৪৫ বছর ধরে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবন ধানমন্ডি ল’ কলেজের ‘দখলে’

 

ধানমন্ডি ১ নম্বর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, এ ভবনেই ধানমন্ডি ল কলেজ স্থাপিতরাজধানীর কলাবাগানের শহীদ সুজা সড়কে অবস্থিত ধানমন্ডি ১ নম্বর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ক্লাসসহ দাফতরিক কাজ চলছে ধানমন্ডি ল’ কলেজেরও। ১৯৪২ সালে স্থাপিত প্রাথমিক বিদ্যালয়টিতে ১৯৭২ সালে স্থাপন করা হয় ধানমন্ডি ল’ কলেজ। সেই থেকে দীর্ঘ ৪৫ বছর ধরে কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে কলেজটি। প্রাথমিক বিদ্যালয়টিকে ধানমন্ডি ল’  কলেজের ‘দখল’ থেকে মুক্ত করার জন্য প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়-সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি ২০১৬ জরুরি সুপারিশ করলেও কোনও সুফল পাওয়া যায়নি। তবে কলেজটির প্রশাসনিক কর্মকর্তা জানান, কলেজ সরিয়ে নেওয়ার জন্য তারা বিকল্প জায়গা খুঁজছেন।

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়-সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি ২০১৪ সালে প্রভাবশালীদের দখলে থাকা রাজধানীর ৫১ টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তালিকা তৈরি করে। কমিটি ওই বছরের অক্টোবরে একটি উপ-কমিটি গঠন করে। এরপর উপ-কমিটি ওই ৫১টি বিদ্যালয়ের মধ্যে ২৩ টি পরিদর্শন করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করে।  ওই ২৩টি স্কুলেরই একটি ধানমন্ডি ১ নম্বর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।

প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে কলেজটি সরানোর জন্য প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়-সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির ২০১৪ সালের সুপারিশে বলা হয়েছে, দুই সপ্তাহের মধ্যে ল’ কলেজ কর্তৃপক্ষের লাইব্রেরি হিসেবে ব্যবহৃত ও কর্মচারীদের দখল করা কক্ষ দু’টি অবমুক্ত করতে হবে। জরুরি ভিত্তিতে ল’ কলেজটি প্রাথমিক বিদ্যালয় ক্যাম্পাস থেকে  স্থানান্তর করতে হবে। এছাড়া ল’ কলেজের স্থায়ী ক্যাম্পাস না থাকায় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে চিঠি পাঠানোর সুপারিশ করা হয়। একইসঙ্গে ল’ কলেজটি জরুরি ভিত্তিতে স্থানান্তর না হলে ২০১৫-২০১৬ শিক্ষাবর্ষে নতুন ভর্তির অনুমতি না দেওয়ার জন্য জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করতেও বলা হয়। এরপর প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সদস্যরা সরেজমিন পরিদর্শন করে জেলা প্রশাসককে ল’ কলেজটি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে সরানোর সুপারিশ করেন।

ওই সুপারিশের আলোকে ২০১৭ সালে ঢাকা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার শাহিন আরা বেগম স্বাক্ষরিত সুপারিশসহ একটি প্রতিবেদন দেওয়া হয়। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবন ছেড়ে দেওয়ার জন্য কলেজ কর্তৃপক্ষকে বলা হয়েছে। কিন্তু তারা নির্দিষ্ট সময় উল্লেখ না করে ভবন ছাড়ার জন্য সময় চেয়ে শিক্ষা অফিসকে চিঠি দিয়েছে। এছাড়া ভর্তি বন্ধ রাখতে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়কে অনুরোধ করে চিঠি দেওয়া হয়েছে।

