পেঁয়াজের দাম কেজিতে বেড়েছে ২০ টাকা

গত সপ্তাহের বুধবার ৩৫ টাকা কেজি দরে দেশি পেঁয়াজ কিনেছেন হিলির ভ্যানচালক আশরাফুল ইসলাম। চলতি সপ্তাহের বুধবার একই পেঁয়াজ ৫৫ টাকা কেজি দরে কিনেছেন। মাত্র এক সপ্তাহের ব্যবধানে পেঁয়াজের দাম ২০ টাকা বাড়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন আশরাফুল।

তিনি বলেন, ‘রোজার ঈদের পর থেকে জিনিসপত্রের দাম বাড়তেছিল। এই সপ্তাহে চাল-ডাল, তেল, সবজি, পেঁয়াজ, মাছ ও মুরগিসহ নিত্যপণ্যের দাম বেড়ে গেছে। এভাবে সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছি আমরা।’

চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কমের অজুহাতে এক সপ্তাহের ব্যবধানে হিলিতে দেশি পেঁয়াজের দাম বেড়েছে কেজিতে ২০ টাকা। হঠাৎ দাম বাড়ায় বিপাকে পড়েছেন নিম্নআয়ের মানুষজন। সরবরাহ এমন থাকলে দাম কমার সম্ভাবনা নেই। তবে ভারত থেকে আমদানি শুরু হলে দাম কমতে পারে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।

বুধবার (১৬ এপ্রিল) হিলি বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বাজারের প্রতিটি দোকানে দেশি পেঁয়াজের ভালো সরবরাহ দেখা গেছে। এরপরও দাম বেশি। ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, গত সপ্তাহে প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ প্রকারভেদে ৩০-৩৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হলেও বুধবার ৫০-৫৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

ভ্যানচালক আশরাফুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‌‘বুধবার ৫৫ টাকা কেজি দরে পেঁয়াজ কিনেছি। সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিতে ২০ টাকা বেড়েছে। অন্যান্য নিত্যপণ্যের দামও বেড়েছে। এতো দাম বাড়লে আমরা গরিব মানুষ কীভাবে খাবো, সংসার চালাবো? সারাদিন ভ্যান চালিয়ে ৩০০-৪০০ টাকা পাই। বাজার করতে আসলে যে দাম, তাতে একটা কিনলে আরেকটা কেনার টাকা থাকে না। আমরা দিনে এনে দিনে খাওয়া মানুষ। দাম কম থাকলে আমাদের জন্য ভালো হয়। দাম বাড়লে অনেক কিছু কিনতে পারি না।’

একই বাজারে পেঁয়াজ কিনতে আসা নাজমা বেগম বলেন, ‘গত রবিবারও পেঁয়াজ কিনলাম ৩০ টাকায়। বুধবার কিনতে এসে দেখি ভালোটা ৫৫ আর একটু নিম্নমানেরটার কেজি ৫০ টাকা হয়ে গেছে। আমরা গরিব মানুষ। এতো দাম দিয়ে কেনার সামর্থ্য থাকে না। দাম ৩০-৩৫ টাকা থাকলে আমাদের অনেক উপকার হয়।’

নিত্যপণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় হিমশিম খাচ্ছেন ক্রেতারা

বাজারে শাকসবজি কিনতে আসা এনামুল হক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘নতুন করে তেল ও চালের দাম বেড়েছে। এর সঙ্গে বেড়েছে ব্রয়লার মুরগি, পেঁয়াজ, করলাসহ কয়েক ধরনের সবজির দাম। এতে আমরা যারা নিম্নআয়ের মানুষ, তারা বিপাকে পড়েছি। কেউ বাজার মনিটরিং করছে কিনা, করলে কীভাবে করছে; তা আমাদের জানা নেই। দাম বাড়ায় সব মানুষ ক্ষুব্ধ। এখন তো কৃষকের ঘরে তেমন পেঁয়াজ নেই, সব মজুতদারদের গুদামে সংরক্ষিত আছে। মজুতদাররাই ইচ্ছেকৃতভাবে পেঁয়াজের দাম বাড়াচ্ছেন। বাজার মনিটরিং করা দরকার সংশ্লিষ্টদের। সেইসঙ্গে যারা মজুত করে দাম বাড়াচ্ছেন, তাদের আইনের আওতায় আনার দাবি জানাই। তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা না দিলে বাজার স্থিতিশীল হবে না।’

কেন কেজিতে ২০ টাকা বেড়েছে জানতে চাইলে হিলি বাজারের পেঁয়াজ বিক্রেতা আবুল হাসনাত বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ। গত কয়েক মাস ধরে দেশি পেঁয়াজ দিয়ে ক্রেতাদের চাহিদা মেটানো হচ্ছিল। গত সপ্তাহে দাম ছিল ৩০-৩৫ টাকা। চলতি সপ্তাহে বেড়ে ৫০-৫৫ টাকা হয়েছে। এর মূল কারণ সরবরাহ কম। যত দিন যাচ্ছে দেশি পেঁয়াজের সরবরাহ কমছে। চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম থাকায় দাম বাড়ছে। ভারত থেকে আমদানি শুরু হলে দাম স্বাভাবিক অবস্থায় আসবে। এ ছাড়া নয়।’

আরেক পেঁয়াজ বিক্রেতা শাকিল খান বলেন, ‘মৌসুম শেষের দিকে হওয়ায় দেশি পেঁয়াজের সরবরাহ কমে গেছে। এতে চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কমে যাওয়ায় দাম বেড়েছে। মোকামে বিক্রির জন্য কৃষকরা আগে প্রতিদিন যে পরিমাণ আনতেন, তাতে পাঁচ ট্রাক হতো। এখন আসছে দুই ট্রাকের মতো। আগে পাইকারি মোকামে প্রতি মণ ১২শ থেকে ১৪শ টাকা ছিল। সেটি এখন বেড়ে ১৮শ থেকে দুই হাজার টাকা হয়েছে। বাড়তি দামে কিনতে হওয়ায় আমাদেরও বাড়তি দামে বিক্রি করতে হয়। তবে এখন দেশি পেঁয়াজের পাশাপাশি যদি ভারত থেকে আমদানি শুরু হয় তাহলে দাম কমবে। আমদানি শুরু না হলে আরও বাড়বে। কারণ সামনে কোরবানির ঈদ। এ সময়ে সবচেয়ে বেশি চাহিদা থাকে। তাই আমদানি শুরু করতে হবে।’

বাজার মনিটরিংয়ের বিষয়ে জানতে চাইলে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর দিনাজপুর কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক বোরহান উদ্দিন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘নিত্যপণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে নিয়মিত হাট-বাজারের দোকানগুলোতে অভিযান চালানো হয়। দোকানিরা কত দামে পণ্য কিনে কত দামে বিক্রি করছেন, সেটি মনিটরিং করা হয়। কারও বিরুদ্ধে অহেতুক কোনও কারণ ছাড়াই পণ্যের দাম বাড়ানোর অভিযোগ প্রমাণিত হলে জরিমানা করা হয়। আমাদের অভিযান অব্যাহত আছে।’