সংকটের পৃথিবীতে বেঁচে থাকার আখ্যান

‘পশ্চিমা বিশ্ব নিজেদের মতো করে রাজনীতি, অর্থনীতি, জীবনধারা ইত্যাদির ধারণা ও আদর্শ মান তৈরি করেছে। এবং গোটা বিশ্বে সেই মানকেই কার্যকর করতে প্রভাবান্বিত করছে। আমাদের মতো তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোও সেই মান স্পর্শ করতে চাচ্ছে। কিন্তু চাপা পড়ছে অঞ্চলভিত্তিক ভিন্ন চিন্তা ও চাহিদা। সেখান থেকেই ব্যক্তি জীবনে সংকটের সূচনা’— নিজের উপন্যাসের ভিত্তির বিষয়ে এভাবেই বলছিলেন ভারতীয় ঔপন্যাসিক ও প্রবন্ধকার পঙ্কজ মিশ্র।

রবিবার (৮ জানুয়ারি) ঢাকা লিট ফেস্টের চতুর্থ দিনে বাংলা একাডেমির আব্দুল করিম সাহিত্য বিশারদ মঞ্চে অনুষ্ঠিত ‘রান অ্যান্ড হাইড’ শীর্ষক এই সেশন সঞ্চালনা করেন ভিভেক মেনেজেস। আলোচনার শুরুতে ২০২২ সালে প্রকাশিত পঙ্কজ মিশ্রের আলোচিত উপন্যাস ‘রান অ্যান্ড হাইড’, লেখকের কর্মজীবন ও দর্শন বিষয়ে প্রাথমিক ধারণা দেন সঞ্চালক।

এমন একটি উপন্যাস লেখার পেছনে প্রেরণা কী ছিল, সঞ্চালক জানতে চাইলে পঙ্কজ মিশ্র বলেন, ‘প্রথমে আইডিয়াটা এসেছিল চীনের দিকে তাকিয়ে। চীনা ঔপনিবেশের প্রভাব কাটিয়ে নিজেদের খুঁজে পেতে একটা সময়ে বেশ সংগ্রাম করেছে। এর প্রভাব সেখানকার নাগরিকদের উপরেও পড়েছে। আমরাও বর্তমানে এই সেই সময়ের ভেতর দিয়ে যাচ্ছি, আমার মনে হয়েছে উপন্যাসের মাধ্যমেই এই নৈতিক দ্বন্দ্বের স্বার্থক প্রকাশ সম্ভব।’

ছবি: নাসিরুল ইসলাম

রান অ্যান্ড হাইড-এর প্রধান চরিত্রগুলোর মনস্তাত্ত্বিক টানাপোড়েনের কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে লেখক নিজের জীবনের অভিজ্ঞতাকে এর সাথে সংশ্লিষ্ট করেন। তিনি বলেন, ‘গত ২০ বছরে আমার হিমাচল প্রদেশের ল্যান্ডস্কেপ আমূল বদলে গেছে। নিজভূমে পরদেশি মনে হয় নিজেকে। আমরা সব ক্ষেত্রে বস্তুগত উন্নয়নকেই প্রাধান্য দিচ্ছি কিন্তু এর অন্তর্নিহিত ক্ষতির বিষয়টি উপেক্ষিতই থাকছে। তাই আমি একটু অন্যভাবে মানুষকে দেখতে চেয়েছি। শেকড়ের ধারণা থাকা কিছু কিছু ক্ষেত্রে মানুষের জন্য জরুরি তবে মোটা দাগে বলতে গেলে কোন নির্দিষ্ট ভৌগোলিক সীমারেখার কাছে মানুষের জবাবদিহিতার কিছু আছে বলে আমি মনে করি না।’

এক্ষেত্রে  রাষ্ট্রযন্ত্রের ভূমিকা প্রসঙ্গে লেখকের কাছে জানতে চান সঞ্চালক। এর জবাবে তিনি বলেন, ‘প্রযুক্তি বর্তমান সময়ে জানার রাস্তা সহজ করে দিয়েছে ঠিকই। তবে এটি এখন সংশয় ও বিশ্লেষণের ক্ষেত্রে মুখ্য যোগাযোগের মাধ্যম হয়ে উঠেছে। ফলে রাজনৈতিক দুর্বৃত্তরা একে ছিনতাই করার সুযোগ নিচ্ছে। যেমনটি করেছেন নরেন্দ্র মোদি বা ডোনাল্ড ট্রাম্প। ইতিহাসে একসময় এই ধারা প্রিন্ট মিডিয়ার ক্ষেত্রেও হয়েছে, কিন্তু বর্তমানে এর যে ব্যক্তি ভিত্তিক মাত্রা দাঁড়িয়েছে তা নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন।’