অধ্যক্ষের অপসারণ দাবিতে আন্দোলনে ধানমন্ডি আইডিয়ালের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা

রাজধানীর ধানমন্ডির আইডিয়াল কলেজের অধ্যক্ষ জসিম উদ্দীন আহম্মেদের অপসারণের দাবিতে আন্দোলনে নেমেছেন প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা। ভুয়া পিএইচডি ডিগ্রি, অর্থিক অনিয়ম, শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে বাড়তি অর্থ আদায় করে নিম্নমানের ড্রেস ক্রয়সহ বিভিন্ন অভিযোগ তোলা হয়েছে তার বিরুদ্ধে।

শনিবার (৪ জুন) কলেজ থেকে বের হয়ে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা আন্দোলন শুরু করেছেন। আন্দোলনকারী সাধারণ শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা অধ্যক্ষের অপসারণ দাবি করে বলেন, জুতাসহ স্কুল ড্রেসের দাম বেশি নিয়ে নিম্নমানের পোশাক ও জুতা সরবরাহ করা হয়েছে। দুই মাসের মধ্যে স্কুল ড্রেস নষ্ট হয়ে গেছে। ছাত্রদের কাছ থেকে জনপ্রতি থেকে ৩ হাজার ৮০০ ও ছাত্রীদের জনপ্রতি ৪ হাজার টাকা নেওয়া হয়েছে। আর যাদের ওজন তুলনামূলক বেশি, তাদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ৪০০ টাকা করে নেওয়া হয়েছে।

এছাড়া তার পিএইচডি ডিগ্রি ভুয়া প্রমাণিত হওয়ায় শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা তার অপসারণ দাবি করেছেন। 

এর আগে শুক্রবার (৩ জুন) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) সংবাদ সম্মেলন করে অধ্যক্ষ জসিম উদ্দীন আহম্মেদ এবং দুই শিক্ষক তৌফিক আজিজ চৌধুরী ও তরুণ কুমার গাঙ্গুলীকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেন অন্য শিক্ষকরা। তারা ওই সংবাদ সম্মেলন থেকে অ্যাকডেমিক কার্যক্রম বর্জনেরও ঘোষণা দেন।

সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষকদের পক্ষে রসায়ন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মো. মোবাশ্বের হোসেন লিখিত বক্তব্যে বলেন, ‘কলেজের বর্তমান অধ্যক্ষ জসিম উদ্দীন আহম্মেদ ২০১৭ সালের মার্চ মাসে যোগদানের পর থেকেই তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনৈতিক কার্যক্রম, অনিয়ম ও আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে।

সংবাদ সম্মেলনে আইডিয়াল কলেজের শিক্ষকরা

তিনি আরও অভিযোগ করেন, অধ্যক্ষ জসিম উদ্দীন মার্কেটিং বিভাগের শিক্ষক তৌফিক আজিজ চৌধুরী এবং বাংলা বিভাগের শিক্ষক তরুণ কুমার গাঙ্গুলীসহ কতিপয় শিক্ষকদের সঙ্গে নিয়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ব্যক্তিগত প্রতিষ্ঠানের মতো পরিচালনা করছেন। তারা বিভিন্ন সময়ে শিক্ষক-কর্মচারীদের নানাভাবে ভয়ভীতি, অবজ্ঞা, কারণ দর্শানো নোটিশ দেওয়া, চাকরি থেকে অব্যাহতি দেওয়ার হুমকি দিয়েছেন।

এছাড়াও ২০২২ সালে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তির সময় ডাচ-বাংলা এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের একটি অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে প্রায় ২ কোটি টাকা আত্মসাতের চেষ্টা করা হয় বলে অভিযোগ করেন এই শিক্ষক।

এদিকে গত ১৭ মে রাজধানীর ধানমন্ডির আইডিয়াল কলেজের অধ্যক্ষ এবং অন্য দুই শিক্ষকের পিএইচডি ডিগ্রির ভুয়া সনদের প্রাথমিক সত্যতা পেয়ে অধ্যক্ষসহ অভিযুক্ত ও কলেজ গভর্নিং বডির কাছে ব্যাখ্যা চেয়েছে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতর।

শিক্ষার্থীদের ড্রেস কেনা-কাটায় অর্থ আদায়, বিভিন্ন আর্থিক অনিয়মের প্রাথমিক সত্যতা মিলেছে বলেও অধিদফতরের অফিস আদেশে জানানো হয়। আদেশে পরবর্তী তিন কার্য দিবসের মধ্যে ব্যাখ্যা দাখিলের নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল।

মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের ব্যাখ্যা চাওয়া চিঠিতে আরও বলা হয়, উচ্চ মাধ্যমিকের প্রতি ছাত্রের কাছে কলেজ ড্রেসের কাপড় ও জুতার জন্য বিনা রশিদে ৩ হাজার ৮০০ ও ছাত্রীর কাছে ৪ হাজার করে এবং শিক্ষার্থীর ওজন বেশি হলে অতিরিক্ত ৪০০ টাকা আদায় করা হয়েছে। শিক্ষকমণ্ডলীর ও শিক্ষার্থীদের বক্তব্য থেকে এ সম্পর্কিত অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পাওয়া গেছে। তবে কলেজের অধ্যক্ষ এ বিষয়ে কোনও মতামত ও প্রমাণ সরবরাহ করেননি।

করোনাকালের দুই বছরে কলেজের ১১ কোটি টাকার সঞ্চয়পত্র ভাঙানোর কথাও অধ্যক্ষসহ সব শিক্ষক স্বীকার করেছেন বলেও চিঠিতে উল্লেখ করা হয়।

এছাড়াও এতে বলা হয়েছে, কলেজের অধ্যক্ষ ২০১৭ সালে যোগদানের পর ১১ জন শিক্ষক এনটিআরসিএ সনদ ছাড়া নিয়োগ দেওয়া হয়েছে মর্মে অধ্যক্ষসহ সব শিক্ষক মৌখিকভাবে স্বীকার করেছেন। নিবন্ধন সনদ ছাড়া শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া বিধিসম্মত হয়নি। অধ্যক্ষ ও শিক্ষক নিবন্ধন ছাড়া নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষকরা জানান, তাদের দক্ষতা যাচাইমূলক পরীক্ষা নেওয়া হয়েছে। এ ক্ষেত্রেও অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পাওয়া গেছে।