পলিটেকনিকে ক্রাফট ইন্সট্রাক্টরদের স্থানান্তর, তাদের প্রমোশন বাতিলসহ বিভিন্ন দাবিতে দিনাজপুরে রাজপথ ও রেলপথ অবরোধ করেন শিক্ষার্থীরা। এতে করে আটকা পড়েছে ঢাকাগামী দ্রুতযান এক্সপ্রেস, পঞ্চগড় এক্সপ্রেস ও রাজশাহীগামী বাংলাবান্ধা এক্সপ্রেসসহ ৩টি ট্রেন। বন্ধ হয়ে যায় দিনাজপুরের সঙ্গে রেলওয়ে যোগাযোগ। শুধু রেলওয়ে যোগাযোগ নয়, দিনাজপুর গোবিগঞ্জ মহাসড়ক যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
বুধবার (১৬ এপ্রিল) সকাল ৯টায় দিনাজপুর নিমনগর বাসস্ট্যান্ড এলাকায় রেললাইনে বসে এই অবরোধ কর্মসূচি পালন করেন দিনাজপুর পলিটেকনিক ইন্সটিটিউটের শিক্ষার্থীরা। এতে করে একই সঙ্গে রেলপথ ও রাজপথ অবরোধ হয়ে যায়। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত বিকাল সোয়া ৩টা পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের এই অবরোধ চলছিল।
দুপুর ১২ টার দিকে জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে এসে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বললেও শিক্ষার্থীরা দাবি না মানা পর্যন্ত আন্দোলন কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেয়।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা জানান, দীর্ঘদিন ধরেই তারা পলিটেকনিক ইন্সটিটিউটে বিতর্কিত নিয়োগপ্রাপ্ত ক্রাফট ইন্সট্রাক্টরদের স্থানান্তর, ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্স ৪ বছর করা, উপসহকারী প্রকৌশলী পদে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের জন্য সংরক্ষিত করা, কারিগরি বোর্ড সংস্কারসহ ছয় দাবি জানিয়ে আসছেন।
এসব দাবি আদায়ে তারা দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছেন এবং গত ২১ মার্চ রেলপথ অবরোধ করেছিলেন। ওই দিন দাবি মেনে নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছিল প্রশাসন। এরপরেও বাস্তবায়ন না হওয়ায় তারা আবারও এই আন্দোলন কর্মসূচি পালন করছেন। এ সময় শিক্ষার্থীরা তাদের দাবির পক্ষে যুক্তি তুলে ধরেন।
শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো হলো- ২০২১ সালের বিতর্কিত নিয়োগপ্রাপ্ত সকল ক্রাফট ইন্সট্রাক্টরদেরকে কারিগরি অধিদফতর এবং সকল প্রতিষ্ঠান থেকে দ্রুত স্থানান্তর করতে হবে, ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্স ৪ বছর মেয়াদি করতে হবে এবং প্রতি সেমিস্টার পূর্ণমেয়াদের (৬ মাস) করতে হবে এবং মানসম্মত সিলেবাস প্রণয়ন করতে হবে, উপসহকারী প্রকৌশলী পদে (১০ম গ্রেড) ডিপ্লোমা ইন ইঞ্জিনিয়ার ব্যতীত অন্য কেউ আবেদন করতে পারবে না। উপসহকারী প্রকৌশলী ও সমমান পদ ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের জন্য সংরক্ষিত রাখতে হবে এবং ৪ (চার) বছরের ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্স সম্পূর্ণ করা মনোটেকনিকের শিক্ষার্থীদের উপসহকারী প্রকৌশলী পদে নিয়োগ করতে হবে, কারিগরি বোর্ড সংস্কার করে কারিগরি সেক্টর পরিচালনায় কারিগরি শিক্ষাবহির্ভূত কোনও জনবল থাকতে পারবে না, কারিগরি শিক্ষা অধিদফতরের বিতর্কিত নিয়োগ বিধিমালা সংশোধন করে সকল শূন্যপদে কারিগরি জনবল নিয়োগের মাধ্যমে সকল (পলিটেকনিক ইন্সটিটিউট, টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ) শিক্ষক সংকট দুর করতে হবে। একইসঙ্গে প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন কার্যক্রমের সঙ্গে আইডিইবি এবং পলিটেকনিক ও টিএসসির শিক্ষকদের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করতে হবে এবং উচ্চশিক্ষার সুযোগ বৃদ্ধির লক্ষ্যে ডিপ্লোমা ইন ইঞ্জিনিয়ারিং এবং মনোটেকনিক ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য প্রস্তাবিত চারটি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে শতভাগ সিট নিশ্চিত করতে হবে।
শিক্ষার্থীদের অবরোধের ফলে পঞ্চগড় থেকে ঢাকাগামী দ্রুতযান এক্সপ্রেস, পঞ্চগড় এক্সপ্রেস ট্রেন ও রাজশাহীগামী বাংলাবান্ধা এক্সপ্রেস ট্রেন দিনাজপুর রেলওয়ে স্টেশনে আটকা পড়ে।
শুধু তাই নয়, দিনাজপুর-গোবিন্দগঞ্জ মহাসড়ক দিয়ে বাস, ট্রাক, মাইক্রোবাস, প্রাইভেটকার মোটরসাইকেল, রিকশা, ভ্যান, সাইকেলসহ সব ধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এতে ভোগান্তিতে পড়েন সাধারণ মানুষ।
আন্দোলনের নেতৃত্ব দেওয়া শিক্ষার্থী মেহেদী হাসান জানান, যতক্ষণ পর্যন্ত দাবি মেনে নেওয়া না হবে, ততক্ষণ পর্যন্ত এ আন্দোলন কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে।
দিনাজপুর রেলওয়ে স্টেশনের সুপার জিয়াউর রহমান জানান, শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের ফলে তিনটি ট্রেন আটকা পড়েছে। এর মধ্যে দুটি ঢাকাগামী এবং একটি রাজশাহীগামী।
দিনাজপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) আনোয়ার হোসেন জানান, শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে নেওয়ার জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করা হবে। বিষয়টি শিক্ষার্থীদের জানানো হয়েছে। অবরোধ তুলে নেওয়ার চেষ্টা চলছে।