বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সুযোগ নিয়ে ‘অবৈধভাবে’ নিজে নিজেই নিয়োগ নেওয়া ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মো. নেয়ামুল হক ও উপাধ্যক্ষ মোখলেছুর রহমানের পদত্যাগ এবং বৈধ অধ্যক্ষ অধ্যাপক বেদর উদ্দিনকে পদে ফিরিয়ে আনতে আন্দোলন করছেন ঢাকা সিটি কলেজের শিক্ষার্থীরা। সোমবার (২৮ অক্টোবর) বেলা ১২টার দিকে পাঁচ দফা দাবি আদায়ে সিটি কলেজ ঘিরে বিক্ষোভ করেন তারা। এতে কলেজের অধ্যক্ষসহ শিক্ষকরা জিম্মি হয়ে পড়েছেন বলে জানা গেছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছে সেনাবাহিনীর সদস্যরা।
এদিকে শিক্ষার্থীদের অবরোধের কারণে ধানমন্ডি ও সাইন্সল্যাবের গুরুত্বপূর্ণ সড়কের উভয় পাশের যান চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। দুর্ভোগে পড়েছে শতশত মানুষ। তবে ঘটনাস্থলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছে।
ঘটনাস্থলে দেখা গেছে, সিটি কলেজের দুটি গেট বন্ধ করে রেখেছেন শিক্ষার্থীরা। অবরোধের কারণে বন্ধ রয়েছে ২ নম্বর সড়কের যান চলাচল। আর গেটের সামনে অবস্থান নিয়েছেন সেনা সদস্যরা। এ সময় সাধারণ শিক্ষার্থীদের শান্ত থাকার আহ্বান জানান সেনাবাহিনীর সদস্যরা।
জানা গেছে, শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ ও সড়ক অবরোধের খবর পেয়ে দুপুর দেড়টার দিকে ঘটনাস্থলে আসে সেনাবাহিনী। তবে এর আগে থেকেই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা (পুলিশ) ঘটনাস্থলে অবস্থান নেয়।
ফারিয়া তাবাসসুম নামে এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘সিটি কলেজ এখন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে একটি ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। নামে বেনামে বিভিন্ন ফান্ড খুলে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেওয়া হয়। যার প্রতিবাদ করলেই শিক্ষার্থীদের চাপ সৃষ্টি করে। কলেজ প্রশাসন বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে এসব টাকা হাতিয়ে নেয়। যার মূলে রয়েছেন অধ্যক্ষ এবং উপাধ্যক্ষ। আমরা এসব আর চাই না। একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের মতো আচরণ করবে সেটি মেনে নেওয়া হবে না।’
বেলা সোয়া ১টার দিকে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী শাহরিয়ার বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘অবৈধ ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ও উপাধ্যক্ষের পদত্যাগসহ পাঁচ দফা দাবিতে আমরা আন্দোলন করছি। আমরা এখন অধ্যক্ষের অফিসে বৈঠক করতে যাচ্ছি।’
প্রসঙ্গত, গত ৭ আগস্ট অধ্যক্ষ অধ্যাপক বেদর উদ্দিনের থেকে জোর করে পদত্যাগপত্রে সই নিয়ে ইংরেজি বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক মো. নেয়ামুল হক ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে ‘অবৈধভাবে’ অধ্যক্ষের চেয়ারে বসেন। এরপর ওই দিনই কলেজের মার্কেটিং বিভাগের শিক্ষক মোখলেছুর রহমানকে ‘অবৈধভাবে’ নিয়োগ দেন কলেজের উপাধ্যক্ষ পদে।
শিক্ষার্থীরা জানান, অধ্যক্ষ ও উপাধ্যক্ষের পদ দখল করতে কলেজের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক মো. নেয়ামুল হক বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের নিয়ে এসে জোর করে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের পদে বসেন। অধ্যক্ষকে জোর করে পদত্যাগপত্রে সই নেওয়ার ঘটনার পর ওই দিনই সন্ধ্যায় (৭ আগস্ট) নেয়ামুল হক ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব বুঝে নেন। সেদিনই কলেজের মার্কেটিং বিভাগের শিক্ষক মোখলেছুর রহমানকে নিয়োগ দেন কলেজের উপাধ্যক্ষ পদে। ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের চেয়ারে বসেই পর দিন ৮ আগস্ট জরুরি সভা করার জন্য নোটিশ জারি করেন নেয়ামুল হক।
ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হয়ে অধ্যাপক কাজী নেয়ামুল হক গত ১১ আগস্ট অধ্যক্ষ এবং ছয় শিক্ষককে অফিস আদেশ দিয়ে কলেজে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেন। এই ছয় শিক্ষক হলেন– বাংলা বিভাগের মো. দেলোয়ার হোসেন, মনোবিজ্ঞান বিভাগের ফরিদা পারভীন, ভূগোলের চৈতালী হালদার, হিসাববিজ্ঞান বিভাগের আহসান হাবিব রাজা ও একই বিভাগের কায়কোবাদ সরকার এবং ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের শিক্ষক আল ফয়সাল আকতার।
অবাঞ্ছিত হওয়া ছয় শিক্ষক বলছেন, তাদের ওপর অন্যায় করা হয়েছে। কোনও কারণ ছাড়াই তাদের অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়েছে।
শিক্ষর্থীরা আরও জানান, কম্পিউটার সায়েন্স বিভাগের জনপ্রিয় শিক্ষক সহযোগী অধ্যাপক মো. জাহাঙ্গীর আলম সুমনকে শোকজ না করেই, আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে মিথ্যা অভিযোগটি তদন্ত না করেই নিয়ম বহির্ভূতভাবে সরাসরি তিন মাসের জন্য সাসপেন্ড করা হয়েছে। এতে কলেজের শিক্ষার্থীরা ক্ষিপ্ত হয়ে আন্দোলনে নামে।
জানা গেছে, এর আগে মাত্র তিন মাসের ব্যবধানে এভাবেই ১৬ জন শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীকে বহিষ্কার করা হয়। কলেজের এসব বিষয় নিয়ে সবার মধ্যে ক্ষোভ ও আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।
শিক্ষার্থীদের পাঁচ দফা দাবি হলো– বহিষ্কার করা শিক্ষক সুমনকে আজকের মধ্যে স্বসম্মানে প্রতিষ্ঠানে ফিরিয়ে আনতে হবে, অবৈধভাবে দখল করা অধ্যক্ষ ও উপাধ্যক্ষের চেয়ার ছাড়তে হবে পরবর্তী ৩০ মিনিটের মধ্যে এবং আজকের মধ্যেই অনতি বিলম্বে বৈধ অধ্যক্ষ বেদর উদ্দিনকে পুনর্বহাল করতে হবে, কলেজ সংস্কারের নামে শিক্ষকদের প্রতিহিংসামূলক নোংরা রাজনীতি বন্ধ করতে হবে, অভিভাবক হয়রানি বন্ধ করতে হবে এবং রেজাল্টের অজুহাতে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে জোর করে টাকা আদায় বন্ধ করতে হবে এবং ব্যবসায়ী কোচিং সেন্টারের মতো এক্সট্রা ক্লাস বন্ধ করতে হবে।
আরও পড়ুন...