কোক স্টুডিও বাংলা: চ্যালেঞ্জ উৎরে যাওয়ার গল্প

আমাদের সংগীতের শেকড় ও শ্রোতার চাহিদার বৈচিত্র্যের কারণে ‘কোক স্টুডিও বাংলা’ আলাদা মাত্রা পেয়েছে। বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলের কোক স্টুডিও আর আমাদের আয়োজনের ডিএনএ একই, এখানে আমরা সেটিকে নিজেদের মতো করে গড়ে নিয়েছি। ‘কোক স্টুডিও বাংলা’র শুরুর চিন্তা নিয়ে এভাবেই বলছিলেন কোক বাংলাদেশের প্রতিনিধি আবীর রাজবিন।

ঢাকা লিট ফেস্টের তৃতীয় দিনে বাংলা একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠিত ‘কোক স্টুডিও বাংলা: দ্য স্টোরি’ সেশনে ওয়ারদা আশরাফের সঞ্চালনায় প্যানেল আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আবীর রাজবিন, গাউসুল আলম শাওন এবং ফাইজান রশীদ আহমেদ (বুনো)।

আলোচনায় আবীর রাজবিন বলেন, "আমরা প্রথমে ভেবেছি—একটি গানকে কোক স্টুডিওর নিজস্বতা দিতে কী প্রয়োজন। সারা বিশ্ব থেকেই আমরা শিখতে চেয়েছি। সবসময়ই মাথা রেখেছি যেন আমাদের আয়োজনটি তরুণদের ভালবাসা পায়"।

এ পর্যায়ে সেশনের সঞ্চালক কোক স্টুডিও বাংলার প্রযোজক গাউসুল আলম শাওনের কাছে জানতে চান—কিভাবে তারা বুঝলেন তরুণ প্রজন্ম কী পছন্দ করবে, পুরো আয়োজনে তাঁদের কী কী চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হয়েছে এবং গানগুলো তারা কিসের ভিত্তিতে বাছাই করেছেন। জবাবে গাউসুল আলম শাওন বলেন, এদেশের তরুণ প্রজন্ম গ্লোবাল মিউজিক শোনে, তাই আমাদের কাছে প্রযুক্তি নেই বা এরকম অজুহাত দিয়ে আসলে লাভ নেই। আমরা চেয়েছি বর্তমান সময়ের শ্রোতাদের মিউজিক টেস্টের কাছাকাছি যেতে। চ্যালেঞ্জের কথা বলতে গেলে প্রথমেই বলতে হয়—আমাদের নিশ্চিত করতে হয়েছে যে আমরা যেন শেকড়ের সাথে যুক্ত থাকি এবং এর ভিত্তিতেই যেন সমসাময়িকদের সাথে পুরো আয়োজনটি যুক্ত করা যায়। এভাবেই গান বাছাই করেছি। আমরা স্টাডি করে দেখেছি যে—আমাদের দেশে একটি গান শ্রোতার কাছে টিকিয়ে রাখতে লিরিক্স বেশ গুরুত্বপূর্ণ, তাই এটাও আমাদের মাথায় রাখতে হয়েছে। এর সাথে তিনি যোগ করেন, আমরা গান ঠিক করেছি আগে, গানই আমাদের শিল্পীর কাছে নিয়ে গেছে। দেশে-বিদেশে যাকেই আমাদের এই কাজগুলোর জন্য প্রয়োজন মনে হয়েছে আমরা তাকে আনার চেষ্টা করেছি।

বেজ গিটারিস্ট ফাইজান রশীদ আহমেদ (বুনো) কোক স্টুডিও বাংলার সংগীত পুরো আয়োজনের সাথে যুক্ত ছিলেন। তিনি তাঁর বক্তব্যে বলেন, "মিউজিশিয়ান হিসেবে আমরা পূর্ণ স্বাধীনতা পেয়েছি। একেকটি কাজের কয়েকটি ভার্সন নিজেদের মতো করে করে দেখছি। ফিউশন বা এই ধারার গানের সাথে অনেক বছর ধরে যুক্ত আছি, এটাও বেশ কাজে লেগেছে।"

দেশের গণ্ডি ছাড়িয়ে বিশ্ব জুড়ে মানুষ কোক স্টুডিও বাংলার আয়োজনকে গ্রহণ করেছে। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমেও এর প্রশংসা হয়েছে। এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে বুনো বলেন, "শিল্পী হিসেবে আপনি সবসময়ই চাইবেন আপনার কাজ ছড়িয়ে পড়ুক"। এক্ষেত্রে গাউসুল আলম শাওন মনে করেন—আমরা এখনও বিশ্বের কাছে আমাদের গল্পগুলো বলে উঠতে পারিনি, তবে কোক স্টুডিও বাংলা’র মাধ্যমে আমরা এর ছোট্ট অংশ হলেও করতে পেরেছি।