সম্প্রতি ধানমন্ডি ১ নম্বর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, প্রাথমিক বিদ্যালয়টির পূর্ব পাশের ভবনের নিচ তলায় কয়েকটি কক্ষকে অফিস হিসেবে ব্যবহার করছে ‘ল’ কলেজ কর্তৃপক্ষ। অন্যদিকে স্কুলটির দক্ষিণ পাশের ভবনে দোতলায় স্কুলেরই কয়েকটি কক্ষে ‘ল’ কলেজের ক্লাস পরিচালিত হচ্ছে।

ধানমন্ডি ১ নম্বর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বাউন্ডারির ভেতরে এ ভবনেই ধানমন্ডি ল কলেজ স্থাপিত

জানতে চাইলে স্কুলটির প্রধান শিক্ষক ফাহিমা সুলতানা বলেন, ‘‘১৯৪২ সালে স্কুলটি স্থাপন করা হয়। তখন আমি এখানে ছিলাম না। তবে যতটুকু জানি, ১৯৭২ সালে স্থানীয়দের দাবির মুখে ‘ল’ কলেজটি এই স্কুল ভবনেই স্থাপন করা হয়। এরপর ১৯৭৩ সালে একযোগে সারা দেশের অনেক স্কুলের সঙ্গে ধানমন্ডি ১ নম্বর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টিও জাতীয়করণ হয়। কিন্তু সরকারি হওয়ার আগের বছর যে ল’ কলেজ স্থাপিত হয়, সেটি আর এখান থেকে সরানো হয়নি। স্কুলেরই ক্লাসরুম তারা ‘দখল’ করে তাদের ক্লাস কার্যক্রম পরিচালনা করে।’ তিনি বলেন, ‘বর্তমানে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়-সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি  কলেজটি স্থানান্তরের জন্য সুপারিশ করে। আমরা সমস্যার কথা সংশ্লিষ্টদের জানিয়েছি।’’

এই প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ল’ কলেজটির একজন কর্মচারী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘স্কুল স্কুলের মতোই চলে, কলেজ কলেজের মতো। কোনও সমস্যা তো হয় না। কারণ স্কুল চলে দুপুর ২ টা পর্যন্ত। কলেজ শুরু হয় বিকাল ৫ টায়। এ কারণে স্কুলের ক্লাসরুম কলেজের জন্য ব্যবহার করলে কোনও সমস্যা হয় না। বরং কলেজ কর্তৃপক্ষ এই দুই প্রতিষ্ঠানের সমস্ত বিদ্যুৎ বিল দেয়। একজন নৈশপ্রহরী রাখা আছে। তার বেতনও কলেজ বহন করে। এরপরও স্কুল কর্তৃপক্ষ চায়, এখানে যেন কলেজ না থাকে। এখন সরকারই ভালো বুঝবে, তারা কী করবে।’

ধানমন্ডি ল' কলেজের প্রিন্সিপাল ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল শবনম মুশতারির সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলার জন্য ফোন করা হলে তিনি দেখা করতে বলেন। দেখা করতে একাধিকবার কলেজে গেলেও তাকে পাওয়া যায়নি। 

পরে ল’ কলেজটির প্রশাসনিক কর্মকর্তা অ্যাডভোকেট মোবাশ্বের হাসান বাপ্পী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, 'কলেজটি দীর্ঘদিন ধরে এই ভবনে আছে। প্রতিষ্ঠানটি যারা স্থাপন করেছিলেন, তারাও বিষয়টির গুরুত্ব বুঝেই করেছিলেন। এখনও কলেজটি গুরুত্ব বহন করে চলছে। কিন্তু কোনও একটি পক্ষের ঈর্ষার শিকারে পরিণত হয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। স্কুল ভবনে ল’ কলেজ থাকলেও স্কুল কর্তৃপক্ষের কোনও সমস্যা হয় না। কারণ স্কুল চলে সকালে, ল’ কলেজ সন্ধ্যায়। এরপরও কেউ কেউ চায় না প্রতিষ্ঠানটি এখানে থাকুক। আমরা বিকল্প জায়গা খুঁজছি। পেলেই হয়তো চলে যাবো।'