বাবার বিরুদ্ধে চুরির অপবাদ, প্রতিবাদ করায় কিশোরীকে গাছে বেঁধে নির্যাতন

কুড়িগ্রামের রাজারহাটে বাবার বিরুদ্ধে গরু চুরির অভিযোগের প্রতিবাদ করায় স্কুলপড়ুয়া এক কিশোরীকে গাছের সঙ্গে বেঁধে জনসম্মুখে নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় কিশোরীকে উদ্ধারসহ অভিযুক্ত এক নারীকে আটক করে থানায় নিয়েছে পুলিশ। মঙ্গলবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) উপজেলার ঘড়িয়ালডাঙ্গা ইউনিয়নের কিশামত নাখেন্দা এলাকায় এই ঘটনা ঘটে।

রাজারহাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তসলিম উদ্দিন এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

আটক অভিযুক্ত নারীর নাম মায়া। তবে ঘটনার সঙ্গে জড়িত আরও কয়েকজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছে ভুক্তভোগী কিশোরী। বাকি অভিযুক্তরা হলেন- সাবেক ইউপি সদস্য আব্দুল কাদের এবং কিশোরীর দাদির বোন আয়শা। আব্দুল কাদেরের নির্দেশেই কিশোরীকে বেঁধে নির্যাতন করা হয় বলে অভিযোগ করেছে সে।

কিশোরীর অভিযোগ, মঙ্গলবার সকাল ৯টার দিকে কিশোরী তার দাদির কাছে গেলে তার দূরসম্পর্কের দাদা আব্দুল কাদেরের সাথে বাগবিতণ্ডা হয়। এ সময় কাদেরের নির্দেশে তার দাদির বোন আয়শা এবং আয়শার সতিন মায়া তাকে গাছের সঙ্গে বেঁধে নির্যাতন করে। ওড়না গলায় পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করার চেষ্টাসহ তার শরীরের বিভিন্ন অংশে আঘাত করে। তাকে পানি পর্যন্ত খেতে দেওয়া হয়নি। পরে খবর পেয়ে বিকাল ৩টার দিকে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে তাকে উদ্ধার করে।

কিশোরী ও তার পরিবারের লোকজনের সাথে কথা বলে জানা গেছে, ভুক্তভোগী কিশোরীর ছোট বোনের হৃদরোগের চিকিৎসার জন্য তার দাদি কিশোরীর বাবাকে একটি গরু দেন। কিন্তু বিষয়টি মেনে নিতে পারেননি আয়শা, মায়া ও কাদের। তারা কিশোরীর বাবার বিরুদ্ধে গরু চুরির অভিযোগ আনেন। আব্দুল কাদের (সাবেক মেম্বার) চৌকিদার পাঠিয়ে চুরির দায় দিয়ে কিশোরীর পরিবারকে হুমকি দেন। বাবার বিরুদ্ধে ওঠা চুরির অপবাদের প্রতিবাদ জানাতে মঙ্গলবার সকালে দাদির বাড়িতে যায় ওই কিশোরী। এ সময় প্রতিবেশী দাদা ও সাবেক মেম্বার আব্দুল কাদেরের সঙ্গে বাগবিতণ্ডা হয়। তখন কাদের তার বাড়ির উঠানে ওই কিশোরীকে গাছের সঙ্গে বেঁধে রাখার নির্দেশ দেন।

ভুক্তভোগী কিশোরী জানায়, বাবার বিরুদ্ধে চুরির অপবাদের প্রতিবাদ করতে দাদির সঙ্গে দেখা করতে গেলে আব্দুল কাদের কয়েকজনের সহায়তায় সকাল ৯টার দিকে তাকে বেঁধে রাখে। তারা বলে তাকে ধরলে নাকি তার আম্মু-আব্বু আসবে। তখন তাদেরকে ধরবে। এ ঘটনায় জড়িতদের বিচার দাবি করেছে ওই কিশোরী।

কিশোরীর বাবার অভিযোগ, তার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ তুলে তার মেয়েকে নির্যাতন করা হয়েছে। তিনি জড়িত সকলের বিচার দাবি করেন।

ঘটনাস্থলে পুলিশ পৌঁছালে আব্দুল কাদের ও আয়শা সটকে পড়েন। ফলে তাদের বক্তব্য পাওয়া যায়নি। পুলিশ মায়া নামে অভিযুক্ত এক নারীকে আটক করে থানায় নেয়।

ঘটনাস্থলে গিয়ে ঘড়িয়ালডাঙা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান অব্দুল কুদ্দুস প্রমাণিক কিশোরীর সঙ্গে হওয়া নির্যাতনের ঘটনার পক্ষে সাফাই দেন। তিনি ওই কিশোরীকে দায়ী করে বলেন, ‘ওর পিঠের চামড়া ছিঁড়ি দেওয়া লাগতো। এত বেয়াদব মেয়ে হয়! তার বাবা কেন গরু চুরি করলো? আমি চাইছিলাম অভিভাবক আসলে ফয়সালা করে দেবো। কিন্তু এসে শুনলাম পুলিশ আসছে।’

চেয়ারম্যানের অভিযোগ, কিশোরীর বাবা গরু ‘চুরি’ করে নিয়ে যাওয়ায় তার দাদি অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

ওসি তসলিম উদ্দিন বলেন, ‘কিশোরীকে উদ্ধারসহ এক নারীকে আটক করে থানায় নেওয়া হয়েছে। কিশোরীর পরিবার লিখিত অভিযোগ দিলে বাকি অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’