কো-কারিকুলাম কার্যক্রমে কোনও ভূমিকা রাখেননি। এ কারণে প্রতিষ্ঠানটিতে ২০২৫ শিক্ষাবর্ষে শিক্ষার্থীদের সিলেবাস, আইডি কার্ড, বার্ষিক একাডেমিক ক্যালেন্ডার দেওয়া হয়নি। এমনকি বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতার বাছাই পর্ব ও প্রতিযোগী প্যানেল যথাসময়ে সম্পন্ন করা সত্ত্বেও বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা-২০২৫ ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান-২০২৫ হয়নি।

অভিযোগ আছে, বিধি লঙ্ঘন করে নিয়োগ দেওয়া ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ইভানা তালুকদারের প্রত্যক্ষ মদতে শেখ হাসিনা সরকারের বিরুদ্ধে ২০২৪ গণঅভ্যুথথানের নেতৃত্বদানকারী শিক্ষার্থীদের সব ক্ষেত্রে বঞ্চনা ও নানা হয়রানি করা হচ্ছে। গণঅভ্যুত্থথানে নেতৃত্ব দেওয়া বিদ্যালয়ের দ্বাদশ শ্রেণির প্রায় এক হাজার ৭০০ শিক্ষার্থীর নির্বাচনী পরীক্ষা চলাকালীন ষড়যন্ত্রমূলক তাদের বাদ দিয়ে ১৯ ও ২০ ফেব্রুয়ারি ‘তারুণ্য উৎসব’ উদযাপন করেন।

এ বিষয়ে অধিকাংশ শিক্ষক, বঞ্চিত শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা অনেকভাবে আবেদন-নিবেদন করার পরও সভাপতি ও ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ তাদের সিদ্ধান্তে অনড় থেকে দ্বাদশ শ্রেণির প্রায় এক হাজার ৭০০ শিক্ষার্থীকে উৎসবে অংশ নেওয়া হতে বঞ্চিত করেন। 

অভিযোগে আরও বলা হয়, নিয়োগ পরীক্ষায় মাত্র ২০ শতাংশ নম্বর পেয়ে অকৃতকার্য হওয়ার পরও সাবেক মন্ত্রী ফারুক খানের মদতে অধ্যক্ষ পদে নিয়োগ পাওয়া এবং পরে হাইকোর্টের ১১৭০২/২০২১নং রিট পিটিশনের গত ১৭ আগস্ট ২০২২ তারিখের জাজমেন্টে অধ্যক্ষ পদ হতে চাকরিচ্যুত সেই হাফিজুর রহমান মোল্লাকে অবৈধভাবে অধ্যক্ষ পদে পুনর্বহাল করার চেষ্টা করেন। জেষ্ঠ্যতার ভিত্তিতে স্কুলের প্রধান শিক্ষক হওয়ার দাবিদার ছিলেন সহকারী প্রধান শিক্ষক মো. ফরিদুর রহমান। গত ১১ জুলাই থেকে ফরিদুর রহমানকে অনপুস্থিত দেখিয়ে শিক্ষা বোর্ডে পত্র লেখেন সভাপতি বদরুদ্দোজা। পরে শিক্ষা বোর্ডের জারি করা ২০২৪ সালের গত ১৯ ডিসেম্বরের পত্রের নির্দেশনা লঙ্ঘন করে অপেক্ষাকৃত জুনিয়র প্রভাষক ও প্রশাসনিক কাজে সম্পূর্ণ অনভিজ্ঞ ইভানা তালুকদারকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব দেন সভাপতি। 

এ নিয়ে আন্দোলনকারী ছাত্র-শিক্ষকরা ক্ষুব্ধ। বিষয়গুলো নিয়ে সোচ্চার থাকা শিক্ষকদের মধ্যে থেকে পাঁচ জন শিক্ষককে শোকজ করা হয়। জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘন করে প্রধান শিক্ষক নিয়োগ করায় হাইকোর্ট একটি নির্দেশনা দিয়েছেন। এতে অধ্যক্ষ ইভানাকে অপসারণ করার কথা বলা হয়। কোর্টের নির্দেশনা থাকার পরও বদরুদ্দোজা অধ্যক্ষ ইভানাকে পদ থেকে সরাননি। বরং তার পক্ষ নিয়ে আপিল করার নির্দেশনা চেয়ে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডে পত্র লেখেন তিনি।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্কুলের একাধিক শিক্ষক অভিযোগ করেন, সভাপতি প্রকাশ্যে বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মধ্যে গ্রুপিং উসকে দিয়ে বিদ্যালয়ে অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি করছেন। 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে স্কুলের বদরুদ্দোজা বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগ মিথ্যা। এখানে পাল্টাপাল্টি রিটের কারণে সঠিকভাবে কাজ করা যাচ্ছে না।’ এর বেশি কোনও কথা বলতে রাজি হননি তিনি।