মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) ও সমমান পরীক্ষা-২০২৪ এর ফল প্রকাশ হয়েছে রবিবার (১২ মে)। ফল প্রকাশের পর আনন্দ-উল্লাসে মেতে ওঠে পুরান ঢাকার বিভিন্ন স্কুলের শিক্ষার্থীরা। তাদের সেই আনন্দের সঙ্গে যুক্ত হন অভিভাবক-শিক্ষকরাও। অনেক শিক্ষার্থী ইন্টারনেটে ফল জানলেও সহপাঠীদের সঙ্গে আনন্দ ভাগাভাগী করতে ছুটে আসে স্কুল প্রাঙ্গণে। শিক্ষকদের সঙ্গে দেখা করে ফল জানায় এবং দোয়া নেয় অনেকে।
এ বছর ঢাকা কলেজিয়েট স্কুলে পাসের হার ৯৯ দশমিক ২৪ শতাংশ। জিপিএ-৫ পেয়েছে ১১৫ জন। পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ২৬৩, পাস করেছে ২৬০ শিক্ষার্থী। বাংলাবাজার সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে পাসের হার ৯৬ দশমিক ৬৭ শতাংশ। জিপিএ-৫ ৭৩ শিক্ষার্থীর। পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ২৪১, পাস করেছে ২৩২ জন। ঢাকা গভমেন্ট মুসলিম হাই স্কুলের এ বছর পাসের হার ৯৮ দশমিক ৫৬ শতাংশ। পরীক্ষা দিয়েছে ১৩৯ জন। জিপিএ-৫ পেয়েছে ৩৭ শিক্ষার্থী।
শিক্ষকদের আন্তরিক প্রচেষ্টায় গতবারের চেয়ে এবারের ফল ভালো হয়েছে বলে জানান ঢাকা কলেজিয়েট স্কুলের প্রধান শিক্ষক মো. আবু সাঈদ ভূঁইয়ান। তিনি বলেন, ‘গত বছর শর্ট সিলেবাস থাকায় রেজাল্ট ভালো হয়। তবে এ বছর ফুল সিলেবাসেও শিক্ষার্থীদের রেজাল্ট আগের বছরের মতোই।’
বাংলাবাজার সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষিকা জাহানারা পারভীন বলেন, ‘গত বছরের তুলনায় এ বছরের রেজাল্ট ভালো। তবে যেহেতু এটা মেয়েদের স্কুল, সেহেতু দেখা গেছে ফরম ফিলাপের পর অনেক মেয়ের বিয়ে হয়ে যাওয়ায় পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারেনি।’
সেন্ট গ্রেগরি হাই স্কুল অ্যান্ড কলেজে এ বছর পাসের হার ১০০ শতাংশ। পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ২৫১ জন। জিপিএ-৫ পেয়েছে ১৫৯ শিক্ষার্থী। তবে বাংলা ভার্সনের থেকে ইংরেজি ভার্সনের জিপিএ-৫ এর হার বেশি।
এই প্রতিষ্ঠানের প্রিন্সিপাল ব্র. উজ্জ্বল প্লাসিড পেরেরা জানান, গত বছরের তুলনায় জিপিএ-৫ এর সংখ্যা কম, তবে পাসের হার ১০০ শতাংশ।
তিনি বলেন, ‘আগে যখন আমরা পরীক্ষার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের ভর্তি করতাম তখন অনেকেই বলতেন মেধাবী শিক্ষার্থীদের বাছাই করে নেই বলে আমাদের স্কুলের রেজাল্ট ভালো হয়। তবে যখন থেকে আমরা লটারির মাধ্যমে শিক্ষার্থী ভর্তি করাই তখনও আমাদের শিক্ষার্থীদের রেজাল্ট আগের মতোই। সুতরাং আমাদের স্কুলের পাঠদান বরাবরই ভালো, যে কারণে শিক্ষার্থীরা ভালো ফল করে আসছে।’
সেন্ট গ্রেগরি হাই স্কুল অ্যান্ড কলেজের বিজ্ঞান বিভাগে জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থী মির জাফরী আহমেদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলে, ‘আমার এই ভালো ফল করার পেছনে বাবা-মায়ের অবদান রয়েছে। একইসঙ্গে আমার স্কুলের শিক্ষকদের অনেক বেশি অবদান আছে। পরিবারের সবাই ভীষণ খুশি, আমি তাদের স্বপ্ন পুরন করতে পেরেছি।’
একই স্কুলের বিজ্ঞান বিভাগ থেকে জিপিএ-৫ পাওয়া আদ্রিত বলে, ‘বাবা-মায়ের সার্পোট তো পেয়েছি, সঙ্গে বন্ধুদের এবং শিক্ষকদেরও সহযোগিতাও পেয়েছি অনেক। ভালো রেজাল্টে আমি খুব খুশি।’
জিপিএ-৫ পাওয়া দিপন বিশ্বাস নামে আরেক শিক্ষার্থীর ভাষ্য, ‘ভালো রেজাল্টে আমার থেকে মা-বাবা বেশি খুশি। তাদের হাসিমুখ দেখে আমিও আনন্দিত।’
প্রাপ্ত ফলাফল অনুযায়ী এ বছর ঢাকা বোর্ডে পাসের হার ৮৩ দশমিক ৯২ শতাংশ, বরিশালে ৮৯ দশমিক ১৩ শতাংশ, চট্টগ্রামে ৮২ দশমিক ৮০ শতাংশ, কুমিল্লায় ৭৯ দশমিক ২৩ শতাংশ, দিনাজপুরে ৭৮ দশমিক ৪০ শতাংশ, রাজশাহীতে ৮৯ দশমিক ২৬ শতাংশ, সিলেটে ৭৩ দশমিক ৩৫ শতাংশ, ময়মনসিংহ ৮৪ দশমিক ৯৭ শতাংশ এবং যশোর বোর্ডে ৯২ দশমিক ৩২ শতাংশ। মাদ্রাসা বোর্ডে পাসের হার ৭৯ দশমিক ৬৬ শতাংশ। এবার পাসের হারে শীর্ষে রয়েছে যশোর বোর্ড। আর সর্বনিম্ন পাসের হার সিলেট বোর্ডে। ছাত্রদের পাসের হার ৮১ দশমিক ৫৭ শতাংশ এবং ছাত্রীদের পাসের হার ৮৪ দশমিক ৪৭ শতাংশ।
ছবি: প্রতিবেদক