মৌলভীবাজারের নদ-নদীর পানি কমতে শুরু করেছে। পানি নামতে শুরু করলেও জেলার মূল সড়কসহ ইউনিয়ন ও পৌরসভার কমপক্ষে শতাধিক সড়ক অচল হয়ে পড়েছে। কাউয়াদিঘী, হাইল ও হাকালুকি হাওরের তীরবর্তী বাড়িঘর এখনও পানিবন্দি রয়েছে। ধানের চারা নষ্টের আশঙ্কায় আছেন কৃষকরা। খাবার ও সুপেয় পানির সংকটে বেড়েছে দুর্ভোগ।
রবিবার (২৫ আগস্ট) বিকাল ৩টার দিকে পাওয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তথ্যমতে, মনু নদের রেলওয়ে ব্রিজ এলাকায় পানি বিপদসীমার ২৩৫ সেন্টিমিটার নিচ ও চাঁদনীঘাটে ২ সেন্টিমিটার বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ধলাই নদের রেলওয়ে ব্রিজ এলাকায় পানি বিপদসীমার ২৯০ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এদিকে কুশিয়ারা নদীর পানি শেরপুরে বিপদসীমার ২ সেন্টিমিটার ও জুড়ী নদীর পানি ভবানীপুরে বিপদসীমার ১৬৪ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
রবিবার সরেজমিনে এলাকার বিভিন্ন স্থান ঘুরে দেখা গেছে, মনু নদের পানি কমে আসতে থাকলেও কদমহাটায় বাঁধের ভাঙা অংশ দিয়ে পানি প্রবেশ করছে। ঘরবাড়ি ও রাস্তাঘাটে পানি কমে আসছে। কিন্তু ফসলি জমি এখনও পানির নিচে। দ্রুত পানি নেমে না গেলে ধানের চারা নষ্টের আশঙ্কায় আছেন কৃষকরা। খাবার ও সুপেয় পানির সংকটের কারণে দুর্ভোগ বেড়েছে মানুষের।
বাইক্কাবিল-হাইল হাওড় এলাকার বাসিন্দা রহমান মিয়া বলেন, ‘হাওরের মাঝে বাস করি। বন্যায় বাড়িঘর ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় অন্তত ২০টি পরিবার অন্য মানুষের ঘরে আশ্রয় নিয়েছে। এখন পর্যন্ত কোনও ত্রাণ পাইনি। সরকারের কেউ খোঁজ নিতেও আসেনি। ঘরের ভেতরে পানি ঢুকে পড়েছিল। তা কমে এখন উঠানে নেমেছে।’
আরেক স্থানীয় বাসিন্দা রহিমা বেগম বলেন, ‘ঘরের বেড়া ভেঙে গেছে, ভেতরে এখন কাদামাটি। খাবার পানির সমস্যা। স্যানিটেশনের সমস্যা। এদিকে পায়ের আঙুলের ফাঁকে পচন ধরেছে কিন্তু ডাক্তার দেখানোর সামর্থ্য নেই। বাচ্চাকাচ্চা নিয়ে খুব কষ্টে আছি।’
স্থানীয়দের অভিযোগ, মনু নদের কদমহাটায় বাঁধের ভেঙে যাওয়া অংশ দিয়ে পানি ঢোকায় কাউয়াদিঘী হাওড়ে পানি কমছে না। এজন্য ঘরবাড়ি থেকে পানি নামতে দেরি হচ্ছে বলে পাউবোর ওপর ক্ষুব্ধ তারা।
পাউবোর মৌলভীবাজার জেলা কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী মো জাবেদ ইকবাল বলেছেন, ‘বর্তমানে নদ-নদীর পানি কমতে শুরু করেছে। তবে সব জায়গায় বন্যার পানি পুরোপুরি নামেনি। পানি নামলে সেসব জায়গা জরিপ করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। যেসব স্থানে পানি নেমে গেছে সেখানে মেরামতের কাজ শুরু হয়েছে। আর বড় ভাঙনের জায়গাগুলো দ্রুত মেরামত করা হবে।’
ভারী বৃষ্টিপাত ও ভারতের উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে গত ২০-২২ আগস্ট জেলায় প্রবল বন্যা হয়। তাতে মনু নদের বাঁধ ভেঙে যায়। এই বাঁধের সুরক্ষা পেতো রাজনগর উপজেলার কদমহাটা, কুলাউড়া উপজেলার টিলাগাঁও ইউনিয়নের পশ্চিম হাজিপুর ও মিয়ারপাড়া গ্রামবাসী। বাঁধ ভেঙে গেলে আশেপাশের অন্তত ১৫০টি গ্রাম প্লাবিত হয়। পানির তোড়ে অনেক গ্রামবাসীর কাঁচা-আধাপাকা ঘর ও পুকুরের মাছ ভেসে গেছে। অনেকের ঘর ধসে পড়েছে। নষ্ট হয়েছে সবজিক্ষেত।