‘শরীফার গল্প’ বাদ, নতুন কী গল্প আসছে

‘কোনও সমস্যা না থাকলেও’ অনাকাঙ্ক্ষিত সমালোচনা এড়াতে সপ্তম শ্রেণির নতুন পাঠ্যবই থেকে ‘শরীফার গল্প’ বাদ দেওয়া হচ্ছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের গঠিত উচ্চপর্যায়ের বিশেষজ্ঞ কমিটির সুপারিশে এই গল্পটি বাদ দেওয়া হচ্ছে। তবে এর পরিবর্তে যুক্ত হবে হিজড়াদের নিয়ে নতুন গল্প।

শরীফার গল্পের মূল উদ্দেশ্যে ছিল— হিজড়া বা লিঙ্গ বৈচিত্র্যের মানুষের জীবন মান উন্নয়নে পরবর্তী প্রজন্মের মাঝে সামাজিক দায়বদ্ধতা তৈরি করা। আর সে কারণেই পাঠ্যবইয়ে নতুন করে যুক্ত করা হবে হিজড়াদের নিয়ে গল্প।

জানতে চাইলে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক মো. মশিউজ্জামান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের করা উচ্চপর্যায়ের বিশেষজ্ঞ কমিটির সুপারিশে ‘শরীফার গল্প’টি বাদ দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু হিজড়া জনগোষ্ঠীর প্রতি যে ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি করতে এই গল্পটি দেওয়া হয়েছে, সেটা নিয়ে কোনও আপত্তি নেই। সেটি তো বাদ দিতে বলা হয়নি, বলা হয়েছে— অন্য কোনও গল্পের মাধ্যমে এই বিষয়টি অ্যাড্রেস করতে। সুতরাং, আমাদের লার্নিং মিস হচ্ছে না। আমাদের উদ্দেশ্য ব্যাহত হচ্ছে না। শরীফার গল্প না দিয়ে অন্য গল্পও তো দেওয়া যেতো, মূল লক্ষ্য হচ্ছে— শিখন অর্জন। শিখন অর্জনে কোনও নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়নি বা প্রতিবন্ধকতাও তৈরি হচ্ছে না। যেহেতু এটা নিয়ে বিতর্ক আছে, আপত্তি আছে, সুতরাং এই গল্পটি পরিবর্তন করে অন্য গল্পের মাধ্যমে বিষয়টি দেওয়া যাবে। আমি এটাকে ইতিবাচক মনে করি। কারণ, আমরা বিতর্কে থাকতে চাই না। কোনও বিষয়ে বিতর্ক থাকলে যারা শিখবে, তারও মনে করবে এটি বিতর্কিত বিষয়। শিক্ষার্থীর শিখনটাও প্রশ্নবোধক হয়ে থাকবে। সেই জায়গা থেকে (বিতর্ক থেকে) বেরোতে পারলে বরং শিখনটা আরও বেশি নিশ্চিত হয়।’ 

সংশ্লিষ্টরা জানান, সপ্তম শ্রেণির পাঠ্যবইয়ে ‘শরীফার গল্প’ নিয়ে ট্রান্সজেন্ডার ও সমকামিতাকে প্রমোট করার অভিযোগ তুলে সমালোচনা শুরু করে একটি মহল। বিষয়টি নিয়ে সারা দেশে তুমুল সমালোচনা হয়।  ট্রান্সজেন্ডার শব্দটির উল্লেখ ছিল না শরীফার গল্পটিতে। এই সমালোচনার পর ২৩ জানুয়ারি বর্তমান শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী গণমাধ্যমকে বলেছিলেন, ‘‘পাঠ্যবইয়ে ‘শরীফা’ গল্প উপস্থাপনে যদি কোনও বিতর্ক বা বিভ্রান্তি হয়ে থাকে, সেক্ষেত্রে কিছুটা পরিবর্তন আনা যেতে পারে।”  পরবর্তীকালে শিক্ষা মন্ত্রণালয় উচ্চপর্যায়ের বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করে। সম্প্রতি কমিটি শরীফার গল্পটি বাদ দিয়ে হিজড়াদের নিয়ে ভিন্ন গল্প যুক্ত করার সুপারিশ করে।

কমিটির ওই সুপারিশ অনুযায়ী, আগামী শিক্ষাবর্ষে (২০২৫) সপ্তম শ্রেণির পাঠ্যবই থেকে শরীফার গল্পটি বাদ দিতে সম্প্রতি জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডকে (এনসিটিবি) চিঠি দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।

প্রসঙ্গত, ২০২৪ শিক্ষাবর্ষে মানুষে মানুষে সাদৃশ্য ও ভিন্নতার বিষয়ে ধারণা দিতে সপ্তম শ্রেণির ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান বইয়ে ‘শরীফার গল্প’ সংযোজন করা হয়েছিল।

এর আগেও পাঠ্যবইয়ে থাকা বিবর্তনবাদ নিয়ে একটি গোষ্ঠী বিতর্ক উত্থাপন করে। তখনও অপপ্রচার চালিয়ে বলা হয়েছিল— বিবর্তনের মাধ্যমে বানর থেকে মানুষের সৃষ্টি। যদিও পাঠ্যবইয়ের কোথাও ‘বানর থেকে মানুষের সৃষ্ট ‘  এমন কথা উল্লেখ ছিলে না। তবে সমালোচনার মুখে পাঠ্যবই থেকে বিবর্তনের বিষয়টি বাদ দেওয়া হয়। এবার বাদ যাচ্ছে শরীফার গল্প।