জনসম্মুখে আ.লীগ নেতাকে কোপালো যুবদল কর্মীরা, ‘খবর পায়নি’ পুলিশ

কুড়িগ্রাম জেলা সদরের কাঁঠালবাড়ী ইউনিয়নে প্রকাশ্য দিবালোকে এক আওয়ামী লীগ নেতাকে কুপিয়েছে যুবদল কর্মীরা। গুরুতর আহত অবস্থায় ওই আওয়ামী লীগ নেতাকে কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। বুধবার (১৬ এপ্রিল) দুপুরে ইউনিয়নের রায়পুর বাজারে (আরডিআরএস বাজার) এ ঘটনা ঘটে।

তবে এ ঘটনায় বুধবার বিকাল পর্যন্ত কোনও ‘খবর পায়নি’ পুলিশ।

আহত আওয়ামী লীগ নেতার নাম রুকু মিয়া (৫৫)। তিনি রায়পুর গ্রামের বাসিন্দা এবং ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক বলে জানা গেছে। তবে তার ওপর হামলা রাজনৈতিক নয়। কয়েকদিন আগে একটি সালিশ বৈঠকে হাতাহাতির জেরে হামলা হয়েছে বলে জানিয়েছে আহতের স্বজন ও স্থানীয়রা।

অভিযুক্ত যুবদল কর্মীরা হলেন রাশেদ, সাজ্জাদ, আরিফ ও করম। তাদের সঙ্গে আরও ৭ থেকে ৮ জন যুবদলকর্মী হামলায় অংশ নেয় বলে প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনায় জানা গেছে। অভিযুক্ত যুবদল কর্মীরা সদর উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক ও বেলগাছা ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মাহবুবুর রহমানের অনুসারী বলে জানা গেছে। যে সালিশে হাতাহাতির ঘটনা ঘটেছিল সেখানে মাহবুবুর রহমান উপস্থিত ছিলেন বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।

তবে মাহবুবুর রহমান দাবি করেছেন, তিনি কোনও সন্ত্রাসী লালন করেন না। সন্ত্রাসী কোনও কর্মকাণ্ডকে সমর্থনও করেন না। যাদের বিরুদ্ধে হামলা করার অভিযোগ উঠেছে তারা যুবদল কর্মী। এ ব্যাপারে যুবদল ও জেলা বিএনপি নেতৃবৃন্দ জবাব দেবেন।

বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘আমি জনগণকে সঙ্গে নিয়ে রাজনীতি করি। সন্ত্রাসী লালন করি না। হামলার খবর পেয়েছি। কয়েকদিন আগে একটি সালিশে হাতাহাতির ঘটনা ঘটেছিল। সে সময় এরশাদ নামে এক যুবককে বেধড়ক মারধর করা হয়েছিল। তাতে অভিযুক্তদের মধ্যে রুকু মিয়ার নামও শুনেছি। তবে আজকের ঘটনা তার জেরে কিনা আমি জানি না। যাদের নাম এসেছে তারা যুবদল কর্মী। তাদের বিষয়ে জেলা বিএনপি ও যুবদল নেতৃবৃন্দ জবাব দেবেন।’

ঘটনার পরপর সেনাবাহিনীর একটি দল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। তবে তাদের পদক্ষেপের বিষয়ে জানতে কুড়িগ্রাম অস্থায়ী সেনা ক্যাম্পে যোগাযোগের চেষ্টা করেও দায়িত্বশীল কাউকে পাওয়া যায়নি।

হামলায় আহত রুকু মিয়ার ছেলে নুর আলম জানান, বুধবার দুপুরে রায়পুর বাজারে নিজস্ব দোকানে তিনি ও তার বাবা বসে ছিলেন। এ সময় কয়েকজন যুবক অতর্কিত বেকি ও রামদা হাতে নিয়ে তার বাবার ওপর হামলা করে। তার বাবাকে উপর্যুপরি কোপাতে থাকে। এ সময় আটকানোর চেষ্টা করলে সন্ত্রাসীরা তাকেও বেদম মারপিট করেন।

নুর আলম বলেন, ‘এক সপ্তাহ আগে একটি সালিশে হাতাহাতি হয়। এর জেরে রাশেদের নেতৃত্বে কয়েকজন প্রকাশ্যে এসে অতর্কিত কোপাতে থাকে। আমি দোকানে থাকা টেবিল দিয়ে বাবাকে বাঁচানোর চেষ্টা করি। এরপরও বাবার শরীরে বেশ কয়েকটি কোপ লাগে। সন্ত্রাসীদের কয়েকজন হাতে থাকা পাইপ দিয়ে আমাকেও বেদম মারপিট করে। লোকজন দেখলেও ভয়ে কেউ এগিয়ে আসেনি।’

নুর আলম আরও বলেন, ‘আমরা আইনের আশ্রয় নেবো। কিন্তু বিচারের ভরসা পাই না। এখনও এলাকায় অনেকে আতঙ্কিত। বিএনপির সন্ত্রাসীরা যাওয়ার সময় হুমকি দিয়া গেছে। যেকোনও সময় আবারও হামলা হইতে পারে।’

জেলা যুবদল সভাপতি রায়হান কবির বলেন, ‘যুবদলের কেউ জড়িত থাকলে তাদেরকে দল থেকে বহিষ্কার করা হবে। যুবদল কিংবা বিএনপি কোনও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডকে প্রশ্রয় দেবে না।’

কুড়িগ্রাম সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাবিবুল্লাহ বলেন, ‘এমন কোনও খবর পাইনি। কেউ অভিযোগও দেয়নি। অভিযোগ পেলে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’