ভাষায় ইংরেজির প্রভাব পড়ছে: সলিমুল্লাহ খান

বাঙালি কি শুধুই জাতি? নাকি বাঙালি একটি অস্তিত্বের নাম? বাঙালি কারা তা জানার জন্য রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘বাংলা ভাষা পরিচয়’ গ্রন্থের সাহায্য নেওয়া যেতে পারে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছেন, বাঙালি বলা হয়ে থাকে তাদেরই, যারা বাংলায় কথা বলে। যদিও বাংলাভাষী মানুষদের মধ্যে অন্তরের মিল রয়েছে, রয়েছে সমাজের অমিল।

ঢাকা লিট ফেস্টের তৃতীয় দিনে বাংলা একাডেমির লনে ‘বাঙালির চিন্তার ইতিহাস’ শীর্ষক আলোচনায় আলোচক ছিলেন লেখক, শিক্ষক, গবেষক ড. সলিমুল্লাহ খান এবং পশ্চিমবঙ্গের লেখক, শিক্ষক তপধীর ভট্টাচার্য। আলোচনাটি সঞ্চালনা করেছেন হামীম কামরুল হক।

অধ্যাপক সলিমুল্লাহ খান বাঙালির চিন্তার ইতিহাস নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে প্রথমে কীভাবে বেঙ্গলি থেকে বাংলা হলো তা নিয়ে আলোকপাত করেন৷ তিনি বলেন, ‘নাথানিয়াল হ্যালহেদ তার বাংলা ব্যাকরণ বইয়ের নাম দিয়েছিলেন অ্যা গ্রামার অব দ্য বেঙ্গল ল্যাঙ্গুয়েজ। রাজা রামমোহন রায় পরবর্তীতে লিখেছেন "গৌড়িয় ব্যাকরণ"। গৌড়িয় ব্যাকরণে রাজা রামমোহন রায় বেঙ্গলি শব্দটি ব্যাবহার করেছেন।’

সলিমুল্লাহ খান বলেন, ‘এই যে বেঙ্গল থেকে বেঙ্গলি- এটাই আমাদের চিন্তার পরিবর্তনের উৎস।’ বাঙালির চিন্তা ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বাংলা ভাষার বিবর্তন নিয়ে তিনি বলেন, ‘বাঙালির চিন্তা বুঝতে হলে আপনাকে ভূ-রাজনৈতিক বুঝতে হবে। বুঝতে হবে ভাষার বিবর্তন।’

‘একসময়  আমাদের ভাষা ছিল সংস্কৃত। তারপর হলো ফারসি, তারপর হলো ইংরেজি, এরপর উর্দু, এরপর বাংলা। কিন্তু অবাক করার বিষয় হলো এখন আমাদের ভাষা আবার ইংরেজি হয়ে যাচ্ছে’- ভাষার চিন্তা নিয়ে বলতে গিয়ে বলেন সলিমুল্লাহ খান। সঞ্চালক কামরুল তপোধর ভট্টাচার্যকে জিজ্ঞেস করেন, ‘আপনি বাঙালি জাতিকে কীভাবে দেখেন?’ উত্তরে তিনি বলেন, ‘আমার কাছে বাঙালির ইতিহাসকে অনেক খণ্ডিত মনে হয়।’

তপোধর ভট্টাচার্য "তুমি কে আমি কে, বাঙালি বাঙালি" উচ্চারণ করে বলেন, ‘আমাদের এই প্রশ্ন ও উত্তর সবসময় খুঁজে বেড়াতে হয়। আত্নপরিচয়ের সমাধান করেই চিন্তার প্রকাশ করতে হয়। রাষ্ট্র ও জাতিকে অনেকেই এক মনে করেন।’

দর্শকের প্রশ্নে একজন প্রশ্ন করেন, ‘রাষ্ট্রকে কেন প্রশ্ন করা যায় না?’ উত্তরে ড. সলিমুল্লাহ খান বলেন, ‘রাষ্ট্রকে যখন জোড়া লাগাতে পারবো, তখনই আমরা রাষ্ট্রকে প্রশ্ন করতে পারবো।’