হবিগঞ্জে দুদিন ধরে ১৩ গ্রামের মানুষের সংঘর্ষ, আহত দুই শতাধিক

হবিগঞ্জের বাহুবলের মিরপুর বাজারে পাওনা টাকা নিয়ে বিরোধের জেরে দুদিন ধরে ১৩ গ্রামবাসীর মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। সংঘর্ষে রণক্ষেত্রে পরিণত হয় মিরপুর বাজার। ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ায় পুলিশ, সাংবাদিকসহ দুই শতাধিক মানুষ আহত হন। এ সময় একটি মোটরসাইকেল পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।

সোমবার (২৬ আগস্ট) সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা থেকে শুরু হয়ে রাত ১২টা পর্যন্ত চলে সংঘর্ষ। এরপর মঙ্গলবার (২৭ আগস্ট) সকাল ৯টায় সংঘর্ষ শুরু হয়ে চলে বিকাল ৪টা পর্যন্ত। বর্তমান পরিস্থিতি স্বাভাবিক আছে। আহতদের বাহুবল ও হবিগঞ্জ সদর আধুনিক হাসপাতালসহ স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানায়, সোমবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে উপজেলার লামাতাশি গ্রামের বাসিন্দা মিরপুর বাজারের দর্জি আলফু মিয়া বানিয়াগাঁও গ্রামের আল-আমিনের কাছে পাওনা টাকা চাইলে তাদের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। বিষয়টি সমাধান করার জন্য বানিয়াগাঁও গ্রামের আব্দুস শহীদ মিয়ার ছেলে সাদ্দাম মিয়া চেষ্টা করলে তার ওপর অতর্কিত হামলা চালান আলফু মিয়ার লোকজন।

বিষয়টি উভয় পক্ষের গ্রামের লোকজনের মধ্যে ছড়িয়ে পড়লে মিরপুর বাজারে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। পরে লামাতাশি, বানিয়াগাঁও গ্রামের লোকজন দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র ও ইট-পাটকেল নিয়ে মিরপুর বাজারে সংঘর্ষে জড়ান। উভয় পক্ষের লোকজন মসজিদের মাইকে ঘোষণা দিয়ে লামাতাশির পক্ষে পাঁচ গ্রাম ও বানিয়াগাঁওয়ের আট গ্রামের লোকজন সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। দুই পক্ষের লোকজনের মধ্যে চলে ইটপাটকেল নিক্ষেপ। রাত সাড়ে ১২টা পর্যন্ত চলে এই সংঘর্ষ। আতঙ্ক ছড়ানোর জন্য ফোটানো হয় ককটেল। একপর্যায়ে বশির প্লাজার সামনে থাকা একটি মোটরসাইকেল ও কিছু চেয়ার পুড়িয়ে দেওয়া হয়। সেইসঙ্গে মিরপুর বাজারের দোকানপাটে হামলা ও ভাঙচুর চালায় দুই পক্ষ। আগুনের খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের একটি দল ঘটনাস্থলে পৌঁছে নিয়ন্ত্রণে আনে। সংবাদ পেয়ে বাহুবল মডেল থানা পুলিশ ও সেনাবাহিনী ঘটনাস্থলে পৌঁছে। তবে দুই পক্ষের উত্তেজনা ও দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে ক্ষিপ্ত থাকায় সরে যায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। সংঘর্ষে মিরপুর বাজার এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। এতে শতাধিক আহত হন। আহতদের উদ্ধার করে বাহুবল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও হবিগঞ্জ জেলা সদর আধুনিক হাসপাতালসহ বিভিন্ন স্থানে চিকিৎসা দেওয়া হয়। রাত সাড়ে ১২টার দিকে বাহুবল উপজেলার সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান কামরুল ইসলাম, মিরপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শামীম আহমদ, লামাতাশি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান উস্তার মিয়াসহ স্থানীয় লোকজনের চেষ্টায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। উভয় পক্ষকে বাড়িতে পাঠানো হয়।

মঙ্গলবার সকাল ৯টা থেকে ফের সংঘর্ষে জড়ায় উভয় পক্ষ। বিকাল ৪টা পর্যন্ত সংঘর্ষ চলে। পরে চুনারুঘাট উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান সৈয়দ লিয়াকত হাসানসহ স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিরা ঘটনাস্থলে এসে সালিশের মাধ্যমে বিষয়টি সমাধানের আশ্বাস দিলে উভয় পক্ষ শান্ত হয়। এ সময় সেনাবাহিনীর একটি দল ঘটনাস্থলে গিয়ে ঢাকা-সিলেট ও ঢাকা-মৌলভীবাজার সড়কে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক করে। সংঘর্ষে বাহুবল মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মশিউর রহমান এবং এক সাংবাদিকসহ শতাধিক আহত হন। তাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

মিরপুর বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মোতাব্বির হোসেন বলেন, ‘সংঘর্ষে বাজারের অনেক দোকানপাট ভাঙচুর করা হয়েছে। ব্যবসায়ীদের অনেক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।’

চুনারুঘাট উপজেলার সদ্য সাবেক চেয়ারম্যান সৈয়দ লিয়াকত হাসান বলেন, ‘দুই পক্ষের দুই শতাধিক লোকজন আহত হয়েছেন। তাদের সঙ্গে আলোচনা করেছি। সালিশ বৈঠক করে বিষয়টি সমাধান করা হবে।’

বাহুবল মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মশিউর রহমান বলেন, ‘সংঘর্ষে অন্তত ১৩টি গ্রামের মানুষ জড়িয়ে যাওয়ায় এই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সময় লেগেছে। এখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক আছে।’