‘খেতে পাই না, ক খ শিখে কী করবো?’

বাংলা একাডেমি জুড়ে আজ বিদায়ের সুর। ঢাকা লিট ফেস্টের চতুর্থ ও শেষ দিনেও ছিল দর্শনার্থীদের উপড়েপড়া ভিড়। রবিবার (৮ জানুয়ারি) দিনের শুরুতে একাডেমির লনে রোবাইয়া মোর্শেদের নো বডি’স চিলড্রেন বইটি নিয়ে একটি সেশন অনুষ্ঠিত হয়। 

রিসার্চার, এডুকেটর ও স্টোরি টেলার শাকিল আহমেদের সঞ্চালনায় আলোচনায় অংশ নেন মজার ইশকুলের ফাউন্ডার আরিয়ান আরিফ, ওয়াহিদা বানু স্বপ্না এবং ইউনিসেফের চাইল্ড প্রটেকশন অফিসার ফাতেমা।  

আলোচনা শুরু হয় বইটির লেখক রোবাইয়াকে দিয়ে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় একদিন ক্লাস শেষে গাড়ির জন্য অপেক্ষা করছিল রোবাইয়া। এমন সময় দুই পথশিশুর কথা শুনছিলেন তিনি। আশানুরূপ ফুল বিক্রি না হওয়ায় পথশিশুদের মন খারাপ ছিল এবং পর্যাপ্ত টাকা না থাকায় কীভাবে পরিবারের অন্য সদস্যদের জন্য খাবার নিয়ে যাবে তা নিয়ে কথা বলছিল তারা। রোবাইয়া পথশিশুদের সঙ্গে কথা বলে এবং তাদের মন ভালো করার চেষ্টা করেন। তাদের নাম এবং পরিবার সম্পর্কে জানতে চান তিনি। তখন থেকেই পথশিশুদের জন্য কিছু করার তাড়না থেকে তার উদ্যোগের শুরু। 

পাঁচ বছর পর ধরে স্কুলটি চালানোর পর কার্যক্রম বন্ধ করে দেন তিনি। তার অভিজ্ঞতা ও বিভিন্ন পথশিশুদের গল্প উঠে এসেছে বইটিতে। একবার এক পথশিশু তাকে বলেছিল, ‘আপু, আমরা তো খেতে পারি না। ক খ শিখে কী করবো?’

ছিন্নমূল শিশুদের স্কুল ‘মজার ইশকুল’ প্রতিষ্ঠার গল্প শোনান আরেক আলোচক আরিয়ান আরিফ। সোহরাওয়ার্দী উদ্যোনের ছোট উদ্যোগটি কীভাবে এখন বিশাল হয়ে উঠেছে তার পেছনে থাকা অসংখ্য চ্যালেঞ্জ নিয়ে কথা বলেন তিনি। জাহানারা ইমামের ‘একাত্তরের দিনগুলি’ বইটি অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ানোর পর কারিগরি শিক্ষায় পথশিশুদের যুক্ত করে ‘মজার ইশকুল’। এরপর তাদের স্বাবলম্বী করে তুলতে চাকরিরও ব্যবস্থা করা হয়। শিশুদের নিয়ে কোনো সমস্যা, অসংগতি দেখলেই তিনি ১০৯ হেল্পলাইনে কল দিতে সবাইকে অনুরোধ করেন। 

ওয়াহিদা বানু স্বপ্না তার অপরাজেয় বাংলাদেশ উদ্যোগের কথা বলেন। তিনি ১৯৯৫ থেকে পথশিশুদের নিয়ে কাজ করছেন। সেসব পথশিশুদের সাথে তিনি কাজ করেছেন তাদের অসংখ্য জন এখন সমাজে প্রতিষ্ঠিত। ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, ফিল্মমেকার, সরকারি চাকরিজীবীসহ অসংখ্য পেশার মানুষ রয়েছে সে তালিকায়। বর্তমানে দেশের বিভিন্ন স্থানে চারটি শেল্টার হাউজ রয়েছে তার সংগঠনের। 

আরেক আলোচক ফাতেমা সরকারের তরফ থেকে পর্যাপ্ত উদ্যোগ না থাকার কথা বলেন। ২০০৫ সালের পর আজ পর্যন্ত কোনো জরিপ পথশিশুদের নিয়ে করা হয়নি।  

এক দর্শকের প্রশ্নোত্তরে আলোচকরা বলেন, পথশিশুদের টাকা না দিয়ে অবশ্যই তাদের সাথে একটু ভালো করে কথা বলা, কিছু খেতে চাইলে কিনে দেওয়া আমাদের দায়িত্ব হওয়া উচিত। খাবারের উচ্ছিষ্ট দেওয়ার যে রেওয়াজ চালু হয়েছে তারও সমালোচনা করেন তারা।