লিট ফেস্টে মারিনা মাহাথির

‘আমি কখনও বাবার কথা প্রচার করিনি’

লিট ফেস্টের সমাপনী দিনে (৮ জানুয়ারি) দুপুরে বাংলা একাডেমির লনে ‘দ্য অ্যাপেল অ্যান্ড দ্য ট্রি’ শিরোনামের সেশনে সাংবাদিক সরদ কুতনের সঞ্চালনায় উপস্থিত ছিলেন মালয়েশিয়ার প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মদের মেয়ে, লেখক ও সমাজকর্মী মারিনা মাহাথির।

অনুষ্ঠানের শুরুতে সঞ্চালক সরদ কুতন মারিনা মাহাথির ও তার কর্মজীবন সম্পর্কে এবং পিতা মাহাথির মোহাম্মদের সঙ্গে তার সম্পর্ক নিয়ে লেখা ‘দ্য অ্যাপেল অ্যান্ড দ্য ট্রি এস ড. মাহাথিরস ডটারস’ বই নিয়ে কথা বলেন। পরবর্তীতে মারিনা তার বইয়ের কয়েকটি অনুচ্ছেদ পড়ে শোনান, সঞ্চালক এবং উপস্থিত দর্শকদের প্রশ্নের উত্তর দেন। প্রশ্ন তালিকায় ছিল বাবার সঙ্গে সম্পর্ক, বই, বাবার রাজনৈতিক জীবন প্রভৃতি।

নিজের বই সম্পর্কে আপনার কী বলার আছে সঞ্চালকের এমন প্রশ্নের উত্তরে মারিনা বলেন, ‘আমার বাবা ২৪ বছর প্রধানমন্ত্রী ছিলেন, আমি তার প্রথম কন্যা হিসেবে আমাকে প্রশ্ন করা হয় ড. মাহাথিরের মেয়ে হিসেবে আমার কেমন লাগে। আমি নিজের সত্তা, নিজের পরিচয়েই নিজেকে পছন্দ করি। কিন্তু মানুষের প্রশ্নটা থেকেই যায়, এই বইতে সেই উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করেছি। মানুষের অনেক ভুল ধারণা আছে রাষ্ট্রপ্রধানের মেয়ে হিসেবে আমাকে নিয়ে। মনে হয় আমি তার উত্তর দিতে পেরেছি এই বইয়ে।’

বইয়ের একটি অনুচ্ছেদের কথা তুলে ধরে সঞ্চালক প্রশ্ন করেন, ডা. মাহাথিরের পুনরায় রাজনীতিতে ফিরে আসাকে মারিনা কীভাবে নিয়েছিলেন। এর উত্তরে মারিনা বলেন, ‘৯২ বছর বয়সে কে নির্বাচন অফিসে যায়! তবে আমি তার সিদ্ধান্ত নিয়ে মোটেই অবাক হইনি। কারণ, সে পুরোপুরি সুস্থ ছিল। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ তার স্মৃতিশক্তি সম্পূর্ণ ঠিক ছিল এবং মাথাভর্তি চুল ছিল!’

দর্শকদের একজন প্রশ্ন করেন, তার বাবার রাজনীতি থেকে দূরে থাকার কারণ সম্পর্কে। তিনি উত্তরে বলেন, ‘আমি আমার বাবাকে অপছন্দ করি না, আমি বাবাকে ভালোভাবেই চিনি। মানুষ হিসেবে বাকি সবার মতো তারও কিছু ভুল থাকবে স্বাভাবিকভাবেই। আমি পত্রপত্রিকায় ৩০ বছর ধরে কলাম লিখেছি, সরকারের যেটা ঠিক মনে হয়নি লিখেছি। এইচআইভি নিয়ে, মিডিয়া স্বাধীনতা নিয়ে লিখেছি। মানুষ দেখেছে, বাবা যা বলেছেন আমি ভিন্ন বলেছি। আমি কখনও বাবার কথা প্রচার করিনি। অনেকেই বাবাকে বলতেন মেরিনা যেটা বলছে আপনার জন্য ভালো না। উনি আমার লেখা সম্পর্কে জানতেন।’

‘আপনি ট্রান্সজেন্ডার, এলজিবিটি নিয়ে কথা বলেন, আপনার বাবা কখনও প্রভাবিত করার চেষ্টা করেননি?’ এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘আমি আমার বইয়ে এই বিষয়ে লিখেছি। সে আমাকে কখনও এ বিষয়ে কিছু বলেনি। আমার এভাবে বলা তার রাজনৈতিক জীবনের জন্য কঠিন ছিল।’ 

সমাজকর্মী হিসেবে কাজ করার সিদ্ধান্ত কেন নিলেন, এই প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘আমি সাংবাদিকতা করেছি, জনসংযোগ নিয়ে কাজ করেছি, ফান্ড রাইজ করেছি। ফান্ড রাইজিংয়ে আমাকে প্রধানমন্ত্রীর মেয়ে হিসেবে ডাকা হতো। এই সময়টাতে আমি শিখেছি, আমার মানুষের জন্য কাজ করতে হবে। যৌনকর্মী, মাদকাসক্ত, অভিবাসী শ্রমিক, এলজিবিটি এদের নিয়ে কথা কেউ বলে না। এমনকি এদের খেয়ালও করতে চায় না। তখন আমি শিখেছি এদের জন্য কাজ করা দরকার। তখন আমি সিদ্ধান্ত নিই তাদের জন্য আমার সেরাটা দিয়ে কাজ করবো।’  

আপনি এলজিবিটি নিয়ে কথা বলেন। উল্টো দিকে আপনার বাবা আনোয়ার ইব্রাহিমকে এই ইস্যুতে আঘাত করেছেন। এটা আপনাকে প্রভাবিত করে কিনা, সঞ্চালকের এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘সে সময়ের প্রজন্মটা ভিন্ন লিঙ্গের বিষয়টা বুঝতে চাইতো না। ১৯৯৯ সালে আমার এলজিবিটি নিয়ে একটি আন্তর্জাতিক কনফারেন্সে যাওয়ার কথা ছিল। সে সময় লোকেরা আমাকে বয়কট করার কথা বলাবলি করছিল। এটা নিয়ে আমি ভয়ে ছিলাম। আপনারা আনোয়ার ইব্রাহিমের কথা বলছেন, তিনি এলজিবিটি নিয়ে শক্ত অবস্থান নেননি। আমি এখনও জানি না এটা নিয়ে তার অবস্থান কী।’   

শ্রোতা সারিতে বসা ডা. জাফরুল্লাহ প্রশ্ন করেন শেষ নির্বাচনে মাহাথিরের পরাজয়ের কারণ নিয়ে। এর উত্তরে মারিনা বলেন, ‘২০২০-এ ক্যুর পর তিনি একটা ছোট দলের হয়ে নির্বাচন করেন, একেবারেই নতুন দল। যদিও আগের নির্বাচনেও তিনি একই আসন থেকে নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি এবার পরাজিত হন এবং খুব বাজেভাবে। আমার মনে হয় তিনি এখনও খুঁজছেন কী হয়েছিল।’