মৌলভীবাজারে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি, ২৯ চা-শ্রমিকের বসতভিটা ক্ষতিগ্রস্ত

মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ, রাজনগর, কুলাউড়া ও সদর উপজেলায় কমতে শুরু করেছে বন্যার পানি। এতে স্বস্তি ফিরেছে পানিবন্দি মানুষের মাঝে। সার্বিকভাবে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। তবে পানির স্রোতে ২৯ জন চা-শ্রমিকের বসতভিটা ধসে গেছে। খোলা আকাশের নিচে বসবাস করছেন তারা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পাহাড়ি ঢলে সৃষ্ট বন্যায় কমলগঞ্জ উপজেলার ইসলামপুর ইউনিয়নের চাম্পারায় চা-বাগানের ফাঁড়ি বাগান কুরেঞ্জির বাসিন্দাদের ১৩টি এবং কুরমা চা-বাগানের ১৬টি পরিবারের মাটির বসতভিটা ধসে গেছে। পাশাপাশি ১০-১২টি মাটির ঘরের অবস্থা বেহাল। সেগুলো বসবাসের উপযোগী নয়।

ইসলামপুর ইউনিয়নের চাম্পারায় চা-বাগানের শ্রমিক অনন্ত গোয়ালা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘হঠাৎ বানের পানি আইছে। মাটির ঘরটি ধসে গেছে। কেমনে কী করমু মাথায় কাজ করছে না। কোনোভাবে ঘর থেকে বাহির হইয়া অন্য জায়গায় গিয়ে আশ্রয় নিছি। এখন খোলা আকাশের নিচে আছি।’ 

একই চা-বাগানের শ্রমিক বসন্ত বাউরী বলেন, ‘ধলাই নদীর পানিতে সব ভেসে গেছে। কাঁচা মাটির ঘরটি ধসে গেছে। ঘরের মালামাল ভিজে নষ্ট হয়েছে। কোনোরকমে বেঁচে আছি। ত্রাণ সহায়তা পেয়েছি।’

চা-শ্রমিক রিকমন রিকিয়াশন বলেন, ‘ঘরের যে অবস্থা, এ অবস্থায় থাকমু কেমনে। আমার কোনোদিন এত পানি দেখছি না। বন্যার পানিতে সব ভাসিয়ে নিয়ে গেছে।’

স্থানীয় সূত্র জানায়, বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পর ভেসে উঠেছে ক্ষত চিহ্ন। ইসলামপুর ইউনিয়নের বাসিন্দাদের মাটির ঘরগুলো ধসে গেছে। এখন পানি পুরোপুরি নেমে গেছে। ফলে কাঁচা ঘরবাড়িগুলো ধসে পড়ছে। অনেক ঘরে ফাটল ধরেছে। ঘরবাড়িগুলো ঠিক করার কাজে ব্যস্ত এসব ইউনিয়নের বাসিন্দারা। এ ছাড়া কমলগঞ্জ উপজেলায় বন্যায় মূল সড়ক ও অভ্যন্তরীণ সড়কগুলো ভেঙে গেছে। যাতায়াতে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন স্থানীয়রা। 

এদিকে মনু ও ধলাই নদীর ভেঙে যাওয়া বাঁধ মেরামতের কাজ শুরু করেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। পাউবো সূত্রে জানা গেছে, বন্যায় ১৬টি স্থানে নদীর প্রতিরক্ষা বাঁধ ভেঙে প্লাবিত হয় জেলার সাত উপজেলা। মনু নদীর প্রতিরক্ষা বাঁধের ১১টি ও ধলাই নদীর পাঁচটি ভাঙনের স্থান মেরামতের কাজ চলছে। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে সবগুলো বাঁধ মেরামতের কাজ শেষ হবে।

বন্যাদুর্গতদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত তিন দিনে নদীর পানি কমেছে। একইসঙ্গে বন্যাকবলিত এলাকা থেকে পানি নেমে গেছে। আশ্রয়কেন্দ্র থেকে যার যার বাসস্থানে ফিরতে শুরু করেছেন। যাদের ঘর বন্যার পানিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তারা ঘর মেরামতে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন।

পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. জাবেদ ইকবাল বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘মনু ও ধলাই নদীর পানি কমায় আমরা ভাঙনের জায়গাগুলো মেরামতের কাজ শুরু করেছি। ইতোমধ্যে কয়েকটি স্থান মেরামত করা হয়েছে। সবগুলো বাঁধ মেরামতের করতে এক সপ্তাহ সময় লেগে যাবে। মনু, ধলাই ও কুশিয়ারার পানি  বিপদসীমার নিচ দিয়ে বইছে। জুড়ী নদীর পানি বিপদসীমার ১৫৪ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।’

মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসক উর্মি বিনতে সালাম বলেন, ‘উপজেলা প্রশাসনকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে সার্বিক সহযোগিতা করতে। যারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, তাদের সহায়তা করা হবে।’