আবারও শৈত্যপ্রবাহের কবলে পড়েছে উত্তরের জেলা দিনাজপুর। সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৯ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। জেলায় গত তিন দিন ধরে নেই সূর্যের দেখা। আজও ঘন কুয়াশায় ঢাকা পড়ছে চারপাশ। নিম্নমুখী তাপমাত্রা ও ঘন কুয়াশার পাশাপাশি হিমেল বাতাস শীতের প্রকোপ আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।
দুর্ভোগ বেড়েছে খেটে খাওয়া ও শ্রমজীবী মানুষের। আবহাওয়া অফিসের কর্মকর্তা বলছেন, আগামী দুই থেকে তিন দিন রাতের তাপমাত্রা ক্রমান্বয়ে আরও কিছুটা হ্রাস পাওয়ার যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে। তারপর অবস্থার উন্নতি হতে পারে।
দিনাজপুর আঞ্চলিক আবহাওয়া পর্যবেক্ষণকেন্দ্র সূত্রে জানা যায়, শনিবার (২৫ জানুয়ারি) সকাল ৬টায় এই জেলার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৯ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ সময় বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ৯৬ শতাংশ এবং গত ২৪ ঘণ্টায় বাতাসের গড় গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ৩ কিলোমিটার।
এর আগে, শুক্রবার (২৪ জানুয়ারি) সকাল ৯টায় দিনাজপুরের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ১১ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গত বৃহস্পতিবার দিনাজপুরের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ১৩ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর বুধবার এই জেলার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১২ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
জেলায় রাতের তাপমাত্রার পাশাপাশি কমেছে দিনের তাপমাত্রাও। গত মঙ্গলবার দিনাজপুরের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল যথাক্রমে ২৩ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস, বুধবার তা কমে হয় ১৬ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস, বৃহস্পতিবার হয় ১৭ দশমিক শূন্য ডিগ্রি সেলসিয়াস আর শুক্রবার সেটি আরও কমে দাঁড়ায় ১৫ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসে।
আবহাওয়াবিদদের ভাষায়, তাপমাত্রা ৮ থেকে ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে হলে সেটাকে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ, ৬ থেকে ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে হলে সেটা মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ এবং ৪ থেকে ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে হলে তীব্র শৈত্যপ্রবাহ বলে। আর যদি তাপমাত্রা ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াসের আরও নিচে নেমে যায়, তাহলে তাকে অতি তীব্র শৈত্যপ্রবাহ বলা হয়। সে হিসেবে আজ দিনাজপুরের যে তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে তা মৃদু শৈত্যপ্রবাহ।
গত তিন দিন ধরেই দিনাজপুর জেলা ঘন কুয়াশায় ঢাকা থাকছে। এই তিন দিনেই দেখা যায়নি সূর্যের মুখ। সকালে বৃষ্টির মতো ঝরছে কুয়াশা। সেই সঙ্গে কনকনে হিমেল বাতাসের প্রভাব জনজীবনকে আরও বিপর্যস্ত করে তুলেছে। তাই খুব প্রয়োজন ছাড়া মানুষজন ঘর ছেড়ে বের হচ্ছেন না। দিনের বেলায় এমনকি দুপুরেও যানবাহনগুলোকে হেডলাইট জ্বালিয়ে এবং ধীরগতিতে চলাচল করতে দেখা গেছে।
আজ শনিবারও চারপাশ ঘন কুয়াশায় ঢাকা রয়েছে। শীতের প্রকোপ বাড়ায় বিপাকে পড়েছেন খেটে খাওয়া ও শ্রমজীবী মানুষ।
দিনাজপুর আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তোফাজ্জল হোসেন জানান, আগামী কয়েকদিন দিনাজপুরের ওপর দিয়ে এ ধরনের আবহাওয়া বিরাজ করতে পারে। দুই থেকে তিন দিন রাতের তাপমাত্রা ক্রমান্বয়ে আরও কিছুটা হ্রাস পাওয়ার যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে। তারপর অবস্থার উন্নতি হতে পারে।
দিনাজপুর সদরের মাসিমপুর এলাকার কৃষক তফিউদ্দিন বলেন, ‘শীতের সব থেকে বেশি যে সমস্যাটা সৃষ্টি করে সেটা হলো কুয়াশা এবং হিমেল বাতাস। সেটি গত কয় দিন ধরে এ জেলার ওপর বিরাজ করছে। ফলে আমরা যারা কৃষক তারা একপ্রকার আতঙ্কের মধ্যেই আছি।’
একই এলাকার কৃষক ফরিদুল ইসলাম বলেন, ‘কুয়াশা বেশি হলে ফসলে বিভিন্ন রকমের রোগের প্রাদুর্ভাব হয়। এ সময়ে বালাইনাশক স্প্রে করতে হয়। কিন্তু কুয়াশার যে প্রভাব তাতে করে বালাইনাশকও ঠিকভাবে কাজ করছে না। কুয়াশা কেটে গেলেই আমাদের আতঙ্কের সময় শেষ হবে।’
শহরের বালুয়াডাঙ্গা এলাকার অটোরিকশাচালক হামিদুল ইসলাম বলেন, ‘এই ঠান্ডার মধ্যে অটো রিকশা চালাতে পারি না। বয়স হয়েছে ফলে ঠান্ডাটা আমাকে একটু বেশিই ভোগায়।’
একই এলাকার দিনমজুর ফিরোজ বলেন, ‘এ ঠান্ডায় আমাদেরও কাজ করতে কষ্ট হয়। কিন্তু কিছু করার নাই। পেট যখন আছে কাজ তো করতেই হবে।’